প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২১, ১৯:০৭
কাঁশারা সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসায় নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ
ফরিদগঞ্জ উপজেলার কাঁশারা সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার ৩টি পদে নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতিসহ ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠছে। এ ব্যাপারে শনিবার (২৬ জুন) নিয়োগ বাতিলের দাবিতে মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের মহাপরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন, চাঁদপুর জেলা প্রশাসক, ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগপত্র দাখিল করেন অত্র মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য মোঃ বিল্লাল হোসেন। অভিযোগ দায়েরের পর থেকে নড়েচড়ে বসেছে মাদ্রাসার সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম পাটওয়ারীসহ নিয়োগ কমিটির অন্য সহযোগীরা। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল।
|আরো খবর
তাদের দাবি, গত ২৫ জুন কাঁশারা সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, পিয়ন, আয়া এ ৩টি পদে জনবল নিয়োগের পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পাঁচশত/দুইশত টাকা ব্যাংক ড্রাফট-এর মাধ্যমে আবেদন আহ্বান করা হলেও অত্র মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শহিদুল ইসলাম পাটওয়ারী ও ভারপ্রাপ্ত সুপার আব্দুল করিমের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে নিয়োগবিধি উপেক্ষা করে নানা অসাধু উপায় অবলম্বন করেন। আর স্থানীয়ভাবে সুযোগ থাকার পরও পরীক্ষা নেয়া হয়েছে অফিস বন্ধের দিন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে।
অভিযোগকারী বিল্লাল হোসেন বলেন, মাদ্রাসার সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম পাটওয়ারী কমিটির অন্যান্য সদস্যদের তোয়াক্কা না করে নিয়মবহির্ভূতভাবে ইন্টারভিউ বোর্ড গঠন করেন। যেমন মাওলানা মোঃ মোশারফ হোসেন আরবি প্রভাষক মান্দারি আলিম মাদ্রাসা চাঁদপুর সদর চাঁদপুর। তিনি নবম গ্রেডের একজন শিক্ষক। কিন্তু তিনি অন্য উপজেলার নবম গ্রেডের একজন আরবি শিক্ষক হয়ে কীভাবে সপ্তম গ্রেডের একজন সুপারকে প্রশ্ন করার দায়িত্ব দেয়া হয় এবং নিয়োগপ্রাপ্তদেরকে পরীক্ষার আগ সময়ে প্রশ্ন দেয়া হলেও তাদের কাছ থেকে উত্তরপত্র নেয়া হয় সবার পরে এবং ওইদিন জুমার নামাজের দোহাই দিয়ে তড়িঘড়ি করে ৩৫/৪০ মিনিটের মধ্যেই পরীক্ষা শেষ করে ফলাফল জানিয়ে দেন। এতে উপযুক্ত কয়েকজন প্রার্থী থাকা সত্বেও সাহাপুর দাখিল মাদ্রাসার সহ-সুপার মাওঃ শাহ আলমকে সুপার এবং মাদ্রাসার সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম পাটওয়ারীর স্ত্রী ফারজানাকে আয়া এবং সভাপতি শহিদুল ইসলামের অন্য একজন আপন লোক সালমান পাটওয়ারীকে পিয়ন পদে নিয়োগে নির্বাচিত করা হয়। যারা প্রত্যেকে সভাপতির এবং ভারপ্রাপ্ত সুপার আঃ করিমের ঘনিষ্ঠ লোক।
এছাড়া আরও জানা যায়, বর্তমানে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সুপার মাওলানা শাহআলম একই উপজেলার সাহাপুর দাখিল মাদ্রাসার নিয়োগপ্রাপ্ত সহ-সুপার হলেও তিনি সেখানে অধ্যাবদি কোনোরকম রিজাইন না দিয়েই কাঁশারা সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসায় যোগদান করেছেন এবং অফিসের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।কাঁশারা সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার (ভারপ্রাপ্ত) সুপার আঃ করিমের সাথে নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, এখানে অনিয়মের কিছুই হয়নি। যা কিছু করা হয়েছে নিয়োগ বোর্ডের সিদ্ধান্তেই করা হয়েছে। ‘সুপার শাহআলম চাকরি পাইতে ৮ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেন করেছেন’ এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি তা বলতে পারবো না, তবে আমি সেখান থেকে এক কাপ চাও খাই না।
বিষয়গুলো নিয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত নতুন সুপার মাওলানা শাহআলমের সাথে কথা হলে ঘুষ এবং পরীক্ষার অনিয়মের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি সবকিছু নিয়োগ বোর্ডের উপর চাপিয়ে দিয়ে বলেন, এসবের বিষয়ে আমি কোনো উত্তর দিতে রাজি নই। সবকিছুর বিষয়ে নিয়োগ বোর্ড জানে। তিনি স্বীকার করে বলেন, তিনি এখনো সাহাপুর দাখিল মাদ্রাসার সহ-সুপার এবং তিনি কাঁশারা সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসায় যোগদান করে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান।
সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মাদ্রাসার প্রতিবেশী নজরুল ইসলাম পাটওয়ারী, অত্র মাদ্রাসার ডোনার সদস্য ওবায়েদুর রহমান মিয়াজী, এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাসহ আরও ক’জন সুশীল সমাজের সাথে নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে কথা হলে তারা বলেন, শুনেছি নিয়োগে বিভিন্ন রকম অনিয়ম হয়েছে এবং এই নিয়োগে টাকা-পয়সার বিনিময়ে হয়েছে শুনেছি। আগামীতে যেনো এই নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে কোনোরকম যায়-ঝামেলা না হয় সেজন্যে তারা পরিপূর্ণ তদন্তসাপেক্ষে এর সমাধান চান। অন্যদিকে ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্য শিক্ষক প্রতিনিধি মোশাররফ হোসেনের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে তিনি বলেন, সুপার নিয়োগে ৮ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে এটা এখন এলাকায় শুনতেছি।
ইন্টারভিউ বোর্ডে উপস্থিত মান্দারী সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার আরবি প্রভাষক মাওঃ মোশাররফ হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি ইন্টারভিউ বোর্ডের কোনো সদস্য ছিলাম না। কাঁশারা ছিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি শহিদুল ইসলাম পাটওয়ারী আমাকে বারবার অনুরোধ করে ও অন্যাদের সম্মতিতে আমাকে ইন্টারভিউ বোর্ডে রেখেছেন বলে তিনি জানান।
নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে সভাপতি শহিদুল ইসলাম পাটওয়ারী এই প্রতিনিধিকে বলেন, নিয়ম মেনে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হযছে। তিনি রাজনৈতিক রোষানলের শিকার। মাদ্রাসার উন্নয়ন এবং ভালো ছাড়া কখনও তিনি খারাপ দিক চিন্তা করেন না। তিনি আগামীতে একজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী। তাকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্যেই তার নামে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ তুলেছেন বলে তিনি জানান।
এদিকে ইন্টারভিউ বোর্ডে অন্য উপজেলার শিক্ষক নিম্ন কোডধারী মাওঃ মোশাররফ হোসেনকে রাখার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আলী আশ্রাফি রেজাকে বক্তব্য নেওয়ার জন্যে একাধিকবার ফোন দিয়েও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ গিয়াস উদ্দিন পাটোয়রীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মাদ্রাসা বোর্ড এসব দায়িত্ব জেলা শিক্ষা অফিসারের হাত থেকে নিয়ে নিয়েছে। এ বিষয় উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট জানতে পারেন।এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহম্মদ শফিকুর রহমান জানান, কাঁশারা মাদ্রাসায় দুর্নীতি হয়েছে। ৭নং পাইকপাড়া ইউনয়নের এমপি প্রতিনিধি শহিদকে ইতোমধ্যে বাদ দেয়া হয়েছে। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কীভাবে জামাতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করতে সহযোগিতা করলেন? আমার ডিউ লেটার প্রদানকৃত একটি প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্ত করা হয়নি। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীও তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হোক বলে তিনি জানান।