সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২২, ০০:০০

কচু চাষে অল্প পুঁজিতে অধিক লাভবান কৃষক একাব্বর খাঁ
মোঃ আবদুর রহমান গাজী ॥

চলতি মৌসুমে চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের কৃষক একাব্বর খাঁ প্রায় ১ একর জমিতে কচুসহ বাহারি রকমের সবজির আবাদ করেছেন। যার মধ্যে ২০ শতাংশ জমিতে চাষ করেছেন পানি কচুর। নিজ গ্রামবাসীর চাহিদা পূরণ করে দেশে-বিদেশে কচু ও কচুর লতি রফতানির স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

অল্প খরচে অধিক মুনাফা হওয়ায় কচু চাষাবাদে ব্যস্ত রয়েছেন একই এলাকার একাধিক কৃষক। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চাষাবাদ হওয়া এসব কচু ও কচুর লতি। অন্যান্য সবজির তুলনায় কচু চাষাবাদে কোনো ঝুঁকি না থাকায় কচু চাষাবাদে আগ্রহী স্থানীয় কৃষকেরা।

সরেজমিনে কৃষক একাব্বর খাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন ‘কৃষি প্রজেক্ট’ ঘুরে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের কচু চাষাবাদের চিত্র দেখা যায়। একাব্বর খাঁর মতো পানি কচু চাষাবাদে ব্যস্ত আছেন একাধিক কৃষক।

এসব কচুর চাষাবাদ ছাড়াও একই প্রকল্পের বিভিন্ন জমিতে পেঁপে, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ করেছেন তিনি। যেখানে নিয়মিতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন চার-পাঁচজন শ্রমিক।

একাব্বর খাঁসহ একাধিক কৃষকের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ২০ শতাংশ জমিতে কচু চাষাবাদের জন্যে জমি তৈরি থেকে শুরু করে সর্বশেষ পর্যন্ত ব্যয় হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। ২০ শতাংশ জমিতে তিন হাজার কচুর গাছ বুনন করা যায়। এসব গাছ থেকে লতিও বিক্রি করা যায়। সব মিলিয়ে ২০ শতাংশ জমি থেকে কচু ও লতি মিলিয়ে প্রায় ৮০-৯০ হাজার টাকার ফলন বিক্রি করা যায় অনায়াসে।

তিনি বলেন, আমাদের বাপ-দাদারা ধান-পাট চাষ করে জমি থেকে ফলন নিতেন। কিন্তু এখন আধুনিকায়ন হয়েছে। গত চার মাস আগে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় কন্দাল ফলন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনী উপকরণ পাই এবং তাদের সহযোগিতায় প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করি। গত দুমাস ধরে প্রতি সপ্তাহে ৫-৭ মণ করে কচুর লতি তুলতে পারছি। এভাবে আরো তিন গুণ চার মাসে বিক্রি করতে পারবো। কারণ, কচু রোদণ্ডবৃষ্টিসহ সবকিছু সহ্য করতে পারে। প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টিতে অন্যান্য ফসলের কমণ্ডবেশি ক্ষতি হয়, কিন্তু কচুর তেমন ক্ষতি হয় না। এ জন্যে কচুর চাষাবাদ আমার ভালো লাগে। এ ছাড়া আমাদের গ্রামে আমিই প্রথম এই কচুর আবাদ করছি। মূলত কৃষিকাজের প্রতি আগ্রহ থেকেই এই পেশায় আসা হয়েছে।

তিনি বলেন, অন্যান্য ফসলে ঝুঁকি থাকে, কিন্তু কচুতে তেমন ঝুঁকি নেই। আর অল্প পুঁজিতে অধিক লাভবান হওয়া যায়। আমি কচু চাষে লাভবান হয়েছি দেখে বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা এখন কচু চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন।

‘কচু চাষাবাদ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী’ জানতে চাইলে একাব্বর খাঁ জানান, চলতি বছরে প্রায় ১ লাখ কচুর চারা বিক্রি করেছেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আরও দুই লাখ কচুর চারা বিক্রি করবেন। কচুর লতি ও কচুর মুতা/কাঠ/কাণ্ড চাষাবাদ দেশ ও দেশের বাইরে প্রসার করবেন। নিজ গ্রামের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় কচু রফতানির বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে বলেও জানান একাব্বর।

একই প্রজেক্টে কর্মরত শ্রমিক মিলন জানান, এ গ্রামে ১০ থেকে ১২ বছর ধরে কৃষিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন তিনি। তার বাড়ি এ গ্রামেই। তিনি তিন বছর ধরে কাজ করেন। প্রতি মাসে কাজের মজুরি হিসেবে পান ১৩ হাজার টাকা। তাতে পরিবার নিয়ে অনেক সুখে রয়েছেন বলে জানান এই শ্রমিক।

একাব্বরের কচু চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে রামরাসদী এলাকার জয়নাল নামের কৃষক জানান, ১০ শতাংশ জমিতে কচুর সঙ্গে মিশ্র চাষাবাদ করেছেন তিনি। কচু চাষাবাদের মূল উদ্দেশ্য হলো অল্প পুঁজিতে অধিক লাভবান হওয়া যায়। তখন থেকেই আমার ইচ্ছা কচুক্ষেত করার। এবার কচুর আবাদ করে সফল হতে পারলে ভবিষ্যতে আরও বড় করে কচুক্ষেত করার চিন্তাভাবনা আছে বলে জানান এই তরুণ কচু চাষী।

একই গ্রামের আরেক কৃষক ফরহাদ বলেন, তিনিও ৩০ শতাংশ জমিতে কচু আবাদ করেছেন। পাশাপাশি অন্য সবজিও রোপণ করেছেন তিনি। কচু চাষে আগ্রহী কেন জানতে চাইলে ফরহাদ বলেন, কয়েক বছর ধরে দেখছি কৃষি অফিস কচু চাষাবাদ করার পরামর্শ দিচ্ছে। একাব্বর ভাইয়ের দেখাদেখি আমিও এবার কচুর চাষ শুরু করেছি। তবে এ বছর কচু চাষে লাভবান হলে সামনের বছর আরও বেশি জমিতে কচুর আবাদ করবো।

চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোঃ জালাল উদ্দিন এ প্রতিবেদককে জানান, ইতিমধ্যে এ জেলার অনেকেই পানি কচু চাষাবাদে ঝুঁকেছেন। স্বল্প খরচে অধিক মুনাফা পাওয়া যায়। কৃষি প্রজেক্ট সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়েছে। কচু চাষাবাদ করে চাষী একাব্বর খাঁ বেশ লাভবান হচ্ছেন।

চাঁদপুর সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কৃষিবিদ আয়শা আক্তার বলেন, কৃষি অফিস থেকে কচু আবাদের ক্ষেত্রে কৃষকদের সব সময় বিভিন্ন রকম পরামর্শ এবং কচু চাষাবাদে আগ্রহী কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। ২০ শতাংশ জমিতে কচু আবাদ করতে খরচ হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আর কচু বিক্রি করে আয় হয় খরচ বাদে প্রায় ৮০-৯০ হাজার টাকা। এ ছাড়া কচু খুবই পুষ্টিমান সমৃদ্ধ ফসল। এতে প্রচুর আয়রন ও ভিটামিন ‘এ’সহ নানা পুষ্টি উপাদান আছে। যা গর্ভবতী মা ও শিশুসহ সকল বয়সীদের জন্যে উপকারী। তাছাড়া কচু চাষে দুই মাস পর পর হতে প্রতি সপ্তাহে নগদ অর্থ পাওয়া যায়। আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে আমাদের বিবি স্যারসহ কৃষি অফিসার মোঃ নিজাম উদ্দিন ও সহকারী কৃষি অফিসার মোঃ খাইরুল বাশারকে সাথে নিয়ে একাব্বর খাঁর কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের পানি কচু চাষাবাদের প্রজেক্ট পরিদর্শনে যাই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়