প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২২, ০০:০০
গোখাদ্যের দাম বাড়ায় খামারিরা বিপাকে। হাজীগঞ্জ উপজেলার রাজারগাঁও ইউনিয়নের মধ্য মেনাপুর গ্রামের ওবায়দুল্লাহ পাটওয়ারী ও আনিস পাটওয়ারী নিজের জমি চাষাবাদ করে কোনো রকমে সংসার চালান। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। তার ওপর বিপাকে পড়েছেন বাড়ির তিনটি গরু নিয়ে। কারণ নিত্যপণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গত ক’দিনে গোখাদ্যের দাম বেড়ে গেছে।
গত শনিবার আনিস পাটওয়ারী বলেন, ‘সাত দিনের মধ্যে ৪০ টাকা কেজির ভুসি ৫০ টাকা, ৩৫০ টাকা মণ দরের খ্যাড় (খড়) ৬০০ টাকা হয়েছে। এখন কী করে গরুগুল্যা পালবো? এদিকে আবার বাজারের সদাইপত্রের (নিত্য খাদ্যপণ্যের) দামও আগুন হয়া গেছে। এ অবস্থায় গরুগুল্যাক খাওয়াব কী করে’।
গোখাদ্যের দাম বাড়ার কারণে আনিসুরের মতো চাঁদপুর সদর উপজেলার বালিয়া ও তরপুচণ্ডীর গরুর খামারিরা বিপাকে পড়েছেন। তারা বলছেন, গোখাদ্যের দাম বাড়লেও দুধের দাম বাড়েনি। এ অবস্থায় গরুগুলো গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে। অনেকে এখন গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন।
খামারি ও গোখাদ্য ব্যবসায়ীরা গত বৃহস্পতিবার বলেন, দিন দশেকের ব্যবধানে ৪০ টাকা কেজি দরের গম ও অ্যাংকর ডালের ভুসি ৫০ টাকা, ৪৫ টাকা কেজি দরের খেসারির ভুসি ৫৫ টাকা, ৩৪ টাকা কেজি দরের মসুরির ভুসি ৪২ টাকা, ১১ টাকা কেজি দরের ধানের গুঁড়া ১৫ টাকা হয়ে গেছে। গরু পালনকারীরা সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন মূল গোখাদ্য খড় কিনতে গিয়ে। কয়েক দিন আগেও ৩৫০ টাকা মণ খড় বিক্রি হতো। এখন সেই খড়ের দাম হয়েছে ৬০০ টাকা। তা-ও ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৯নং গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নের চরমথুরা গ্রামের খামারি বলেন, ‘এমনিতেই খড় আর ভুসির দামে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়ছি। তার ওপর বাজারে এখন ভালো ভুসি পাওয়াই মুশকিল হয়ে গেছে। ৩৭ কেজির ভুসির বস্তায় দুই থেকে তিন কেজি করে এবং এক মণ খড়ে চার থেকে পাঁচ কেজি করে ওজন কম দেয়া হচ্ছে’।
খামারিদের অভিযোগ, প্রতি বস্তায় ৩৭ কেজি করে ভুসি থাকার কথা। কিন্তু একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী দুই থেকে তিন কেজি করে ভুসি কম দিচ্ছেন। এসব ব্যবসায়ীর দোকানে সেলাই মেশিন আছে। তারা ৩৭ কেজি ওজনের প্লাস্টিকের বস্তা থেকে দুই থেকে চার কেজি ভুসি বের করে তা নতুন করে সেলাই করে দেন।
আবার কোনো কোনো ব্যবসায়ী ওজন সঠিক দেখানোর জন্যে বের করে নেওয়া ভুসির পরিবর্তে তুষ, পচা আটা, ধানের গুঁড়াসহ বিভিন্ন ধরনের ভেজাল মিশিয়ে দেন। খামারিরা বস্তাগুলোতে নিখুঁত সেলাই ও লেবেল দেখে তা ভালো ভুসি মনে করে কিনে নিয়ে যান। এছাড়া খড় কিনতে গিয়েও খামারিরা প্রতারিত হচ্ছেন। খড় বিক্রেতারা প্রতি মণে পাঁচ থেকে আট কেজি করে ওজন কম দিচ্ছেন।
চাঁদপুর সদর উপজেলার কয়েকটি খড় বিক্রির স্থান ঘুরে দেখা গেছে, খড় ওজন করার কোনো ব্যবস্থা নেই। অনুমানের ভিত্তিতে বিক্রেতারা খড়ের বোঝা তৈরি করে তা খামারিদের কাছে মণ হিসেবে বুঝিয়ে দিচ্ছেন।
ষোলঘর বাজারের খড় বিক্রেতা ছোবহান মিয়া বলেন, অনুমানের ভিত্তিতে খড়ের বোঝা বানিয়ে বিক্রি হলেও ওজন ঠিকই দেয়া হয়। আর কয়েক দিনের বৃষ্টিতে অনেক জায়গায় খড় নষ্ট হয়ে গেছে। মোকামে গিয়েও খড় পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে দাম বেড়েই চলেছে।
চাঁদপুরের বিভিন্ন খামারিরা বলেন, ‘এভাবে এক কেজি গমের ভুসির দাম ছিলো ৩৫ টাকা। তিন-চার দিন পর সেই ভুসির দাম হয়া গেলো ৪০ টাকা। দাম বাড়তে বাড়তে আইজক্যা গমের ভুসির দাম ৫০ টাকা হয়া গেলো। একই হারে অন্য গোখাদ্যের দামও বেড়ে গেছে’।
বাংলাদেশ ডেইরী ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন চাঁদপুরের সাধারণ সম্পাদক মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, আমার খামারে মোট ২৫টি গরু আছে। প্রতিদিন ১৫০ লিটারের মতো দুধ হয়। এই দুধের দাম তিন-চার বছর আগে (প্রতি লিটার ৪৫ টাকা) যেমন ছিলো, এখনো তেমনই আছে। অথচ গোখাদ্যের দাম এই কয়েক বছরে দু-তিন গুণ বেড়েছে। গোখাদ্যের দাম বাড়ায় এখন প্রতি মাসে এক লাখ টাকা লোকসান যাচ্ছে।
চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানজিদা শাহনাজ বলেন, ভেজাল গোখাদ্য ও ওজনে কম দেয়ার ব্যাপারে কিছু অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। প্রমাণ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।