প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৫, ১৬:৫৮
জনপ্রতিনিধি থেকে সফল খামারি হাজী মোজাম্মেল
কোরবানির জন্যে প্রস্তুত দু শতাধিক গরু মহিষ

ছিলেন জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদ। কেটেছে দীর্ঘকাল প্রবাস জীবন। কিন্তু সেই ছোটবেলা থেকেই পশুপালনের প্রতি তাঁর শখ। শখের বসেই ৪ বছর পূর্বে শুরু করেন গরু পালন। গড়ে তোলেন নিজের ছেলের নামে মোস্তাকিম ডেইরি ফার্ম এন্ড এগ্রো। গরুর বিশুদ্ধ খাবারের জন্যে রয়েছে ১৫ থেকে ১৬ একর জমিতে বিভিন্ন জাতের ঘাসের চাষ। ঘাস পরিবহনের জন্যে ব্যবহার করা হয় ঘোড়ার গাড়ি। বর্তমানে তাঁর বিশাল গরুর খামারে আসন্ন ঈদুল আজহার সময়ে পশু কোরবানির জন্যে দু শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির গরু-মহিষ রয়েছে। যার প্রতিটি গরুর বাজার মূল্য ৯০ হাজার থেকে শুরু করে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত।
|আরো খবর
সফল এ খামারি হলেন, ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা উত্তর ইউনিয়নের ভাটেরহদ গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী মোজাম্মেল। সরেজমিন গেলে খামারের শ্রমিক ইমন হোসেন, আশ্রাফুল ও সিরাজুল ইসলাম বলেন, গরুর জন্যে খাবার সংগ্রহ করতে ঘোড়ার গাড়ি বাহন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। প্রাকৃতিক পরিবেশ, বিশুদ্ধ খাবার পরিবেশন ও আদর যত্নের মিশ্রণে পশু পালন করা হয়। খামারে গরুগুলোকে নিজেদের চাষকৃত ঘাস, খড়, গমের ভুষি, লবণ, খৈল ও ছোলার ভুষি খাওয়ানো হয়।
খামার পরিদর্শনে আগত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও রাজনীতিবিদ মো. বিল্লাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকা হাজী মোজাম্মেল হোসেন এক সময়ে ছিলেন প্রবাসে। সেখান থেকে এসে হয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। সর্বশেষ তিনি কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন হয়েছেন আদর্শ কৃষক। তিনি যেখানেই হাত দেন, সেখানেই বাজিমাত করেন। মোস্তাকিম ডেইরি ফার্ম এন্ড এগ্রো নামে এ খামারটিতে অর্গানিক পদ্ধতিতে গরু পালন করা হয় বলে নিশ্চিত হয়েছি। জনপ্রতিনিধি থেকে সফল উদ্যোক্তা কৃষক ও খামারি হাজী মোজাম্মেল বলেন, জনপ্রতিনিধি যখন ছিলাম, কাজকে এবাদত হিসেবে করার চেষ্টা করেছি। গত ৪ বছর পূর্বে শখের বসে খামারটি শুরু করি। উদ্দেশ্য ছিলো, গরুর খাঁটি দুধ ও আমিষের চাহিদা মেটানো। শুধু ঈদুল আযহায় নয়, সারাবছরই আমার এখানে গরু পাওয়া যায়। সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে তাদের রাখা হয়। প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং পরিবেশ বান্ধব হওয়ায় গরুর খামারে বৈদ্যুতিক পাখা নেই। আমার গরু বিক্রয়ের জন্যে হাটে যেতে হয় না। ক্রেতারা নিজেরা এখানে এসেই দেখে ক্রয় করেন। তিনি ১৭ মণ ওজনের সম্রাটকে দেখিয়ে বলেন, গত তিন বছর ধরে সম্রাটকে এই খামারেই লালন পালন করেছি। এ বছর ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিক্রির জন্যে প্রস্তুত রয়েছে। এ রকম আরো অনেক গরুই রয়েছে এই খামারে। প্রতিদিন তাদের গোসল দেয়া থেকে শুরু করে ময়লা আবর্জনা সরানোর জন্যে নিয়মিত লোকজন কাজ করছেন। মাঠ থেকে আবাদকৃত ঘাস কেটে গোড়ার গাড়ি করে ফার্মে নিয়ে আসা হয়। এখানে মেশিনের মাধ্যমে কাটা হয় ঘাস। এখানে ১৫জন যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। আমার এখানে গরু বাছুরের জন্ম থেকে বিক্রি করা পর্যন্ত লালন পালন করা হয়। এসব গরুকে কোনো প্রকার ফিড খাওয়ানো হয় না।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সুমন ভৌমিক বলেন, জানতে পেরেছি, হাজী মোজাম্মেল হোসেন আগে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তবে এখন তাকে একজন সফল খামারি হিসেবে জানি। প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে তাঁকে খামার পরিদর্শন ও পরামর্শ প্রদান করা হয়। তাঁকে দেখে উপজেলার অনেক বেকার যুবকে গরুর খামার করতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। যাতে করে এই উপজেলায় অচিরেই কোরবানির গরুর ঘাটতি মিটে যাবে।