বুধবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৪  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা গণফোরামের কর্মী সমাবেশ
  •   নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনে ফরিদগঞ্জে অবাধে ইলিশ বিক্রি
  •   পিকনিকে যাওয়া শিক্ষার্থীর মরদেহ মেঘনায় ভেসে উঠলো দুদিন পর
  •   নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি না করার শপথ করিয়েছেন এমএ হান্নান
  •   বিকেলে ইলিশ জব্দ ও জরিমানা

প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৪, ২৩:১১

ভয়াবহ সেই ২৫ অক্টোবর

জাহাঙ্গীরের ঘরটি এখন শুধুই ফাঁকা

প্রবীর চক্রবর্তী ॥
জাহাঙ্গীরের ঘরটি এখন শুধুই ফাঁকা
পাশের ছবিতে ঘটনার কথা বলছেন তার বড় ভাই সেলিম বেপারী।

ফরিদগঞ্জের পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের পূর্ব গাজীপুর গ্রামের তিনকড়ি বাড়ির আঃ মতিন বেপারী ও তফুরেরনেছা দম্পতির ৯ সন্তানের সবার ছোট জাহাঙ্গীর বেপারীও ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর শুক্রবার দিন অন্যান্য নেতা-কর্মীর মতোই মিছিলে এসেছিলেন। কিন্তু তিনি ফিরেন লাশ হয়ে। মৃত্যুর এক বছর পর জাহাঙ্গীরের পরিবারের খোঁজ নিতে পূর্ব গাজীপুরে তাদের বাড়িতে গেলে কথা হয় তার বিধবা স্ত্রী তাসলিমা বেগমের সাথে। তিনি জানান, নিজের অর্জিত অর্থ এবং বাপের বাড়ির লোকজনের সহায়তা নিয়ে তৈরিকৃত নতুন বাড়িতে স্বামী জাহাঙ্গীর হোসেন ও সন্তান তানজিনাকে নিয়ে সুখের ঘর করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিধাতা সেই সুখ দেননি। তাই নতুন তৈরিকৃত ঘরে উঠতে না উঠতেই চলে যেতে হলো জাহাঙ্গীর আলমকে।

২৫ অক্টোবরের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে জাহাঙ্গীর যখন হাসপাতালে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন, তখন বাড়িতে বসে তাসলিমা চিন্তাও করেননি তিনি স্বামীহারা এবং তার সন্তান পিতৃহারা হচ্ছে। তাসলিমা জানিয়েছেন, ওইদিন বোনের বিবাহোত্তর একটি অনুষ্ঠান ছিল তার বাপের বাড়িতে। সেই অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে জাহাঙ্গীর ফরিদগঞ্জে আসে ও লাশ হয়ে বাড়ি ফিরে।

গাজীপুর বাজারে একটি ঔষধের দোকান ছিলো জাহাঙ্গীরের। কিন্তু ব্যবসায় ভালো করতে না পারায় মৃত্যুর ৪/৫ মাস পূর্বে ব্যবসাটি ছেড়ে দিয়ে জনকল্যাণ সমিতির গাজীপুর ব্রাঞ্চে চাকুরি নেন। পূর্ব থেকে ওই ব্রাঞ্চে সহকারী ম্যানেজার হিসেবে চাকুরি করা তাসলিমা এরপর থেকে প্রতিদিন স্বামীর মোটরসাইকেলে করে একসাথেই অফিস করতেন।

একযুগ পর জাহাঙ্গীরের পরিবারের খবর নিতে তিনকড়ি বাড়িতে দেখা মিলে জাহাঙ্গীরের বড়োভাই সেলিম বেপারীর। তিনি জানান, জাহাঙ্গীরের স্ত্রী চলে গেছে। সে এখন চট্টগ্রাম থাকে। একমাত্র মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেছে। তাদের নির্মাণ করা ঘরটি ফাঁকাই পড়ে থাকে। ছোট ভাইয়ের হারানোর ব্যথা ভুলতে পারছি না। ভাই-বোন ৯ জনের মধ্যে সবার ছোট জাহাঙ্গীর। তার মৃত্যুর তিন মাসের মধ্যে আমাদের মা তফুরেরনেছা ছেলের শোকে মারা যান। যেখানে আমাদের আগে চলে যাওয়ার কথা, সেখানে আদরের ছোট ভাইটি আগে চলে গেলো! কিন্তু যেভাবে মৃত্যু হয়েছে, তা মেনে নিতে পারছি না। আমাদের চোখের জল শুকিয়ে গেছে। এক সময়ে নেতা-কর্মীরা জাহাঙ্গীরের পরিবারের খোঁজ খবর নিলেও গত কয়েক বছর সকলেই তাকে ভুলে গেছে। গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা নতুনভাবে প্রাণ ফিরে পেয়েছি। এতোদিন রাজনৈতিকভাবেও কোণঠাসা ছিলাম। বুকের কষ্ট বুকে বেঁধে রেখেছিলাম। শাসকদের নিপীড়ন ও অত্যাচারের কারণে বিচার না হলেও এভাবে প্রকাশ্যে গুলি করে মেরে ফেলা আমার ভাইয়ের হত্যাকারীর বিচার চাই। ফ্যাসিস্টরা এতোদিন আমাদের কথা বলতে না দিলেও এখন বিশ্বাস করি খুনিদের বিচার হবেই। প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছার।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়