প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৩, ০০:০০
বাদামী গাছ ফড়িং (Brown Plant Hopper or BPH) ধানের একটি মারাত্মক ক্ষতিকর পোকা। বাদামী গাছ ফড়িং ধান গাছের গোড়ায় বসে রস শুষে খায়। ফলে গাছ পুড়ে যাওয়ার রং ধারণ করে মরে যায়। আক্রান্ত ক্ষেতে বাজ পড়ার মতো হপার বার্ন-এর সৃষ্টি হয়। অধিকাংশ কৃষকের কাছে বাদামী গাছ ফড়িং ‘কারেন্ট পোকা’ বা ‘গুণগুণী’ পোকা নামে পরিচিত।
বাদামী গাছ ফড়িং
বাদামী গাছ ফড়িং খুবই ছোট আকারের পোকা, প্রায় ৪ মিলিমিটার লম্বা ও বাদামী রঙের হয়। পূর্ণ বয়স্ক স্ত্রী ফড়িং পাতার খোল, পাতা ও পাতার মধ্য শিরার ভিতরে ডিম পাড়ে। ৭-৯ দিনের মধ্যে ডিম থেকে বাচ্চা (নিম্ফ) বের হয়। বাচ্চাগুলো ৫ বার খোলস বদলায়। বাচ্চাগুলো প্রথম পর্যায়ে সাদা রঙের হয় ও পরে বাদামী রং ধারণ করে। বাচ্চা থেকে পূর্ণ বয়স্ক ফড়িংয়ে পরিণত হতে আবহাওয়া ভেদে ১৪-১৬ দিন সময় লাগে।
এক জোড়া পোকা ৩-৪ প্রজন্মে প্রায় ৩৫ লক্ষ পোকার জন্ম দেয় এবং ৫০ মাইল পথ অতিক্রম করতে পারে। এই পোকা শরীরের ওজনের তুলনায় ১০-১২ গুণ বেশি খায়। বীজতলা থেকে শুরু করে পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত যে কোনো সময় এ পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। তবে কাইচথোড় বের হওয়ার শুরু থেকে আক্রমণ বেড়ে যায়।
আক্রমণের অনুকূল পরিবেশ :
অধিক কুশি উৎপাদনকারী জাতের চাষ, গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া (গুমোট অবস্থা) এবং ছায়াযুক্ত স্থানে বাদামী গাছ ফড়িং দ্রুত বংশবৃদ্ধি পায়।
এছাড়া জমি স্যাঁতস্যাঁতে হলে ও জমিতে দাঁড়ানো পানি থাকলে, চারা ঘন করে রোপণ করলে, অধিক মাত্রায় ইউরিয়া সার ব্যবহার করলে, বাতাস চলাচল কম হলে, দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১৮-২৫ ডিগ্রি সেঃ ও আর্দ্রতা ৮০ শতাংশ হলে গাছ ফড়িংয়ের প্রকোপ লক্ষ্য করা যায়।
আক্রমণের লক্ষণ :
বাদামী গাছ ফড়িংয়ের বাচ্চা (নিম্ফ) ও পূর্ণাঙ্গ পোকা উভয়ই ধান গাছের গোড়ার দিকে দলবদ্ধভাবে অবস্থান করে ও সেখান থেকে অনবরত গাছের রস শুষে খেতে থাকে। এ পোকা ধান গাছের কুশি স্তর হতে পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত আক্রমণ করে। তবে panicle initiation ও milking stage -এ বেশি ক্ষতি করে।
এর ফলে গাছ প্রথমে হলুদ ও পরে শুকিয়ে মারা যায়। দূর থেকে পুড়ে যাওয়ার মতো দেখায়। এ ধরণের ক্ষতিকে হপার বার্ন বা বাজপোড়া বলা হয়।
দমন ব্যবস্থাপনা :
জমির আইল পরিষ্কার রাখা, সঠিক দূরত্বে (সারি থেকে সারি ২০-২৫ সে.মি. ও গুছি থেকে গুছি ১৫-২০ সে.মি.) লাইনে চারা রোপণ করতে হবে। ১০ লাইন পরপর ১ লাইন ফাঁকা রাখতে হবে। পোকা আক্রান্ত জমির পানি সরিয়ে দিয়ে ৭-৮ দিন জমি শুকনা রাখতে হবে। ইউরিয়া সার ধাপে ধাপে ব্যবহার করতে হবে।
গাছ ফড়িং দমনে নাড়া পুড়ে ফেলা ও আলোক ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে। আক্রান্ত জমিতে ২-৩ হাত দূরে দূরে বিলি কেটে সূর্যের আলো ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। জমিতে হাঁস ও হাঁসের বাচ্চা ছেড়ে পোকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
অধিকাংশ কুশিতে ৪টি গর্ভবতী স্ত্রী পোকা এবং ৮-১০টি নিম্ফ পরিলক্ষিত হলে নি¤েœ উল্লিখিত যে কোনো একটি রাসায়নিক ব্যবস্থায় গাছের গোড়ার দিকে ভালো ভাবে ভিজিয়ে অনুমোদিত মাত্রায় স্প্রে করতে হবে।
আইসোপোকার্ব ৭৫ ডব্লিউপি (সপসিন/মিপসিন)= ০.২ গ্রাম/ লিটার পানি দ্বারা স্প্রে। ইমিডাক্লোপ্রিড ২০এসএল (ইমিটাফ/এডমায়ার/টিডো/ এডক্লোপ)= ০.৫মিলি/ লিটার পানিতে দিয়ে স্প্রে। থায়ামেথোক্সাম ২৫ ডব্লিউজি (একতারা/কনফিডর/স্পইক)= ০.২ গ্রাম/ লিটার পানিতে দিয়ে স্প্রে। পাইমেট্রিজিন ৫০ ডব্লিউজি (পাইটাপ, প্লেনাম, হপারসট)= ০.৬ গ্রাম/লিটার পানিতে স্প্রে। এছাড়াও টেকোম্যা ৪০ এসসি, সানক্লোপিড ২০ এসএল, আটোমিডা ৭০ ডব্লিউ ডিজি, গ্ল্যামোর-৮০ ডব্লিউজি, অপ্রোকার্ব ৭৫ ডব্লিউজি, ইত্যাদি স্প্রে করতে হবে।
লেখক পরিচিতি : উপজেলা কৃষি অফিসার, কালীগঞ্জ, লালমনিরহাট।