প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০
পাখির কিচির মিচির শব্দ শুনতে কার না ভালো লাগে। তবে সেটা যদি হয় নানা প্রজাতির বাহারি রঙের বিদেশী পাখি। তাহলে তো কোনো কথাই নেই।
চাঁদপুর শহরের আব্দুল করিম পাটওয়ারী সড়কের তালতলা পাটওয়ারী বাড়ি মসজিদের দক্ষিণ পাশে রাঙ্গামাটি ফার্নিচার। ওই ফার্নিচারের দোকানে চাকুরি করেন মোঃ মুসলিম গাজী। এটা তার বড় ভাই মোঃ মাসুদ গাজীর দোকান। ফার্নিচারের দোকানে কাস্টমার কম। তাই তার বেশিরভাগ সময়ই দোকানে অলস সময় কাটাতে হয়। অলস সময় কাটাতে শখের বশে ১০ জোড়া বিভিন্ন রঙের পাখি কিনে পালন শুরু করেন। তবে শখ থেকে তিনি এখন বাণিজ্যিকভাবে পাখি পালন ও বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
জানা যায়, মুসলিম গাজী দীর্ঘদিন রাঙ্গামাটি ফার্নিচারের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন। দোকানে থেকে পাশাপাশি ২০২০ সালে শখের বসে ১০ জোড়া পাখি পালন শুরু করেন তিনি। এরপর ধীরে ধীরে তিনি পাখি বাড়াতে শুরু করেন। এখন তার খামারে বিভিন্ন দেশের ৬ প্রজাতির ৫০ রকমের ২৫০ জোড়া বিদেশী পাখি রয়েছে। খামারে প্রতিদিনই স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা দেখতে আসেন। আর এ রকম রঙিন পাখি বেশিরভাগই পালন করে স্কুল-কলেজের মেয়েরা। ছেলেরা পালন করলেও সংখ্যায় খুব কম। আবার অনেক বাবা-মা তাদের বাচ্চাদের কান্নাকাটি থামাতে বিভিন্ন প্রকারের রঙের পাখি ক্রয় করেন।
সরজমিনে খামার ঘুরে দেখা যায়, ফার্নিচারের শো রুমের সামনের জায়গায় গড়ে তুলেছেন এই পাখির খামার। সেই খামারে গ্রিলের সঙ্গে আলাদা আলাদা খাঁচার ঘর তৈরি করা হয়েছে। সেখানে আবার দিয়ে রাখা হয়েছে হাঁড়িও। তার মধ্যে বিদেশী হরেক রকমের রঙিন পাখি। খাঁচায় রাখা হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ঘুঘু, ডায়মন্ড ঘুঘু, বাজিগার, প্রিন্স পাখি ও জাবা পাখি। এছাড়াও এসব পাখির সামনে ছোট ছোট মাটির পেয়ালায় করে রাখা হয়েছে বিভিন্ন রকমের খাবার। এসব পাখির কিচির মিচির শব্দ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানুষের নজর কাড়ে। প্রতিদিন মুসলিম গাজীর খামারে পাখি দেখতে ও কিনতে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছেন লোকজন।
মেয়ের প্রাইভেট শেষ করে তালতলা দিয়ে অটোরিকশায় যাচ্ছিলেন হাসিনা আক্তার। এ সময় পাখির কিচির মিচির শব্দ শুনে পাখি দেখতে আসলে তিনি বলেন, এই ফার্নিচারের পাশ দিয়ে প্রায় প্রতিদিন চলাচল করি। প্রায়শই পাখির শব্দ শুনতে পাই। মূলত এখানে এসেছি পাখি দেখতে। আজকাল তো একসঙ্গে এত পাখির কিচির মিচির শব্দ শোনা যায় না। এখানে এসে অনেক ভালো লাগলো। শুনলাম এখান থেকে অনেকে পাখি কিনে। চিন্তা করছি আমিও পালনের জন্যে কিছু পাখি কিনে নিয়ে যাবো।
তার মেয়ে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার বলেন, পাখির কিচির মিচির শব্দ শুনে পাখি দেখতে আসলাম আম্মুকে নিয়ে। এখানে এসে দেখি অনেক রকমের পাখি আছে। আগে কখনো একসঙ্গে এতো পাখি দেখিনি। এসব পাখির কিচির মিচির শব্দ আমার অনেক ভালো লাগে। আম্মুকে বলেছি এখান থেকে কিছু পাখি কিনে নিয়ে গিয়ে আমাদের বাড়ির বেলকনিতে লালন-পালন করার জন্যে।
এ বিষয়ে কথা হয় মোঃ মুসলিম গাজীর সঙ্গে। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, ২০২০ সালে শখের বশে ১০ জোড়া বাজিগার পাখি পালন শুরু করি। এরপর ধীরে ধীরে পাখির সংখ্যা বাড়াতে থাকি। এক সময় চিন্তা করলাম প্রাণিসম্পদের আওতায় গৃহপালিত পশু গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, ভেড়া পালনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। কিন্তু পাখি পালনে আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি। আমাদের দেশে পাখির বাণিজ্যিক খামার নেই বললেই চলে। সেই কথা চিন্তা করে আজকে বাণিজ্যিকভাবে পাখির খামার গড়ে তুলেছি এবং বলতে পারেন কিছুটা সফল হয়েছি। প্রতিদিন খামারে পাখি দেখতে ও কিনতে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছেন লোকজন। কিনেও নিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে তার খামারে বিদেশি প্রজাতির ৫ রকমের ২৫০ জোড়া পাখি আছে। বিভিন্ন পাখির দাম বিভিন্ন রকম। পাখি বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছি। এর পাশাপাশি আমি আমার ভাইয়ের কাছ থেকে বেতন পাচ্ছি। মূলত আমার অলস সময়টা পার হয়ে যায় বলা যায়। দোকানে থাকা পাখির কিচিরমিচির ডাক ও মানুষের কোলাহলে আনন্দ পাই। আমাদের দেশে অনেকদিন ধরে পাখি কেনাবেচা হয়ে আসছে। মার্কেটও গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে বাচ্চা সংগ্রহ করে লালন পালন করে সেখান থেকে আবার বাচ্চা তৈরি করা হয়। কিছু কিছু পাখি ২ থেকে ৪ বার বাচ্চা দেয়। এই বাচ্চাগুলো বিক্রি হয়ে থাকে। পাখি লালন-পালন অনেক সহজ। এদের রোগবালাইও কম হয়। রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেক বেশি। এসব পাখির খাবারগুলো সাধারণত দেশের বাইরে থেকে আসে। এই খাবারগুলো সংগ্রহ করে খেতে দেওয়া হয়। বিভিন্ন রকম পাখির খাবার বিভিন্ন রকম। ধরতে গেলে খাবারের খরচও কম। এসব পাখির বাজারে মূল্য বেশি।
আমরা যে পাখিগুলো পালন করছি, এসব পাখির জন্মই খাঁচায়। এ পাখিগুলো সহজেই যে কেউ, যেকোনো জায়গায় পালন করে বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে বেছে নিতে পারে। এতে করে লাভবান হওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, এসব পাখির রোগ-বালাই নেই বললেই চলে। কম সময় ও খুব কম খরচে এসব পাখি লালন-পালন করা যায় এবং লাভজনক একটা পেশা বলা যেতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের দাপ্তরিক কোনো পরামর্শের প্রয়োজন হলে আমরা সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।