বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৪, ২১:১৮

লাইট জ্বালিয়ে কৃত্রিমভাবে দিবাদৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে ড্রাগন চাষ

মাহবুব আলম লাভলু
লাইট জ্বালিয়ে কৃত্রিমভাবে দিবাদৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে ড্রাগন চাষ
মতলব উত্তরের সাদুল্লাপুরে লাইট জ্বালিয়ে ড্রাগন চাষের জমি। পাশে নাসির উদ্দীন সরকার

সন্ধ্যা নামতেই দূর থেকে মনে হবে মাঠজুড়ে যেন মিটিমিটি জ্বলছে জোনাকি। কাছে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি লাইট আর নিচে সবুজ ড্রাগন গাছ ও সাদা ফুলের হাতছানি। যেন আঁধার রাতে আলো আর সবুজ-সাদার মিলনমেলা। মতলব উত্তর উপজেলার সাদুল্লাপুর গ্রামের একটি ড্রাগন বাগানে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। ড্রাগন চাষে এক অবিশ্বাস্য কৃষি অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন ও বাড়তি ফলনের আশায় এমন পরিবেশ তৈরি করেছেন সিকোটেক্স অ্যাগ্রো লিমিটেডের পরিচালক নাছির উদ্দীন সরকার। জানা গেছে, নাছির উদ্দীন সরকার ৩ বছর আগে নাটোর থেকে ৬০টি ড্রাগনের চারা এনেছিলেন শখের বসে। এটাতে ভালো ফল হয়। পরবর্তীতে ইউটিউব ঘেঁটে টাংগাইল গিয়ে অনেক বড়ো বাগান দেখে আরো উদ্বুদ্ধ হন তিনি। সেখান থেকে আরো গাছের চারা সংগ্রহ করেন এবং কীভাবে গাছ লাগায় সেগুলো দেখে নিজ জমিতে ২০২২ সালে ড্রাগন বাগান তৈরি করেন। বর্তমানে ৩০ একর জমিতে এ ড্রাগন চাষ করছেন। ২০২২ ও ২০২৩ সাল পর্যন্ত সাধারণ পদ্ধতিতে চাষ করেছেন। নওগাঁর এক বন্ধু ইঞ্জিনিয়ার আজাদ শীতকালে ড্রাগন ফল চাষের প্রযুক্তি সংগ্রহ করে দেন তাকে। সেপ্টেম্বর মাসে ড্রাগন খেতে লাইট বসানো শুরু করেন। চীন থেকে আনা ২ হাজার লাইট খেতে সেট করেন। ৬ হাজার ড্রাগন গাছে লাইট ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় ৩ ঘণ্টা ও সূর্যোদয়ের আগে আরো ৩ ঘণ্টা লাইটগুলো জ্বালানো হয়। শীতকালে দিন ছোট, তাই দিনের আলো কম হয়। ড্রাগন বেড়ে উঠে মূলত দিনের আলোয়। তাই এ পদ্ধতিতে চাষ করলে রাতেও ড্রাগনের বেড়ে ওঠা স্বাভাবিক থাকে। এতে বাগানে বেশি পরিমাণ ফুল ও ফল ধরছে। বর্তমানে বাগান ফুল-ফলে ভরে গেছে। যা অন্য সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ। দর্শনার্থী মাইনুদ্দিন জানান, ড্রাগন বাগানে আসার পর দেখে অনেক ভালো লাগলো। বাংলাদেশের এই অঞ্চলে এটাই প্রথম বাগান। অনেক অত্যাধুনিক চাষ। এই বাগানকে ঘিরে এই জায়গা আরও উন্নত হবে। বাগানের কর্মচারীরা বলেন, যে সময় ড্রাগনের কোনো চাষ থাকে না সেই অসময়ে এমন উৎপাদন সত্যিই অভিনব ঘটনা। এর আগে কখনো এমন বাগানে কাজ করিনি। যখন ফুল ফোটে তখন রাতেও ফুলগুলোতে কৃত্রিম পরাগায়নের কাজ করতে হয়। সিকোটেক্স অ্যাগ্রো লিমিটেডের পরিচালক নাছির উদ্দীন সরকার বলেন, ইউটিউব দেখে মূলত এ পদ্ধতির খবর জেনেছি। তারপর শুরু করে ব্যাপক ফলন পাচ্ছি । প্রাথমিকভাবে বড়ো অংকের টাকা লাগলেও লাভও তিন গুণ। নতুন পদ্ধতিতে আগের চেয়ে ৬-৭ টন বেশি ফলন হবে। প্রতিটি খুঁটিতে ৭ থেকে ৮ কেজি ফলন বৃদ্ধি পাবে। এতে করে তিন গুণ ফলন বেশি বৃদ্ধি পাবে। ফলের মানও ভালো হচ্ছে। গ্রীষ্ম মৌসুমে ফলের দাম কম থাকে। গত মৌসুমে প্রতি কেজি ড্রাগন ১৫০-২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। বর্তমানে তার বাগানের ড্রাগন ৩৪০-৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফয়সাল মোহাম্মদ আলী জানান, মতলব উত্তরে ড্রাগন চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে নতুন প্রযুক্তিতে লাইট জ্বালিয়ে কৃত্রিমভাবে দিবাদৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে ড্রাগন চাষ শুরু হয়েছে। এই প্রযুক্তিতে চাষ করা অনেক ব্যয়বহুল। এই চাষ যে কেউ করতে পারবে না। নাছির উদ্দীন সরকার চীন থেকে অধ্যাধুনিক এই লাইট অনেক টাকা ব্যয় করে নিয়ে এসেছেন। তবে তাদের দেখাদেখি যদি এই পদ্ধতিতে কেউ চাষ করতে চায়, তাহলে অল্প পরিসরে পরীক্ষামূলকভাবে করতে পারে। আমরা আশাবাদী এ পদ্ধতি ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে। যদি তারা লাভবান হয়, তাহলে পরে বেশি পরিসরে এই পদ্ধতিতে ড্রাগন চাষ করতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়