বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস আজ
  •   চাঁদপুর সদরের শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের মান্দারি লোহাগড় গ্রামে দুটি পুকুরে বিষ দিয়ে ১৫ লাখ টাকার মাছ নিধন
  •   গৃহবধূ আসমার খুনিদের বিচারের দাবিতে ফরিদগঞ্জে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন
  •   কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অভিযোগ
  •   হাজীগঞ্জের সন্তান অতিরিক্ত ডিআইজি জোবায়েদুর রহমানের ইন্তেকাল

প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২২:৪৩

জলাবদ্ধতা নিরসনে নদী ও খাল দখল বন্ধ এবং খাল খননের দাবিতে ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরামের স্মারকলিপি

ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি
জলাবদ্ধতা নিরসনে নদী ও খাল দখল বন্ধ এবং খাল খননের দাবিতে ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরামের স্মারকলিপি

জলাবদ্ধতা নিরসনে নদী, খাল দখলের মহোৎসব বন্ধ এবং খালের পানি প্রবাহ ঠিক রাখার জন্যে খাল পুনঃখনন ও আগাছা পরিষ্কার করার দাবিতে ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুলতানা রাজিয়ার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছে। ৬ নভেম্বর বুধবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলাম ফরহাদের নেতৃত্বে স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন লেখক ফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাবেয়া আক্তার, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসানুজ্জামান, সাবেক সভাপতি কে. এম. নজরুল ইসলাম, ইলিয়াস বকুল, কাউসার আহমেদ, পাভেল আল ইমরান, ফাতেমা আক্তার শিল্পী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহির আহমেদ সাজিদ, বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তারেকুর রহমান তারু প্রমুখ।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতেই গোটা উপজেলার কোথাও বুক সমান পানি, কোথাও কোমর এবং হাঁটু সমান পানি জমে গেছে। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট, বাড়ি ঘর, মাছের ঘের, পুকুর এবং ফসলসহ ফসলি জমি। হাজার হাজার মানুষ হয়ে পয়েছে পানিবন্দি। পরিস্থিতি এতোটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, প্রশাসন ২৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলতে বাধ্য হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় দুই হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। ২৫ আগস্ট বৃষ্টি পুরোপুরি থেমে গেলেও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পায়নি মানুষ। দীর্ঘ প্রায় মাসখানেক জলাবদ্ধতার কষ্টে ছিলো মানুষ। পানি যখন কমতে শুরু করে তখন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দৃশ্যমান হয়।

মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় চাষকৃত জমি মোট ২ হাজার ৬৯৫ হেক্টর। ৪/৫ দিনের অতিবর্ষণের কারণে বেড়ির ভেতরে প্রায় ৭০০ হেক্টর জলাশয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৯ কোটি টাকা। যারা মাছ চাষের সাথে জড়িত তাদের ভাষ্য মতে এ ক্ষতির পরিমাণ ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকার সমপরিমাণ।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, আউশ ধান ৪৫ হেক্টর, রোপা আমনের বীজতলা ৯১ হেক্টর, রোপণকৃত আমন ৩১২ হেক্টর, বিভিন্ন জাতের গ্রীষ্মকালীন শাক সবজি ৬৯ হেক্টর ও আখ ১৩ হেক্টর। মোট ৫৩০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি ৩০ লক্ষ ২২ হাজার টাকা। রাস্তাঘাটেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কাঁচা রাস্তার মাটি ক্ষয় হয়েছে। সলিং রাস্তার মাটি সরে যাওয়াতে ইট সরে গেছে। পাকা রাস্তার কার্পেটিং নষ্ট হয়ে গেছে। রাস্তার পাশে অনেক বড়ো বড়ো গাছ পড়ে গিয়ে রাস্তার অংশ গর্ত হয়েছে। পানির স্রোত রাস্তার যে পাশ দিয়ে নেমে গেছে সে অংশ ভেঙ্গে গেছে। উপজেলা প্রকৌশল অফিস ৩১ আগস্ট পর্যন্ত যতটুকু পরিমাপ করতে পেরেছে, তাতে উপজেলার প্রায় ৭০ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এ হিসাব আংশিক। উপজেলার অধিকাংশ অঞ্চল সিআইপি বাঁধের ভেতরে। এ কারণে এখানে বন্যার পানি বাঁধ ভাঙ্গা ছাড়া প্রবেশের সুযোগ নেই। কিন্তু পানি নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় আজ উপজেলাবাসীকে অতি বৃষ্টি হলে পানির নিচে থাকতে হয়। সিআইপির অভ্যন্তরীণ বিশেষ করে ফরিদগঞ্জ উপজেলার খালগুলো আস্তে আস্তে অবৈধভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে। সেদিকে কর্তৃপক্ষসহ কারোরই নজর নেই। খাল দখল তথা ভরাট হলে অশান্তি বাড়বে সর্বসাধারণের। খাল বাঁচলে মানুষ বাঁচবে, ফরিদগঞ্জ বাঁচবে। এক সময় ফরিদগঞ্জে জালের মতো ছড়িয়ে ছিলো বহু খাল। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অবহেলায়, নজরদারির অভাবে বহু খাল দখল হয়ে গেছে। মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে দু’-একটি স্থানে নদী এবং খাল দখলমুক্ত করা হলেও আবারও দখল হচ্ছে। মূলত প্রভাবশালীরা এসব খাল দখল করছে। প্রতিযোগিতা দিয়ে খাল এবং নদী দখল করে স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। কেউ কেউ আবার বহুতল ভবনও করছে। এ যেনো জোর যার মুল্লুক তার। সরকারি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহারের সর্বোচ্চ প্রদর্শন চলছে ফরিদগঞ্জে। এ দৃশ্য উপজেলাজুড়ে। জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ পানি নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা না থাকা। এমনিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক স্বচ্ছতার ফলে ধানি জমি, পুকুর, জলাশয় ভরাট করে বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে বৃষ্টির পানির ধারণ ক্ষমতা দিনকে দিন সংকুচিত হয়ে আসছে। খালগুলোতে নিয়মিত মাটি না কাটাতে পলি জমে জমে খালের গভীরতা কমে যাচ্ছে। এছাড়া খালের দুই পাড় কখনোই পরিষ্কার করা হয় না। ফলে দুই পাড়ে তৃণলতা এবং গাছ গজিয়ে উঠে পানির প্রবাহ ক্ষমতাকে নষ্ট করছে। যেখানে নদীতে বাঁধ দেয়া হয়েছে, দ্রুত সে বাঁধ কেটে দিতে হবে। কচুরিপানা অপসারণের ব্যবস্থা করতে হবে। বাঁধ সৃষ্টি করে মাছ চাষ করা যাবে না। প্রয়োজনে উপজেলার সামাজিক সংগঠনগুলোকে কাজে লাগানো যেতে পারে। বর্তমানে উপজেলায় অঞ্চল ভিত্তিক সামাজিক সংগঠনও রয়েছে। খাল পরিষ্কার এবং খননের কর্মসূচি হাতে নিলে জলাবদ্ধতার হাত থেকে বাঁচানো যাবে উপজেলাকে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়