প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৫, ০৯:৫১
প্যারেন্টিং ও শিশুর হিলিং-এ শিক্ষকদের করণীয়

একটি শিশু একটি পরিবারের নতুন আশা, নতুন সম্ভাবনা এবং নতুন স্বপ্ন নিয়ে পৃথিবীতে আসে। তার প্রাণবন্ত উপস্থিতি একটি পরিবারের সজীবতা, আনন্দ এবং উচ্ছলতা নিয়ে আসে। ছোট একটি শিশু শিশিরের মতো বিশুদ্ধ এক সত্তা যা প্রকৃতির এবং আল্লাহর দেয়া সেরা উপহার। পৃথিবীর সব ধরনের কলুষতা, হিংসা -বিদ্বেষ, জটিলতা ,কুসংস্কার, পাপ থেকে মুক্ত পরিবেশে বড় করে তোলার জন্য প্যারেন্টিং এ পরিবারের সকলের পাশাপাশি শিক্ষকের ভূমিকাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাবা-মা যদি সুআচরণের সবটুকু দিয়ে তার সন্তানকে গড়ে তোলতে পারতো ,তাহলে পৃথিবীতে শিক্ষকের জন্য হতো না। তারা সমাজের নির্মলতা, বিশুদ্ধতা, পবিত্রতা, সতেজতা ,আনন্দ এবং নিষ্পাপতার প্রতীক। প্রতিটি ভোর যেমন আমাদের জীবনে নতুন প্রাণ এবং আশা নিয়ে আসে, তেমনি শুভ্রতার শিশির এই প্রাণবন্ত শিশুগুলো পরিবারকে নতুন করে জাগিয়ে তোলে নতুন স্বপ্ন পূরণে।
শিশুর জীবনে প্যারেন্টিং হলো সন্তান লালন-পালন ও তাদের সার্বিক বিকাশে বাবা-মায়ের বা দায়িত্বশীল ব্যক্তির ভূমিকা ও কার্যকলাপকে বোঝায়। এটি শুধুমাত্র সন্তানের শারীরিক চাহিদা (যেমন: খাবার, বাসস্থান, পোশাক) পূরণ করা নয়, বরং তার শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, আবেগিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং নৈতিক সব ধরনের বিকাশে সহায়তা করা।
এটা একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া, যা সন্তান গর্ভে আসার পর থেকে শুরু হয়ে তার প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে সারাজীবন এর প্রভাব থাকে।শিশুরা তাদের অভিভাবকদের দেখেই শেখে।
বর্তমান সময়ে প্যারেন্টিং শুধুমাত্র প্রথাগত বা ঐতিহ্যবাহী ধারণাগুলো মেনে চলা নয়, বরং এটি শিশুর মেধা, পরিবেশ, সমাজ এবং বর্তমান পৃথিবীর পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে চলাও বটে। একটি “ভালো প্যারেন্টিং” প্রতিটি শিশুর জন্য ভিন্ন হতে পারে, কারণ প্রতিটি শিশুর ব্যক্তিত্ব, প্রয়োজন এবং পারিবারিক পরিবেশ আলাদা। শুধু তাই নয় -
প্যারেন্টিং হলো একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব। এর উদ্দেশ্য হলো এমন একজন মানুষকে গড়ে তোলা, যে সুস্থ, দায়িত্বশীল, আত্মবিশ্বাসী এবং সমাজের একজন কার্যকর সদস্য হতে পারবে। এক কথায় -
প্যারেন্টিং হলো সন্তান লালন-পালন ও তাদের সার্বিক বিকাশে বাবা-মায়ের বা দায়িত্বশীল ব্যক্তির ভূমিকা ও কার্যকলাপকে বোঝায়। এটি শুধুমাত্র সন্তানের শারীরিক চাহিদা (যেমন: খাবার, বাসস্থান, পোশাক) পূরণ করা নয়, বরং তার শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, আবেগিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং নৈতিক সব ধরনের বিকাশে সহায়তা করা।প্যারেন্টিং একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া, যা সন্তান গর্ভে আসার পর থেকে শুরু হয়ে তার প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে সারাজীবন এর প্রভাব থাকে।
শিশুরা তাদের অভিভাবকদের দেখেই শেখে।
বর্তমান সময়ে প্যারেন্টিং শুধুমাত্র প্রথাগত বা ঐতিহ্যবাহী ধারণাগুলো মেনে চলা নয়, বরং এটি শিশুর মেধা, পরিবেশ, সমাজ এবং বর্তমান পৃথিবীর পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে চলাও বটে। একটি “ভালো প্যারেন্টিং” প্রতিটি শিশুর জন্য ভিন্ন হতে পারে শুধু মাত্র পরিবেশগত কারণে।
শিক্ষকগণ পাঠদানের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের প্যারেন্টিংয়ে শিক্ষকগণ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন, যা শিশুর সামগ্রিক বিকাশ এবং অভিভাবকদের ক্ষমতায়নে সহায়ক হয়। এই ভূমিকাগুলো মূলত তিনটি ক্ষেত্রে বিভক্ত করা যেতে পারে: তথ্য আদান-প্রদান ও পরামর্শ, অংশীজনের সাথে কর্মশালাও মতবিনিময় এবং কমিউনিটি এনগেজমেন্ট। নিম্নে শিক্ষকদের প্যারেন্টিং এ সহায়ক এর কিছু পরামর্শ দেওয়া হলোঃ
১. সক্রিয় যোগাযোগ ও পরামর্শ :
শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শেখার ধরণ, আচরণগত প্রবণতা এবং সামাজিক দক্ষতার বিষয়ে সবচেয়ে ভালো জানেন। কেননা বিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার সাথে সাথে বছরের শুরুতেই একজন শিক্ষক তার শ্রেণিকক্ষে সকল শিক্ষার্থীর সম্পর্কে একটা সম্মুখ ধারণা থাকে। অভিভাবকদের সঠিক প্যারেন্টিং সিদ্ধান্তে এই তথ্যসমূহ সহায়তা করতে পারে।
২ । শিশুর মেধা,শক্তি ও দুর্বলতা চিহ্নিতকরণ: শিক্ষক অভিভাবকদের স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেন যে তাদের সন্তানের কোন বিষয়ে দক্ষতা আছে (যেমন - গণিত, শিল্পকলা, খেলাধুলা) এবং কোন বিষয়ে উন্নতির প্রয়োজন (যেমন - মনোযোগের অভাব, সামাজিক জড়তা)। এটি অভিভাবকদের সন্তানের প্রতিভা বিকাশে এবং দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সঠিক পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে।
৩। শিক্ষামূলক সৃজনশীল কৌশল সম্পর্কে ধারণা : শিক্ষক বাড়িতে পড়াশোনার পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত, কীভাবে হোমওয়ার্ক তদারকি করা উচিত, অথবা নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে (যেমন - পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা) কীভাবে শিশুকে অনুপ্রাণিত করা যায়, সে বিষয়ে অভিভাবকদের ব্যবহারিক পরামর্শ দিতে পারেন।
৪। আচরণগত সমস্যার সমাধান : যদি কোনো শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করে, শিক্ষক সেই আচরণগুলো চিহ্নিত করে অভিভাবকদের জানাতে পারেন। একইসাথে, বাড়িতে সেই সমস্যা মোকাবিলায় কী ধরনের কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে, সে বিষয়েও পরামর্শ দিতে পারেন। প্রয়োজনে মনোচিকিৎসক বা কাউন্সিলরের কাছে যাওয়ার পরামর্শও দিতে পারেন।
৫ । ডিজিটাল নিরাপত্তা ও স্ক্রিন টাইম: বর্তমান যুগে ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার একটি বড় চ্যালেঞ্জ। শিশুরা সার্বক্ষণিক ডিভাইসের নেশায় মত্ত থাকতে চায়। শিক্ষক ডিজিটাল ডিভাইসের নিরাপদ ব্যবহার, অনলাইন বুলিং থেকে সুরক্ষা এবং স্ক্রিন টাইম ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব সম্পর্কে অভিভাবকদের সচেতন করতে পারেন।
৬ । কর্মশালা, মতবিনিময় ও প্রশিক্ষণঃ
শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের মাধ্যমে অভিভাবকদের জন্য বিভিন্ন কর্মশালা বা প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে পারেন, যা তাদের প্যারেন্টিং দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
৭ । প্যারেন্টিং স্কিল ডেভেলপমেন্ট: কীভাবে ইতিবাচক শৃঙ্খলা বজায় রাখা যায়, সন্তানের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করা যায়, বা তাদের আবেগিক বুদ্ধিমত্তা (ঊছ) বাড়ানো যায় এসব বিষয়ে কর্মশালার আয়োজন করা যেতে পারে।
৮ ।বয়ঃসন্ধিকালীন সমস্যা: বয়ঃসন্ধিকালে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন আসে, যা অনেক সময় বাবা-মায়েদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়। শিক্ষকরা এই বিষয়ে মতবিনিময় করে অভিভাবকদের সচেতন করতে পারেন এবং এই সময়ে সন্তানের সঙ্গে কীভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা যায়, সে বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারেন।
৯ । বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের সহায়তা: যদি বিদ্যালয়ে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থী থাকে, তবে তাদের অভিভাবকদের জন্য বিশেষ কর্মশালার আয়োজন করা যেতে পারে, যেখানে এই শিশুদের যত্ন ও শিক্ষার বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা হবে।
১০ । কমিউনিটি, প্রতিবেশীদের এনগেজমেন্টঃ
শিক্ষকরা অভিভাবকদের মধ্যে একটি শক্তিশালী কমিউনিটি গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারেন, যেখানে অভিভাবকরা একে অপরের কাছ থেকে শিখতে পারবেন এবং একে অপরকে সমর্থন করতে পারবেন।
১১ । প্যারেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বা ক্লাব: প্রতিটি বিদ্যালয়ে পিটিএ বা শিক্ষক অভিভাবক কমিটি আছে। যেখানে অভিভাবকরা নিয়মিত মিলিত হয়ে তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারবেন এবং সম্মিলিতভাবে বিদ্যালয়ের উন্নতিতে অংশ নিতে পারবেন।
১২। সহ শিক্ষাক্রমিক কার্যাবলীতে অভিভাবকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ: বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রমে অভিভাবকদের অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করা, যেমন - বিদ্যালয় মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা খেলাধুলায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা। এটি শিক্ষক-অভিভাবক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে।
১৩ । সম্পদ ভাগ করে নেওয়া: শিক্ষকরা অভিভাবকদের বিভিন্ন অনলাইন রিসোর্স, বই বা স্থানীয় কমিউনিটি সার্ভিসের তথ্য দিতে পারেন, যা তাদের প্যারেন্টিংয়ে সহায়ক হতে পারে।
১৪ । ভালো মার্জিত পোশাক পরিধানে অভিভাবক অভ্যস্ত হওয়াঃ শিশুর পারিবারিক শিক্ষার বীজ বপন হয় তার পরিবারে। বাবা মায়ের ভালো পোশাক পরিধান শিশুমনে সুন্দর প্রভাব বিস্তার করে।পোশাক শুধু কাপড় নয়, এটা একটা ভাষা।
আমরা কী পরি, সেটা আমাদের আত্মবিশ্বাস, আমাদের স্বপ্ন, আর আমাদের ব্যক্তিত্বের প্রতিচ্ছবি।
“একটি ড্রেস, একটি গল্প, একটি আত্মবিশ্বাস”-শিক্ষকগণ এই ধারণা দিয়ে,কাউন্সিলিং করে অভিভাবকদের পোশাকের ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করতে পারেন । তখনই দেখা যাবে শিশুসুন্দরের পূজারী হবে, ভালো পোশাক পড়তে চাইবে।
এই বহুমুখী ভূমিকার মাধ্যমে শিক্ষকরা কেবল শিক্ষার্থীদেরই শিক্ষিত করেন না, বরং তারা অভিভাবকদেরও ক্ষমতায়ন করেন এবং একটি সুস্থ ও সহায়ক পারিবারিক পরিবেশ গড়ে তুলতে সাহায্য করেন, যা শেষ পর্যন্ত শিশুর সামগ্রিক বিকাশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
বাবা মা যেটা না পারে , একজন শিক্ষক সেই দূরুহ কাজগুলো সফলতার সাথে করে শিক্ষার্থীর জীবন গঠনে সহায়তা করেন। শিশুর প্যারেন্টিং এ একজন শিক্ষক শুধুই পাঠদাতা নন, তিনি ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগর ।
এছাড়াও বাড়িতে তার আনন্দঘন শিখন পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব ও অভিভাবকদের। অভিভাবকদের সক্রিয় সহযোগিতা, সৃজনশীল মানসিকতার জন্য একটি শিশু উন্নত প্রজন্ম হিসেবে পৃথিবীতে তার নিজের জায়গা নিজে করে নিতে পারবে। এক্ষেত্রে অভিভাবকগণ শিশুর হিলিং/মানসিক আঘাত/ট্রমার দিকেও অত্যন্ত সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে খেয়াল রাখতে হবে।শিশুদের কোনো মানসিক আঘাত (ট্রমা) থেকে সেরে উঠতে বেশ কিছু কাজ সহায়তা করে। এক্ষেত্রে অভিভাবক এবং পরিবারের সদস্যদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিচে এমন কিছু কাজের কথা উল্লেখ করা হলো:
ক । নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা
* নিরাপত্তা নিশ্চিত করা: সবার আগে শিশুর শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাদের বোঝানো যে তারা নিরাপদ আছে এবং তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা হচ্ছে।
* শান্ত থাকা: অভিভাবক ও যত্নশীল ব্যক্তিদের যথাসম্ভব শান্ত থাকা উচিত, কারণ শিশুদের উপর তাদের আচরণের প্রভাব পড়ে।
যোগাযোগ এবং অনুভূতি প্রকাশে উৎসাহ দেওয়া
* কথা শোনা: শিশুদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তাদের প্রশ্ন করার জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করুন এবং বোঝান যে যেকোনো কথা বলতে তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে পারে।
* অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ দেওয়া: শিশুদের তাদের দুঃখ বা কষ্টের কথা বলতে, লিখতে বা ছবি অঁাকতে উৎসাহিত করুন। তাদের অনুভূতি লুকিয়ে রাখতে নিষেধ করুন।
* সহানুভূতি দেখানো: দয়া বা করুণা দেখানোর পরিবর্তে সহানুভূতি দেখান। তাদের অনুভূতির প্রতি সম্মান জানিয়ে পাশে থাকুন। “তোমার তো কিছু হয়নি” বা “শক্ত হও” এমন কথা বলবেন না।
খ । রুটিন মেনে চলা এবং স্বাভাবিকতা বজায় রাখা
* নিয়মিত রুটিন অনুসরণ: একটি সুসংগঠিত এবং অনুমানযোগ্য রুটিন অনুসরণ করা শিশুদের জন্য উপকারী। খাবারের সময়, ঘুমানোর সময়, পড়াশোনার সময় এবং খেলার সময় নির্দিষ্ট রাখার চেষ্টা করুন। এটি তাদের জীবনে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
* স্বাভাবিক কাজ করা: শিশুদের সাথে এমন “স্বাভাবিক” কাজ করুন যা মানসিক আঘাতের সাথে সম্পর্কিত নয়। যেমন – একসঙ্গে বই পড়া, খেলাধুলা করা, সিনেমা দেখা বা পার্কে ঘুরতে যাওয়া।
* ঘুম নিশ্চিত করা: শিশুদের পর্যাপ্ত ঘুমের সময় নিশ্চিত করুন এবং রাত জাগা বা সামাজিক মাধ্যমে ভীতিকর ভিডিও দেখা থেকে বিরত রাখুন।
গ । খেলাধুলা এবং সৃজনশীলতা
* খেলাধুলায় উৎসাহ: খেলাধুলা ও ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং হিলিং প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেসব খেলাধুলা উভয় হাত ও পায়ের সমন্বিত নড়াচড়া প্রয়োজন, সেগুলো ট্রমার “আটকে থাকা” অনুভূতি থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করতে পারে।
* সৃজনশীল কাজ: ছবি অঁাকা, ক্লে বা প্লে-ডোহ দিয়ে কিছু তৈরি করা, গল্প বলা বা গল্প লেখা শিশুদের অনুভূতি প্রকাশে সাহায্য করে। চরিত্রের মাধ্যমে গল্প বলা বা মেক-বিলিভ খেলা তাদের মানসিক স্থান দিতে পারে।
* লক্ষ্য নির্ধারণ: ছোট ছোট বাস্তবধর্মী লক্ষ্য নির্ধারণ করে সেগুলো অর্জনে উৎসাহিত করা যেতে পারে।
অন্যান্য সহায়তা
* বিশেষজ্ঞের সাহায্য: যদি শিশুর আচরণে সমস্যা, ঘুমের সমস্যা, খিটখিটে মেজাজ বা ট্রমার লক্ষণ দেখা যায়, তবে দেরি না করে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। প্রয়োজন হলে কাউন্সিলিং বা অন্যান্য বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
* সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ: শিশুদের অতিরিক্ত সংবাদমাধ্যম বা সামাজিক মাধ্যমে ভীতিকর খবর দেখা থেকে বিরত রাখুন।
* ছোট অবদান রাখা: যদি সুযোগ থাকে এবং ঝুঁকি না থাকে, তবে আহত বা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রার্থনা করা, অর্থ সহায়তা বা অন্য কোনো কার্যকর উদ্যোগে শিশুর অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করুন। এটি তাদের নিজেদের কিছুটা নিয়ন্ত্রণ বোধ করতে সাহায্য করে।
শিশুর হিলিং প্রক্রিয়াটি ধীর হতে পারে, তাই ধৈর্য ও ভালোবাসা দিয়ে তাদের পাশে থাকা খুবই জরুরি।
রাশেদা আতিক রোজী, ইন্সট্রাক্টর, উপজেলা প্রাইমারি এডুকেশন ট্রেনিং সেন্টার (টচঊঞঈ), হাজীগঞ্জ, চঁাদপুর।