শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

সোনালী আঁশ পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক ॥ বেড়েছে পাটের শাক বিক্রি
কৃষিকণ্ঠ প্রতিবেদক ॥

এখন বাংলা শ্রাবণ মাস। এ মাসে পাট পচানোর জন্যে কৃষক-কৃষাণীরা ব্যস্ত থাকতো। কিন্তু এখন তার উল্টো চিত্রের দেখা মিলছে। দিন দিন পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক। সরকারের নানামুখী পরিকল্পনা থাকলেও ন্যায্য দাম ও পানির অভাবে চাঁদপুরের বিভিন্ন উপজেলায় পাট চাষাবাদ কমেছে। গত কয়েক বছর ধরে পাটের আঁশ ছাড়ানোর পরিবর্তে শাক হিসেবে পাট বিক্রি বেড়েছে। এমন চিত্রই চাঁদপুরের হাট-বাজারে দেখা মিলেছে।

এক সময় ব্যাপক হারে পাটের চাষ হতো চাঁদপুরের চরাঞ্চলে। মতলব উত্তর, ফরিদগঞ্জ ও হাইমচরে বেড়ি বাঁধে সারিবদ্ধভাবে নারী-পুরুষ ও শিশুরা পাটের আঁশ ছাড়াতো। পাটের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়তো আশেপাশে। এ দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না। কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে সোনালী আঁশ পাট।

পাট চাষীরা বলেছেন, পাট পচানোর জন্যে ডোবা ও খালবিলে সময়মত পানি না থাকায় ও পাটের ন্যয্যমূল্য না পাওয়ায় পাট চাষে আগ্রহ নেই। আধুনিকতার সংস্পর্শে পাটের ব্যবহার কমেছে। স্থানীয় কৃষি অফিসও পাট চাষের ব্যাপারে কোনো রকম খোঁজ খবর নিচ্ছে না। কৃষি অফিসের কাগজে কলমে পাট চাষের হিসাব থাকলেও বাস্তবে তেমন চোখে পড়ে না বলেও জানান কৃষকরা।

বাংলাদেশের একসময়ের এই প্রধান অর্থকরী ফসল সোনালী আঁশ এখন বিলুপ্তির পথে। সরেজমিনে ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁদপুর সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের দামোদরদী, মনোহরখাদী, কল্যাণপুর ইউনিয়নের সফরমালী, দাসাদী ও রঙেরগাঁও, হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের দক্ষিণ তিরাশিকান্দী, উত্তর তিরাশি, মালকান্দী, ঈশানবালা, চরফতেজংপুরসহ বেশ কিছু এলাকায় আগের মত এখন আর পাট চাষ হচ্ছে না। তবে কিছু কিছু জমিতে তোষা পাট চাষ হলেও তা শাক হিসেবে বিক্রি হয় স্থানীয় বাজারে।

স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, পাট চাষে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় তারা পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। তবে কৃষি অফিস থেকে চাষীদের সাথে যোগাযোগ করে পাট চাষে আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর চাঁদপুর সদর উপজেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২৫ হেক্টর জমি। সেই জায়গায় দেশি জাতের ৩০ হেক্টর ও তোষা জাতের ৩৪ হেক্টরসহ মোট চাষ হয়েছে ৮৫ হেক্টর জমিতে।

গত বছরের তুলনায় এ বছর ৪০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ কম হয়েছে। ফলে চলতি বছরে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি পাট চাষে। উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পাটের আবাদ কোন্ ইউনিয়নে এমন প্রশ্নের উত্তর জানা নেই স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের।

নীলকমল ইউনিয়নের পাট চাষী নজরুল মাল বলেন, পাট চাষে অনেক শ্রম দিতে হয়। উৎপাদন খরচও বেশি। এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে বীজ বপন থেকে শুরু করে পাটের আঁশ ছাড়িয়ে শুকানো পর্যন্ত ১৪-১৫ হাজার টাকা খরচ হয় এবং পাট পচাতে জমির আশেপাশে ডোবা না থাকায় ভোগান্তি পেতে হয়। এই হিসাবে এক মণ পাটের দাম ২ হাজার টাকার বেশি হওয়া দরকার। কিন্তু গত বছর পাটের দাম ছিল ১৬শ’ থেকে ১৭শ’ টাকা পর্যন্ত। তাই এবার পাট চাষ করা হয়নি।

অপর পাটচাষী শুক্কুর আলী বলেন, আগের চেয়ে পাট চাষের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে। ওই তুলনায় পাটের দাম পাওয়া যায় না। ফলে পাট চাষে তেমন আগ্রহ নেই আর। তারপরেও আমরা চাষী মানুষ। এ বছর ২০ শতক জমিতে পাটের আবাদ করেছি। দাম ভালো পেলে আগামী বছর আরও বেশি পাটের আবাদ করবো। আর লোকসান হলে বিকল্প ফসল চাষ করবো।

এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রেদওয়ান আহমেদ বলেন, কৃষকদের পাট চাষে আগ্রহ হারানোর পেছনে ন্যায্যমূল্য না পাওয়া অন্যতম কারণ। এখন আগের মত পাট থেকে উৎপাদিত পণ্যগুলোর বাজারে তেমন চহিদা নেই। তাছাড়া পাট জাগ দেয়ার জায়গার ভীষণ সংকট। এর কারণ হলো অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি-ঘর নির্মাণ এবং সরকারি খাস জমি ভরাট করে ফেলা ও খালের মুখ বন্ধ করে দেয়া। এরকম প্রতিবন্ধকতার কারণে সময় মতো পাট পচানোর কাজ ব্যাহত হয়। এ বছর জেলায় ৪২১০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়