প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫২
‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে এ জীবন পূর্ণ করো’
সন্তোষ দাস মনা
স্বার্থের জন্যে নাটক করতে পারি না-- এটুকুই আমার পথ চলার বৈশিষ্ট্য। আমি যা নই, তা আমি অবলীলাক্রমে
স্বীকার করতে ভালোবাসি।
মানুষের কাছে, বিশেষ করে বন্ধু বা আত্মীয়ের কাছে আমার প্রয়োজন থাকবে এটা স্বাভাবিক। মানুষ মাত্রই মানুষের কাছে প্রয়োজন পড়ে, তবে নিজস্ব আকৃতি নিয়ে বাঁচতে চাই, তাহলেই তো আমি আমাকে আমার মতো করে গড়ে তুলতে পারলাম।
তুষ্ট হওয়া আর ভ্রষ্ট হওয়া নৈতিকতা আর অনৈতিকতার মাপকাঠি। তুষ্ট হতে পারলে সুখী হওয়া অনেক সহজ।
আমরা সুখ চাই আকাশচুম্বী! কিন্তু এটা যে সম্ভব নয়, এটা বোঝার প্রয়োজন আছে।
নির্দোষ মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন!
তবে নির্মোহ মানুষ আছে। একটা সময় মানুষের যেমন সবকিছুর প্রয়োজন পড়ে, ঠিক আরেকটা সময় তার ঈশ্বরের নাম ছাড়া অন্য কিছুর আর প্রয়োজন পড়ে না।
ধরেন, আপনার সবকিছু আছে, তবুও আপনি হ্যাপী নন, এটা আপনার কৃত কর্মের ফল। প্রত্যেক মানুষকে তার কর্মফল ভোগ করতে হবে, এই সত্যাটা প্রতিটি ধর্মগ্রন্থে স্পষ্টভাবে উল্লেখিত।
আমি যে ব্যথা পাই এটা আমি কাউকে বলি না, আমার যে কষ্ট আছে, সেটাও আমি কাউকে বলি না, আর তা ছাড়া সে রকম কোনো মানুষও নেই, যে আমার কষ্ট এবং দুঃখের ভাগীদার হবে।
যে একা থাকতে জানে, সে কোনো না কোনো ভাবে বিস্ময়কর মানুষ! তার হয়তো ভুল আছে, কিন্তু জীবন থেকে নেয়া তার শিক্ষাটা পথের পাথেয়।
আশা নিয়ে মানুষ বাঁচে, লোভ নিয়ে বাঁচতে নেই, যে লোভী তার চাওয়া আকাশচুম্বী!
জীবনে ঠকতে ঠকতে কখন যে নিজের কাছে নিজে পারস্পরিক সম্পর্ক নিশ্ছিদ্র করছি,
বলতে পারবো না।
আমার কিছু নেই, তারপরও মুখে হাসি আছে, এটাই আমার বেঁচে থাকার প্রেরণা ও আনন্দ।
মানুষ মানুষকে ভালোবাসবে, মানুষ মানুষকে সম্মান করবে, এটা দেখার বড়ো ইচ্ছা আমার।।
অনেকে হয়তো বলবেন, আমি কোনো পরহেজগার মানুষ! না, আমি অতি সাধারণ।
সাধারণ হতে গেলে সাধারণের সাথে মিশতে হয়, হামবড়া ভাব নিয়ে আর যাই করেন, মানুষের সাথে মিশতে পারবেন না।
যাকে ভালোবাসবেন, তার দোষ খোঁজা বন্ধ করে দিন, দোষের ঊর্ধ্বে আমরা কেউ নই।
'অর্থই সকল অনর্থের মূল' কথাটা মিছে নয়। আমরা যতো কিছু ফেস করি, তার মূলে হলো টাকা।
এ প্রসঙ্গে ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলছেন,
'টাকা মাটি, মাটি টাকা '। এই কথাটা দিয়ে যে যেইটা পারেন বুইঝা নিয়েন।
হিংসা প্রতিহিংসা দেমাগ এগুলো জীবনের ভার! সৃষ্টিকর্তা এগুলো নিতে পারেন না।
পরিশুদ্ধ হতে গেলে অহংকারী হতে হবে, গীবতকারী হতে হবে, এটা সুন্দর জীবন কাঠামোর মধ্যে যায় না। বেঁচে থাকার জন্যে টাকার প্রয়োজন আছে, কিন্তু মানুষ হওয়ার জন্যে তার চেয়েও বেশি কিছুর প্রয়োজন।আরেকটা কথা, সবসময় ভালোবাসা পাবার জন্যে কাতর থাকবেন,
ভালোবাসা পথেঘাটে বিক্রি হয় না। যে ভালোবাসতে জানে, সে ঠকবাজ না স্বার্থপর না,
এখন চারিদিকে যা দেখছি, অবাক করার মতো কাণ্ডকারখানা! বিষ দিয়ে বিষ ক্ষয় করার ব্যর্থ চেষ্টা!
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের দু-দিনের অতিথি আমরা, ধর্ম স্বীকৃত পরিত্যাজ্য জীবন প্রণালী আমাদের পছন্দ! এটা অতীব দুঃখের এবং মৌলিক অবক্ষয় ছাড়া আর কিছুই নয়।
মানুষকে শ্বাপদ বলা হয়, জানোয়ার বলা হয়! কিন্তু এই কথাটা সমস্বরে গাওয়া হয় না--'মানুষ মানুষের জন্য/ জীবন জীবনের জন্যে '।
এই পরিপেক্ষিতে,
একটা দু-লাইনের কবিতা আওড়াই--
'অর্ধেক দোষ নিজের দেখ,
অর্ধেক অন্য কারো--
ধাতব বস্তুর ন্যায়
স্বমূর্তি গড়ো,
তুমি-ই হবা বড়ো'।।
অতএব, বড়ো তাকেই বলে, যে নিজেকে সংশোধন করতে পেরেছেন। যুদ্ধে যাওয়ার আগে যুদ্ধের সময়টাকে বেছে নিন।
আমরা কেউই পৃথিবীতে থাকবো না, থাকবেন অগ্রজরা,
যারা ছিলেন সাম্য সম্প্রীতির, জ্ঞানের প্রথিতযশা প্রদীপ। তারাই তো নক্ষত্র! তারাই তো দিবাকর রশ্মি!
আমার ভালো লাগা
আমার কাছে বহু মূল্যবান, আমার খারাপ লাগা কারো কাছে দুপয়সার দাম নেই।
আমার প্রিয়, জগৎ বিখ্যাত কবিগুরু
রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরের অন্তর ছুঁয়ে যায় এমন একটা গান দিয়ে
সবার মঙ্গল কামনা করবো ----
"আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে
এ জীবন পূর্ণ করো''
সবাই ভালো থাকবেন, নমস্কার।