রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩০ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:১৩

গুলিতে রিজভীর মাথার খুলি উড়ে যায়, মায়ের অগোচরে যেত জুলাই আন্দোলনে

নোয়াখালী প্রতিনিধি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এক অদম্য সাহসের নাম ছিলো রিজভী। তার পুরো নাম মাহমুদুল হাসান। এই তরুণ বীর শহীদ সবার কাছে রিজভী নামেই পরিচিত। গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। কাঁদতে কাঁদতে সেই ছেলে হারানোর কাহিনী জানালেন মা। নোয়াখালীর মাইজদী শহরের ভাড়া বাসায় গিয়ে কথা হয় তার শোকাহত মা-ভাইয়ের সঙ্গে। মা শোনালেন রিজভী কীভাবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে এতোটা সাহসী হয়ে উঠলো। রিজভী নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের মৌলভী তোফাজ্জল হোসেনের বাড়ির জামাল উদ্দিনের ছেলে।

ছোটকাল থেকে রিজভী ছিলো পরোপকারী। মা ফরিদা ইয়াছমিন গৃহিণী, বাবা জামাল উদ্দিন এনজিও আশা ব্যাংকের ম্যানেজার। দুই ভাই, এক বোনের মধ্যে রিজভী ছিলো সবার বড়।

পরিবারের অনেক আদরের ছিলেন রিজভী। তাকে ঘিরেই ছিলো পরিবারের সকল স্বপ্ন। ওর ওপর ভরসা করেই বেঁচে ছিলেন মা-বাবা। পরিবারের অভাব-অনটন থাকলেও মা-বাবা তার পড়ালেখার জন্যে ছিলেন উন্মুখ। ২০ বছরের তরুণ রিজভী লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রিক্যাল ট্রেড থেকে অষ্টম সেমিস্টার শেষ করে ছিলেন। এরপর তাকে ইন্টার্ন করার জন্যে ঢাকায় পাঠানো হয়। চেয়েছিলেন পড়ালেখা শেষ করে পরিবারের হাল ধরবেন। এর মধ্যে ঢাকাতে শুরু হয় ছাত্র-জনতার আন্দোলন।

রিজভীর মা ফরিদা ইয়াছমিন জানান, বৃহস্পতিবার ১৮ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকার উত্তরা পূর্ব থানার সামনে হাইওয়ে রোড এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে রিজভীর মাথার খুলি উড়ে যায়। মাথার মগজ বের হয়ে রাস্তায় পড়ে। তখন রিজভী রাস্তায় পড়ে কই মাছের মত ছটফট করতে থাকে। ফ্লাইওভারের ওপর থেকে তাকে গুলি করা হয়। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার উত্তরা কিচিন হসপিটালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি রাত ১০টার দিকে মারা যান।

তিনি বলেন, ঢাকায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আন্দোলন শুরু হলে রিজভীকে আমি ফোন দিয়ে সাবধানে থাকতে বলতাম। ফোনে রিজভী আমাকে আশ্বস্ত করে যে, সে কোনো আন্দোলনে যায় না। কিন্তু ছেলে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আমি জানতে পারি আমাদের অগোচরে ছেলে আন্দোলনে যেত।

ফরিদা ইয়াছমিন আরও জানান, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর রিজভীকে তার বন্ধুরা নিয়ে যায় উত্তরা কিচিন হসপিটালে। তাৎক্ষণিক ওই হাসপাতালে পায়নি কোনো চিকিৎসা। এমনকি আমি ছেলের লাশ দেখে হাসপাতালে কান্নাও করতে পারিনি। তৎকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশে অনেকটা গোপনে তার মরদেহ নোয়াখালীতে নিয়ে আসা হয়। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় তার মরদেহ নেওয়া যায়নি হাতিয়ার নিজ বাড়িতে। অনেকটা নীরবে নিভৃতে সমাহিত করা হয় হাতিয়ার হরণী ইউনিয়নের পূর্ব মোহাম্মদপুর গ্রামের নানার বাড়ির কবরস্থানে।

শহীদ রিজভীর ছোট ভাই শাহরিয়ার হাসান রিমন বলেন, দেশের স্বার্থে কখনো যদি প্রয়োজন হয় আমিও যাবো আন্দোলনে। তবুও জুলাই ছাত্র-জনতার বিপ্লব যেন সার্থক হয় এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের পরিবারের।

এ ঘটনায় নিহতের মা উত্তরা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। আসামিরা নানাভাবে পার পেয়ে যাচ্ছে বলে শুনছেন রিজভীর মা। এজন্যে তিনি আল্লার কাছে চাইলেন ছেলে হত্যার বিচার। পরিবারের আক্ষেপ, রিজভীর

জীবনের অধ্যায় শুরু হওয়ার আগেই তার সমাপ্তি ঘটে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়