প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:০১
হারিয়ে যাওয়া খাল পুনরুদ্ধারে নেমেছে এলাকাবাসী
বর্ষার সময়ে বাড়িসহ সর্বত্র পানি, আবার শুষ্ক মৌসুমে পানি শূন্যতার কারণে সেচে সমস্যা। এসব কিছুর মূলে একটি খাল। ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার ৯নং ওয়ার্ডের চরকুমিরা গ্রামের চরকুমিরা খাল নামে খ্যাত খালটির অস্তিত্ব সংকটে থাকায় এই সমস্যার উৎপত্তি।
গেলো বর্ষায় পুরো এলাকার পানি সরতে না পারায় ৮০ ভাগ এলাকা পানির নিচে থাকে। সমস্যার মূলে থাকা চরের দখলদারিত্বের অবসানের পর এলাকাবাসী খাল পুনরুদ্ধারে নেমেছে।
এ রকম সংবাদ পেয়ে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার লোকজন দল বেঁধে খালের বাঁধ কাটছেন। এরই মধ্যে সত্তরোর্ধ্ব বয়সী মনু মিয়া, শাহাদাত হোসেন, ষাটোর্ধ্ব মজিবুর রহমান, সাবেক সেনা সদস্য জব্বার মিজি বিশাল চরের মধ্যে ধানের ক্ষেতের একটি অংশ দেখিয়ে বলেন, এখানে এক সময়ে খাল ছিল। এই খাল দিয়ে আমাদের গ্রামসহ আশপাশের ক'টি গ্রামের পানি বর্ষার সময়ে নদীতে নেমে যেতো। এছাড়া ধানের মৌসুমেও সেচের কাজে পানি ব্যবহার করার জন্যে এই খাল ছিলো গুরুত্বপূর্ণ । কিন্তু গত দুদশক ধরে মাছ চাষ করতে যেয়ে খালের গুরুত্বপূর্ণ অংশ জমির সাথে একীভূত করে ফেলা হয়েছে। এখন কেউ আসলেও খালের এই অংশের অস্তিত্ব খুঁজে পাবে না। এছাড়া পুরো খালটির বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ বর্ষায় পানি সরতে না পারায় এই এলাকার ৮০ ভাগ এলাকা পানির নিচে ছিলো। আমরা এই দুরবস্থা থেকে মুক্তি পেতে চাই, তাই খাল উদ্ধারে নেমেছি।
তাদের অভিযোগ, গত দু দশকের বেশি সময় ধরে মাছ চাষের নামে দখলদারিত্ব করে কুমিরার মথুরা চর নামে বিশাল চরটিতে মাছের আবাদ করেছে একটি সিন্ডিকেট। তাদের কাছে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। তাদের কারণে চরের পাশ দিয়ে ডাকাতিয়া নদীতে যাওয়া চর কুমিরা খালটির অস্তিত্ব এখন নেই। এছাড়া এতো বছরের দখলদাররা খালের বিভিন্ন অংশে পরিকল্পিত বাঁধ দিয়ে পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি করেছেন।
এসব শুনে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পৌর এলাকার ৯নং ওয়ার্ডের চরকুমিরা গ্রামের কুমিরার মথুরা চরের বিশাল চরটির দক্ষিণাংশে চরকুমিরা খাল নামে খ্যাত খালটির অস্তিত্বই নেই। চরের সাথে একাকার হয়ে গেছে। খালটির শুরুর মুখ থেকে বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দিয়ে ও ভরাট করে নালায় পরিণত করা হয়েছে। এতে পৌর এলাকার চরকুমিরা, ভাটিয়ালপুর এবং গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নের চরমুথরা গ্রামের আবাদকৃত ভূমিতে পানি দেয়া ও বর্ষায় পানি নিষ্কাশনে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হয়। বিগত বর্ষার সময় টানা বর্ষণের কারণে পানি সরতে না পেরে তিনটি গ্রামের ৮০ ভাগ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়। এখনো কিছু কিছু স্থানে পানি জমে রয়েছে।
মো. সোহাগ, জসিম উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার একটি পক্ষ খালটিতে বাঁধ দিয়ে এবং মাছ চাষের নামে চর দখলে রেখে তিন গ্রামের দশ সহস্রাধিক জনগণের সর্বনাশ করেছে। আমরা চাই সরকারি কর্তৃপক্ষ খালটি উদ্ধারে এগিয়ে আসুক।
এই বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে চরকুমিরা গ্রামের মনির হোসেন জানান, এবার আমরা সুযোগ পেয়ে খালটি পুনরুদ্ধার করতে নেমেছি। এই এলাকার ৮০ ভাগ শিশু এই খাল পাড়ের সড়ক দিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করে। কিন্তু বর্ষাকালে পানি উঠে গেলে চরম দুর্ভোগে পড়ে তারা। আমি আমার দুই সন্তানকে বাধ্য হয়ে অন্য স্কুলে ভর্তি করিয়েছি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ পাটওয়ারী বলেন, একদিন বৃষ্টি হলেই বাড়িতে পানি উঠে যায়। তাই এ সমস্যা দূর করতে খালটি দখলমুক্ত করা প্রয়োজন।
দাসবাড়ি সংলগ্ন কুমিরার মথুরা চরের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলাম জানান, এ বছর আমরা চরের দায়িত্ব নিয়েই খাল উদ্ধারে নেমেছি। ফি বছর তিন গ্রামের মানুষকে জলাবদ্ধতার মারাত্মক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এসব থেকে মুক্তি পেতে দলমত নির্বিশেষে লোকজন চরকুমিরা খাল উদ্ধারে ঐক্যবদ্ধ।
দখলদারিত্বের কারণে হারিয়ে যাওয়া খাল উদ্ধার এবং বাঁধ অপসারণে আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করবো এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সার্বিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি। জলাবদ্ধতা ও ফসল উৎপাদনের জন্যে এবং পাশাপাশি মাছ চাষে যাতে কারো ক্ষতি না হয় এই বিষয়ে আমরা সচেতন।