প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২২, ০০:০০
চলছে জ্যৈষ্ঠ মাস। অনেকেই আবার এ মাসকে মধুমাস বলেন। কেননা এ মাসে যতো কলেজ আছে সবই মিষ্টি এবং সুস্বাদু। আর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চাঁদপুরে আসছে মৌসুমি ফল। অলিগলি থেকে মহাসড়ক-সর্বত্রই আম, জাম, কাঁঠাল, আনারস, তরমুজ, বাঙ্গি, জামরুল, লিচু, বেল, পেয়ারাসহ বিভিন্ন দেশীয় রসালো ফল বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারাও আকৃষ্ট হয়ে ভিড় করছেন দোকানগুলোয়। যদিও পাইকারি ও খুচরা বাজারে ফলের দামে বিস্তার ফারাক লক্ষ্য করা গেছে। পরিস্থিতি এমন-খুচরা বাজারে অধিকাংশ ফলের দাম পাইকারি আড়তের তুলনায় দ্বিগুণ।
আড়তদাররা বলছেন, আমদানি করা ফলের শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এজন্যে এসব ফলের দাম বেড়েছে। সেই সুযোগে খুচরা বিক্রেতারা দেশীয় ফলের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। সরেজমিন চাঁদপুর চৌধুরীঘাট ফলের পাইকারি আড়ত ঘুরে দেখা যায়, গ্রীষ্মের রসালো ফলে ভরপুর বাজার। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা হরেকরকম মৌসুমি ফল থরে থরে সাজিয়ে রাখতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আড়তদাররা। চাঁদপুরের আশপাশ থেকে খুচরা ফল বিক্রেতারা সকাল থেকে ভিড় করছেন সেই আড়তে। হাঁকডাক দিয়ে বিভিন্ন দেশীয় ফল বিক্রি করছেন আড়তদাররা। ভরা মৌসুম হওয়ায় বাজারে আম ও লিচুর আধিক্যই বেশি দেখা গেছে।
পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোমবার প্রতি কেজি আম পাইকারি পর্যায়ে ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে আকারভেদে প্রতি কেজি হিমসাগর ৫০-৫৫ টাকা, ল্যাংড়া আম ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং আম রূপালি ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে এ আমগুলো খুচরা বাজারগুলোয় প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
পালবাজারের খুচরা আম ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, খুচরা বাজারে হিমসাগর কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১০০-১৩০ টাকা, ল্যাংড়া ১২০ থেকে ১৩০ এবং আ¤্রপালি মানভেদে ১৪০-১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
অন্যদিকে বিসমিল্লাহ আড়তে ১০০টি লিচু বিক্রি হয়েছে ১৩০-১৬০ টাকায়। অথচ কালীবাড়ি মোড়, বাসস্ট্যান্ড খুচরা বাজারে মৌসুমি এ ফলটি বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৫০ টাকায়। বাজারে অল্প পরিমাণে উঠলেও জাতীয় ফল কাঁঠাল আকারভেদে পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে ১৫০-৩৫০ টাকা, যা খুচরা বাজারে ক্রেতার ৪০০-৭০০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। আনারসের বাজারেও যেনো সরবরাহের কমতি নেই। বাদামতলীর আড়তে রাঙামাটির আনারসে ভরপুর।
আড়তদার সুলতান জানান, তার আড়তে তিন আকারের আনারস আছে। এগুলোর প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা, ১০ থেকে ১৫ টাকা ও ৬ থেকে ৮ টাকায়। তবে চাঁদপুরে খুচরা বাজারে আকারভেদে এসব আনারস বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ টাকায়।
এছাড়া চাঁদপুরের বেশ ক’টি খুচরা বাজার ঘুরে ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পেয়ারা কেজিপ্রতি ৭০-১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। জামরুল ১৪০-২০০ টাকা, কালো জাম কেজিপ্রতি মানভেদে ১২০-১৮০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি পিচ বেল ২৫-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ওয়্যারলেস বাজারে মৌসুমি ফল কিনতে আসা মোঃ শরিফুল ইসলাম বলেন, দেশে এখন মৌসুমি ফলের মাস যাচ্ছে। এ সময় বাজারে দেশীয় সব ধরনের ফল পাওয়া যায়। তাই পরিবারের জন্যে এসব ফল কিনতে এসেছি। তিনি জানান, বাজারে বেশ কয়েকটি জাতের আম পাওয়া যাচ্ছে। তবে দাম বেশি মনে হচ্ছে।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) পক্ষ থেকে জানানো হয়, বর্তমানে বাজারে দেশীয় ফল উঠছে। ক্রেতারা পুষ্টি চাহিদা মেটাতে কিনছেন। তবে লক্ষ্য করা গেছে, বাজারে বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। যে কারণে বাজার তদারকি সংস্থাগুলো অভিযান পরিচালনা করতে হবে। দাম নিয়ন্ত্রণে এনে ক্রেতাদের মাঝে স্বস্তি ফেরাতে হবে। আমরা ক্রেতাণ্ডবিক্রেতাকে সচেতন করি। যখনই কিনবে দেখে-শুনে কিনলে আর বিক্রেতা ক্রেতার সাথে প্রতারণা করবে না। সঠিক মান নির্ণয় করে তার মালামাল বিক্রি করে আর যদি তার ব্যত্যয় ঘটে তাহলে তারা অপরাধী সাব্যস্ত হবে।
চৌধুরীঘাটের ফলের পাইকারি বিক্রেতারা জানান, শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণার পর থেকেই বিদেশি ফলের দাম বেড়েছে। তবে এখন ফলের মৌসুম। সব ধরনের ফল উঠতে শুরু করেছে। বাজারে বিক্রিও হচ্ছে। কিন্তু বিদেশি ফলের দাম বাড়ায় মৌসুমেও দেশি ফল বাড়তি টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা।
বাবুরহাট বাজারের ফল ব্যবসায়ীরা বলেন, বাজার থেকে এখানে ফল আনতে অনেক খরচ হয়। ঘাটে টাকা দিতে হয়। গাড়ি ভাড়াসহ বিভিন্ন খরচ দিয়ে আমাদের আর খুব বেশি লাভ হয় না। এছাড়া দেশি ফল বেশি দিন রাখা যায় না। তাই শুরুতে দাম একটু বেশি থাকলেও শেষের দিকে কম দামে বিক্রি হয়। এটা কেউ দেখে না।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চাঁদপুরের সহকারী পরিচালক নূর হোসেন বলেন, বাজারে অন্যান্য নিত্যপণ্যের সঙ্গে ফলের বাজারও তদারকি করা হচ্ছে। পাইকারি ও খুচরা, এ দুই পর্যায়ে দাম পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে অনেকে আমদানি খরচের কারণে দাম কিছুটা বেশি নিচ্ছে।