প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২১, ১৭:২৪
খাল তুমি কার?
কচুয়া উপজেলায় ছোট-বড় সবমিলিয়ে রয়েছে শতাধিক খাল। কচুরিপানা জটের কারণে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি ফসল উৎপাদনেও ব্যহত হচ্ছে। কোথাও কোথাও কচুরিপানার জটের এমন অবস্থা, অনায়াসে এর উপর দিয়ে হেঁটে খালের এ পাড় থেকে ওপাড়ে যাওয়া যায়। সবচেয়ে বড় সমস্যা নষ্ট ও দূষিত পানির কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ সরকার প্রতি বছর দেশীয় মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে খালসহ উন্মুক্ত জলাশয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার মাছের পোনা অবমুক্ত করে আসছে। পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ ও খালপাড়ের মানুষের বর্জ্য ফেলার কারণে খালের পানি দূষিত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ আর বাড়ছে মশার উপদ্রব। অর্ধশতাধিক দৈর্ঘ্যরে ও ৭০/৭৫ফুট প্রশস্থের কচুয়ার প্রধান খালটি মতলবের ধনাগোদা ও হাজীগঞ্জের ডাকাতিয়া নদীর সাথে সংযুক্ত। খাল পাড়ের বসবাসকারী মানুষগুলো এ দুর্গন্ধময় পানি ও মশার উপদ্রব নিয়ে বছরের পর বছর জীবন যাপন করে আসছে অতি কষ্টে। তাদের এ সমস্যা সমাধানে যেন কেউ নেই এমনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভোক্তভূগীরা।
|আরো খবর
অপরদিকে ভূমি কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণে স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে চলে যচ্ছে অধিকাংশ খাল গুলো। এ যেন দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে ভূমিখেকু দখলদাররা। এক জনের দেখাদেখি অন্য আরেক জন খাল ভরাট করে ভবন নির্মানের করে জনবসতি গড়ে তোলার পাশাপাশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছে। দখলদারদের মধ্যে অনেকে নিজেকে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা দাবি করে আসছে বলেও জানা যায়।
উপজেলা পরিসংখ্যান ও তথ্য অফিসে মোট খালের দৈর্ঘ্যরে পরিমাণের সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও ইউনিয়ন কার্যালয় হতে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে কচুয়ায় খালের দৈর্ঘ্যরে পরিমাণ প্রায় ২’শ কিলোমিটার। কচুয়া-হাজীগঞ্জ ভায়া পরানপুর, সাচার-হাজীগঞ্জ ভায়া কচুয়া, সাচার-নায়েরগাঁ ভায়া বড়দৈল, কচুয়া-রঘুনাথপুুর, কচুয়া-কাপিলা বাড়ি, কচুয়া-নলুয়া ভায়া মনোহরপুর, সফিবাদ-আলীয়ারা ভায়া ভূইয়ারা, উজানী-বাখৈইয়া খাল, সাপলোলা ও সুন্দরী খাল সহ উপজেলার বেশকিছু খালের অংশ স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রভাব খাটিয়ে দখল করে ইমারত নির্মাণ করে ভোগ দখল করে আসছে। আবার কেও কেও বাঁধ নির্মাণ করে বাড়িতে আসা যাওয়ার পথ তৈরি করেছে। আবার কোথাও কোথাও খাল ভরাট করে দোকান পাট নির্মাণ করে ব্যবসায় বাণিজ্য পরিচালনা করে আসছে। এতে খালের পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতি বছর বৃষ্টি মৌসুমে মাঠে মাঠে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতি হচ্ছে। এ যেন দেখার কেও নেই।
এদিকে খাল ভরাট করে দখল করে নেওয়ায় সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন সময় সামাজিক সংগঠনের নেতৃত্বে সভা সমাবেশ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কতৃপক্ষের নিকট দাবী জানানো হয়। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। কিন্তু দখল করে নেওয়া খাল মুক্ত করতে দখলকারী প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আজও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে স্থানীয়রা জানায়।
এ ব্যাপারে কচুয়া উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সুলাতানা খানম বলেন, খালের কচুরিপানা পরিস্কারে উপজেলা পরিষদের কোন বরাদ্ধ না থাকায় এ মূহুর্তে কচুরিপানা পরিষ্কার করা সম্ভব হচ্ছে না।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাসুদুল হাসান বলেন, মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষ্যে এ বছর কচুয়ার বিভিন্ন জলাশয়ে ২৯০ কেজি পোনা মাছ অবমুক্ত করা হয়েছে। তবে খাল অবমুক্ত করণ, দূষণমুক্ত ও কচুরিপানা পরিষ্কারে আমাদের অধিদপ্তরে কোন প্রকল্প নেই।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আশেকুর রহমান বলেন, আমার বিভাগে খাল পরিষ্কারের কোন বরাদ্ধ নেই। এবিষয়ে উপজেলা বিএডিসি কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে দেখতে পারেন।
উপজেলা বিএডিসি কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, খালের কচুরিপানা পরিষ্কার এ মূহুর্তে আমাদের কোন প্রকল্প নেই। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করবো।
এ বিষয়ে কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপায়ন দাস শুভ জানান, সরকারি খাল দখলের কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করবো।