প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৫, ১৭:৫৬
পথে প্রান্তরে : পর্ব-৩
হাঁড়ি পাতিল নিয়েই কেটে গেলো সুভাষ পালের ৫০ বছর

শাহরাস্তি পৌর এলাকার নিজ মেহের পাল বাড়ির বাসিন্দা সুভাষ পাল। জন্মের পর থেকেই মাটির সাথে যার নিবিড় সম্পর্ক। ছোটবেলা থেকেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তৈরি করতেন হাঁড়ি পাতিল। উপজেলার একমাত্র মৃৎশিল্পের উৎপাদন হতো নিজ মেহের পাল বাড়িতে। সময়ের সাথে সাথে মৃৎশিল্পের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলেও এ ব্যবসা আঁকড়ে ধরে আছেন সুভাষ পাল। জানালেন ৫০ বছরের নানান কাহিনী। জীবনের শুরুর দিকে তিনি কাঁধে করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিক্রি করতেন মাটির তৈরি জিনিসপত্র। ধান, চাল এবং টাকার বিনিময়ে মানুষের হাতে তুলে দিতেন তাদের পছন্দের জিনিস।
তিনি জানান, মাটির জিনিস তৈরি করতে মানুষের বাড়িতে গিয়ে বাঁশঝাড়ের অবশিষ্ট অংশ সংগ্রহ করতেন। একটি সময়ে ভ্যানে করে ফেরি করেছেন তিনি। এরপর কচুয়া উপজেলার রহিমানগর বাজারে মাটির জিনিসপত্রের দোকান দিয়েছিলেন। সেখান থেকে চলে এসে ২৫ বছর ধরে তিনি শাহরাস্তি উপজেলার ঠাকুর বাজারে ব্যবসা করছেন। হাটবারের দিন ১২শ' থেকে ১৫শ' টাকা বিক্রি হয়। অন্যদিন দু-চারশ' টাকা বিক্রি করতে কষ্ট হয়। জীবনের শেষ বয়সে এসে সময় পার করছেন তিনি। দুঃখের সাথে জানান, বর্তমান সময়ের ছেলেরা এই কাজটি করতে চায় না। তার একমাত্র ছেলে সঞ্জয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকে, বাবা-মাকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করে।
শাহরাস্তিতে মৃৎশিল্পের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন কুমিল্লার বিজয়পুর ও হাজীগঞ্জ বাজার থেকে মালামাল সংগ্রহ করেন। মানুষ আর আগের মতো মাটির জিনিসপত্র ব্যবহার করে না। সখের বসে কেউ কেউ আসেন। শাহরাস্তির পালপাড়া ছিলো এক সময় মৃৎশিল্পের জন্যে বিখ্যাত। বর্তমানে পাল পাড়া থেকে এই শিল্প হারিয়ে গেছে। যারা এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলো তারা এখন অন্য পেশায় জড়িত হয়েছেন।
সুভাষ পাল বলেন, আমি চলে গেলে শাহরাস্তি থেকে এই শিল্প হারিয়ে যাবে। এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।