মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:০২

শ্রীমঙ্গলে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো বইপড়া প্রতিগোগিতা

শ্রীমঙ্গলে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো বইপড়া প্রতিগোগিতা
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে তিন মাসব্যাপী ব্যতিক্রমী এক আয়োজনের মধ্য দিয়ে ২১ হাজার শিক্ষার্থীকে পড়ানো হয়েছে ৫২টি বই। আর পড়া শেষে শিক্ষার্থীরা পড়ায় কতোটুকু মনেযোগী ছিলো তা যাচাই করতে নেওয়া হয় পরীক্ষা। যেখানে ৫০ জনকে দেয়া হয়েছে পুরস্কার। ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগটি হতে পারে সারা দেশের জন্যে অনুকরণীয়।

রোববার (১৯ অক্টোবর ২০২৫) জেলা পরিষদ অডিটোরিয়মে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা ও বই পড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজিত বইপড়া প্রতিযোগিতা ২০২৫।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইসলাম উদ্দিনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আলম সিদ্দিকি, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য মো. ইয়াকুব আলী, শ্রীমঙ্গল ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অয়ন চৌধুরী, সেন্ট মার্থাস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিস্টার সংগীতা গমেজ, বইপড়া উৎসবের পরিচালক শ্রীমঙ্গল আবৃত্তি উৎসবের সভাপতি ও অগ্রণী ব্যাংকের ম্যানেজার দেবাশীষ দাশ, শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের প্রভাষক সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।

মুকুল, ফুল ও ফল এই তিন বিভাগে অংশ নেয়া প্রতিযোগীদের মধ্যে ৫০জনকে বিজয়ী ঘোষণা করে পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইসলাম উদ্দিন জানান, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি করতে বিগত ১১ আগস্ট থেকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৩৬টি বিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয় এই বই পড়া প্রতিয়োগিতা ২০২৫। পুরো কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে শ্রীমঙ্গল আবৃত্তি উৎসব ও উত্তরণ পাঠচক্র। তিনি জানান, মোট অংশগ্রহণকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিলো ৩৬ টি, যার মধ্যে চারটি কলেজ, চারটি স্কুল এন্ড কলেজ, পাঁচটি মাদ্রাসা ও ২৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

তিনি বলেন, বর্তমান মোবাইল ফোনে আসক্ত ছাত্র সমাজের মধ্যে এ কার‌্যক্রমে বই পড়ার প্রতি ব্যাপক উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে। আর এই অনুষ্ঠানের সফলতাই এটি।

বইপড়া উৎসবের পরিচালক শ্রীমঙ্গল আবৃত্তি উৎসবের সভাপতি ও অগ্রণী ব্যাংকের ম্যানেজার দেবাশীষ দাশ জানান, এই অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করতে তাদেরকে ৩ মাস প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে। কিন্তু পরিশ্রমের সার্থকতা এসেছে শিক্ষার্থীদের বই পড়ার প্রতি উৎসাহ দেখে। তিনি বলেন, এই বই পড়া প্রতিযোগিতা তিনটি পর্বে ভাগ করা ছিলো। প্রথম পর্বের নাম মুকুল, দ্বিতীয় পর্বের নাম ফুল ও চূড়ান্ত পর্বের নাম ফল ।

এই তিন ধাপে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি ক বিভাগ, ৯ম থেকে ১০ম শ্রেণি খ বিভাগ এবং একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী ছিলো গ বিভাগ। এই তিন বিভাগে প্রতিযোগিতা বিভক্ত ছিল। প্রথম ধাপ মুকুলে ৩৬ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিশ হাজার একুশ জন ছাত্র-ছাত্রী ৬২ টি বইয়ের ওপর প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।

তিনি বলেন, বইগুলো বাছাই করে দেয়া হয়। যার মধ্যে ছিলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলেবেলা, সৈয়দ মুজতবা আলীর চাচা কাহিনি, হ্যারিয়েট বিচার স্টু-এর আংকেল টমস কেবিন, অদ্বৈত মল্লবর্মণের তিতাস একটি নদীর নাম, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবি, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কৃষ্ণকান্তের উইল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাবুলিওয়ালা, আশাপূর্ণা দেবীর সুবর্ণলতা, বিমল মিত্রের কড়ি দিয়ে কিনলাম, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নারীর মূল্য, বেগম রোকেয়ার মতিচুর, সেলিনা হোসেনের পোকামাকড়ের ঘরবসতি, কিং লিয়ারের শেক্সপিয়ার, পাওলো কোয়েলহোর দ্যা আল কেমিস্ট, সুকুমার রায়ের হ-য-ব-র-ল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেনাপাওনা,

হুমায়ুন আহমেদের নন্দিত নরকে, প্রমথ চৌধুরীর বই পড়া, সৈয়দ মুজতবা আলীর দেশে বিদেশে, ডা. লুৎফর রহমানের উন্নত জীবন, আবু ইসহাকের সূর্য দীঘল বাড়ি, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের খোয়াবনামা, নিরঞ্জন দের শাহ আব্দুল করিম, সুকান্ত ভট্টাচার্যের ছাড়পত্র, হুমায়ুন আজাদের কত নদী সরোবর, হুমায়ুন আজাদের লাল নীল দীপাবলি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছুটি, সমরেশ মজুমদারের গর্ভধারিণী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হৈমন্তী, মাইকেল মধুসূদন দত্তের একেই বলে সভ্যতা, জসীমউদ্দীনের বাঙালির হাসির গল্প, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লালু , সমরেশ মজুমদারের গর্ভধারিণী, সৈয়দ শামসুল হকের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, নীহার রঞ্জন সরকারের ছোটদের রাজনীতি ও অর্থনীতি, জসীমউদ্দীনের ডালিম কুমার, মুনীর চৌধুরীর রক্তাক্ত প্রান্তর, জহির রায়হানের বরফ গলা নদী, শেক্সপিয়ারের মার্চেন্ট অফ ভেনিস, মোস্তাক আহমেদের তারুণ্যের বিজয়, মাহিন মাহমুদের কাল থেকে ভালো হয়ে যাব, জহির রায়হানের হাজার বছর ধরে, কাজী নজরুল ইসলামের মরুভাস্কর, মীর মশাররফ হোসেনের বিষাদ সিন্ধু ও মাওলানা মো. শামসুল হকের চার ইমামের জীবন কাহিনী।

প্রথম ধাপ এ ১০ মার্কের ৫ টি এক কথায় প্রশ্নের উত্তর ও ১ টি রচনামূলক প্রশ্নের উত্তর নিয়ে ২০ মার্কের ওপরে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ পরীক্ষায় ৯৮২ জন প্রতিযোগী দ্বিতীয় ধাপের জন্যে নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় ধাপের জন্যে আবারো শিক্ষার্থীদের বই দেয়া হয়। সেখান থেকে সেপ্টেম্বর মাসে নেয়া হয় প্রতিযোগিতা ফুল-এর পরীক্ষা। এখানে নির্বাচন করা হয় ৩৬৭ জনকে। যেখানে পড়ার জন্যে বই দেয়া হয় ২৯টি। চূড়ান্ত পর্বে প্রতিযোগিতা 'ফলে' প্রতি বিভোগে ১০ জন করে বাছাই করা হয়।

বই পড়া উৎসবের কর্মযজ্ঞে অংশ নেয়া শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের প্রভাষক ও উত্তরণ পাঠ চক্রের কর্ণধার সাইফুল ইসলাম বলেন, ব্যতিক্রমী একটি আয়োজনে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে পেরে তিনি খুশি। তিনি বলেন, এই জাতীয় কার্যক্রম কেন্দ্রীয়ভাবে যদি করা যায় তাহলে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার একটা জোয়ার সৃষ্টি করা যাবে।

এই প্রতিযোগিতায় প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিষ্ঠান প্রধানের বাইরেও একজন করে শিক্ষক ফোকাল পার্সন হিসেবে প্রতিযোগিতা সমন্বয়ে ভূমিকা রাখেন। সকল ফোকাল পারসন দেরকে এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানদেরকেও ধন্যবাদ পত্র ও পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরো প্রতিযোগিতায় সমন্বয় সহযোগী হিসেবে সমন্বয়ের দায়িত্ব ছিলো শ্রীমঙ্গল আবৃত্তি উৎসব। প্রধান সমন্বয়ক সহযোগী হিসেবে ভূমিকা পালন করেন শ্রীমঙ্গল আবৃত্তি উৎসবের সভাপতি ও নির্বাহী পরিচালক দেবাশীষ দাশ। এছাড়াও সমন্বয় সহযোগী হিসেবে ছিল লিয়েন বণিক শ্রুতি ও অপরাজিতা বর্ধন অপি। পুরো প্রতিযোগিতায় পাঠ সহযোগী হিসেবে ভূমিকা পালন করে শ্রীমঙ্গলে কলেজ রোডের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান উত্তরণ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়