প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
গাছ আল্লাহর সৃষ্টি। সবুজ পাতায় ছেয়ে থাকা বৃক্ষ প্রাণে জাগায় শিহরণ। হিমেল বাতাসে হৃদয় জুড়িয়ে আসে, কাঠফাটা রোদে ঘেমে যাওয়া শরীরে শান্তি আনে। বৃক্ষ ধু-ধু বালুচরে পথিকের বন্ধু, রাখালের প্রশান্তির ঠিকানা।
মানুষের জীবনের সঙ্গে বৃক্ষের প্রভাব ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রত্যেক প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্যে গাছ আবশ্যকীয়। গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়। সেই অক্সিজেন গ্রহণ করে আমরা বেঁচে থাকি। একটি গাছ বছরে প্রায় ১৩ কেজি কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে।
বৃক্ষ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। চারদিক সতেজ-সজীব গতিময় রাখে। আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই আল্লাহ যিনি বায়ু প্রেরণ করেন। অতঃপর তা মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে। অতঃপর তিনি মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তা স্তরে স্তরে রাখেন। এরপর তুমি দেখতে পাও, তার মধ্য থেকে বারিধারা নির্গত হয়। তিনি তার বান্দাদের মধ্যে যাদের কাছে ইচ্ছা তা (বৃষ্টি) পৌঁছান। তখন তারা আনন্দিত হয়। (সুরা রুম, আয়াত : ৪৮)
বৃক্ষ আল্লাহকে সেজদা করে :
মহান আল্লাহকে বৃক্ষ সেজদা করে। তার তাসবিহ পাঠ করে। কোরআন পাকে ঘোষিত হয়েছে, ‘আপনি কি দেখেননি নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে, সূর্য, চন্দ্র, তারকারাজি, পর্বতমালা, বৃক্ষলতা ও জীবজন্তু এবং অনেক মানুষ আল্লাহকে সেজদা করে।’ (সুরা হজ, আয়াত : ১৮)
রাসুল (সাঃ) নিজ হাতে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা করেছেন। ইসলামে বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব অপরিসীম। বৃক্ষরোপণকে ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। বৃক্ষরোপণে মহানবী (সাঃ) মানুষকে উৎসাহিত করেছেন বহুবার। জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধির জন্যে ইসলাম মানুষকে যেসব কর্মের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে তার অন্যতম কৃষিকাজ। কারণ, ভূমি উর্বর থাকলে ফলন ভালো হয়। পরিবেশ ভালো থাকে। মানুষ সহজে ব্যাধিগ্রস্ত হয় না।
বৃক্ষরোপণে মহানবী (সাঃ)-এর উৎসাহ :
রাসুল (সাঃ) কৃষিকাজ ও বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত করেছেন। যাতে উদ্ভিদ বৃদ্ধি পায় ও সুস্থ পরিবেশ রক্ষা পায়। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হাদিসে রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘যদি কোনো মুসলিম কোনো গাছ রোপণ করে অথবা ক্ষেতে ফসল বোনে, আর তা থেকে কোনো পোকামাকড় কিংবা মানুষ বা চতুষ্পদ প্রাণী খায়, তাহলে তা তার জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৩২০; মুসলিম, হাদিস : ৪০৫৫)
হাদিসে বৃক্ষরোপণে প্রেরণা দেওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট। বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে একজন বান্দা তার মালিকের কাছ থেকে যথার্থ মূল্যায়ন পান। বান্দার লালন-পালনে বেড়ে ওঠা বৃক্ষ থেকে সৃষ্ট জীবের কেউ কিছু খেলেই বা একটু উপকৃত হলেই সওয়াব লেখা হচ্ছে তার আমলনামায়। ব্যক্তি মরে গেলেও তা যুক্ত হবে সদকা জারিয়া হিসেবে।
বৃক্ষরোপণের সওয়াব :
ইসলাম বিভিন্নভাবে বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত করেছে। বৃক্ষরোপণ করতে গিয়ে কেউ যদি কোনো রূপ প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত হয়, তাহলে তার যথোপযুক্ত প্রাপ্তি বান্দাকে দেওয়া হবে। রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বৃক্ষরোপণ করে আর ফলদার হওয়া নাগাদ তার দেখাশোনা ও সংরক্ষণে ধৈর্য ধারণ করে, তার প্রতিটি ফলের বিনিময়ে আল্লাহ তাকে সদকার সওয়াব দেবেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৬৭০২; শুআবুল ইমান, হাদিস : ৩২২৩)
অপ্রয়োজনে বৃক্ষ নিধন নিষিদ্ধ :
বৃক্ষ পরিবেশ শান্ত, ঠাণ্ডা ও মনোমুগ্ধকর রাখে। অপ্রয়োজনে বৃক্ষ নিধন করাকে কঠোরভাবে বারণ করেছেন আমাদের নবী (সাঃ)। আবদুল্লাহ ইবনে হুবশি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হাদিসে হুঁশিয়ারি দিয়ে রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে গাছ কাটবে আল্লাহ তার মাথা আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করবেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫২৪১)
তবে গাছ যদি এমন স্থানে হয়, যার ফলে মানুষের চলাচল কষ্টকর হয়, পরিবেশ ও ঘরদোরের জন্যে ক্ষতিকর হয় এবং মানুষের প্রয়োজনে কাটার প্রয়োজন হয়, তাহলে গাছ কাটতে কোনো অসুবিধা নেই।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হাদিসে রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘আমি এক ব্যক্তিকে দেখেছি জান্নাতে সে ওই গাছের ছায়ায় চলাচল করছে, যা সে রাস্তার মোড় থেকে কেটেছিল, যা মানুষকে কষ্ট দিত।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৮৩৭)
বৃক্ষরোপণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব মহানবী (সাঃ)-এর বিশেষ আমল। তিনি নিজে বৃক্ষরোপণ ও তার পরিচর্যা করতে মানুষকে উৎসাহিত করেছেন। পরিবেশ বাঁচাতে ও সুন্দর করে গড়ে তুলতে হলে বৃক্ষরোপণ বাড়াতে হবে।