প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২১, ০০:০০
রফিক আর শফিক দুই বন্ধু। তাদের বয়স তেরো থেকে চৌদ্দ বছর হবে। একেবারে ছোট থেকে তারা একসাথে একই প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে। দুজনেরই মেধা ভালো। রফিকের বাবা একেবারে নিতান্ত একজন গরিব। আর শফিকের বাবা বড় ব্যবসায়ী। দুই বন্ধুর অর্থনৈতিক অবস্থার অনেক পার্থক্য থাকলেও তাদের বন্ধুত্বের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। তারা স্কুলে যাওয়ার সময় একসাথে যায় আবার আসার সময়ও একসাথেই আসে। স্কুল যাওয়া আসার পথে রফিক কিছু ছেলে-মেয়েকে দেখে যারা স্কুলে যায় না, পড়াশোনা করে না, তাদের গায়ের কাপড়-চোপড় ছেঁড়া-ফাটা এবং ময়লাযুক্ত।
একদিন তার মনে প্রশ্ন জাগলো কেনো তারা প্রতিদিন এভাবে থাকে? তাদের কি দেখার কেউ নেই? তারাওতো আমাদের মতো মানুষ তবে তারা এমন কেনো? এভাবে বিভিন্ন চিন্তা এসে তাকে ভাবিয়ে তুললো। রাত্রে বিছানায় শুয়ে শুয়ে এ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করতে থাকে। একদিন একজনকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলো, তোমরা এভাবে থাকো কেনো? শিশুটি কী উত্তর দেবে তা ভেবে পাচ্ছে না। এভাবে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করার পর শিশুটি কেঁদে ফেললো। তখন রফিক তাকে আর বিরক্ত না করে বিদায় নিলো। কিন্তু তাকে তো জানতেই হবে কেনো তাদের এমন অবস্থা। তাই তারা দুই বন্ধু একদিন সেই শিশুটির বাড়িতে চলে গেলো। গিয়ে দেখতে পেলো শিশুটির মা কি যেনো রান্না করছে আর পাশে সেই শিশু সন্তানটি বসে আছে। শফিক রান্নারত অবস্থায় সেই নারীকে জিজ্ঞেস করল কী রান্না করছেন? নারীটি বললো পাশের বাড়িতে কাজে গিয়েছিলাম তারা কাজের বিনিময়ে কিছু চাল দিয়েছে সেগুলো রান্না করছি। শফিক আবার জিজ্ঞেস করলো তরকারি কী? নারীটি এবার কোনো উত্তর দিতে না পেরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললো, আমার স্বামী অনেক আগে মারা গেছে। তারপর থেকে এই শিশুটিকে নিয়ে মানুষের বাড়িতে কাজ করে যা পাই তা দিয়ে কোনো মতে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে থাকি। আজকে তরকারি রান্না করার মতো কিছু নেই তাতে কী, গরিবের ঘরের বড় তরকারি যে লবণ তাতো সবাই জানে। শফিকের মনে প্রশ্ন জাগলো তাদের একদিন একটু তরকারি কম হলে ভাত খেতে পারে না। আর এরা নাকি নিয়মিত এভাবে লবণ দিয়ে ভাত খেয়ে দিনাতিপাত করে। তার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। রফিক শুধু শফিকের দিকে তাকিয়ে আছে আর কী যেনো বলবে এমন একটা ভাবো করছে। তারা দুজনেই সেখান থেকে বের হয়ে তাদের বাড়ির দিকে রওনা দিলো।
পথিমধ্যে রফিক তার বন্ধুকে বললো, বন্ধু গত ঈদে আমি এই শিশুগুলোকে এভাবেই ঈদের মাঠে ছেঁড়া পোশাকে দেখেছিলাম কিন্তু আমার কাছে এমন কোনো অর্থ ছিলো না যে তাদেরকে নতুন কিছু কিনে দেবো। শফিক বললো, বন্ধু গত ঈদে আমি আমার আব্বুর কাছ থেকে দুটি জামা কিনে নিয়েছিলাম। আব্বু আমাকে প্রশ্ন করেছিলো, তুমি দুটি পোশাক কী করবে? আমি বলেছিলাম বাবা ঈদের দিন সকালে দেখবে আমি দুটি পোশাক কী করি। পরবর্তীতে ঈদের দিন সকালে আব্বুকে নিয়ে এক বাসায় গেলাম সেখানে আমার বয়সের একজনকে ডেকে বললাম এই জামাটা গায়ে দাওতো। সে জামাটা পরে বললো এটা কি আবার নিয়ে নেবেন? তখন আমি বললাম, না এবার ঈদে তোমার জন্যে এই জামাটি কিনেছি। সেতো মহাখুশি হয়ে আমার দিকে চেয়ে থাকলো। তবে এবার ঈদেও তেমনই দুটি পোশাকের বায়না ধরবো। তাহলে একটি আমি নিজের জন্যে রেখে দেবো আর অপরটি এদের যে কোনো একজনকে দিয়ে দেবো। তাহলে তার ঈদটাও অনেক মজার হবে।
এবার রফিক বললো, বন্ধু তোর মতো আমাদের সব বন্ধুই যদি একটি করে নতুন জামা কিনে দেয় তাহলে তাদের ঈদটাও খুব খুশির হয়ে উঠবে। এবার স্কুলে গিয়ে তারা এ বিষয়গুলো নিয়ে তাদের সকল বন্ধুর সাথে আলাপ আলোচনা করলো। সবাই শুনে খুব খুশি হয়ে বললো, ঠিক আছে তাহলে এবার ঈদে সবাই একটি করে জামা কিনে রাখবে। আর ঈদের দুদিন আগে সবগুলো একজায়গায় করে সবাই একসাথে ঈদের আগের দিন রাতে বিতরণের জন্যে বের হবে। এমন সিদ্ধান্তে সবাই যখন খুশিতে হাবুডুবু খাচ্ছে তখন রফিক চিন্তা করতে লাগলো সে কীভাবে দুটি পোশাক কিনবে? যেখানে তার একটি পোশাকই কেনা হচ্ছে না। তারপরও সে কাউকে তার বিষয়টি বুঝতে না দিয়ে বুদ্ধি খুঁজতে লাগলো কিভাবে একটি নতুন পোশাক সংগ্রহ করা যায় এবং সবার সাথে ঈদের খুশিটাকে ভাগাভাগি করে নেয়া যায়।