শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৫

ভয়াবহ সেই ২৫ অক্টোবর

স্বামী হত্যার বিচারের আশা বাবুলের স্ত্রী রোকেয়া বেগমের

প্রবীর চক্রবর্তী
স্বামী হত্যার বিচারের আশা বাবুলের স্ত্রী রোকেয়া বেগমের

পর্ব-৩ ॥ অসুস্থ রোকেয়া বেগম নিজের জমানো ১শ’ টাকার একটি নোট বের করে স্বামী বাবুল হোসেন ভূঁইয়ার কাছে দিয়েছিলেন তার জন্যে যতোটুকু পাওয়া যায় মাল্টা বাজার থেকে নিয়ে আসার জন্যে। সেই একশত টাকাসহ মোট একশত ত্রিশ টাকার রক্তমাখা নোটই তার স্বামীর লাশের সাথে পাওয়া শেষ চিহ্ন। এক বছর পর ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে সরজমিনে বাবুলের বাড়িতে গেলে রোকেয়া বেগম এই কথাগুলো বলেছিলেন। তিনি বলেন, ‘সেই সময়ে বাড়িতে কেউ এলেই আগে অন্য লোকজনের মারফত খোঁজ নিতেন, পাওনাদার কেউ কিনা। পাওনাদারদের নানা কথা শুনতে আর ভালো লাগছিল না। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ, সংসার খরচ এগুলো জোগাড় হবে কীভাবে সেই চিন্তাতেই রাত নামলে ঘুম আসতো না রোকেয়া বেগমের’।

এই রোকেয়া বেগম আর কেউ নন। ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর ফরিদগঞ্জে গুলিতে নিহত ফরিদগঞ্জের রূপসা উত্তর ইউনিয়নের বদরপুর গ্রামের যুবদল নেতা বাবুল হোসেন ভূঁইয়ার বিধবা স্ত্রী। দক্ষিণ বদরপুর গ্রামের আনিছ ভূঁইয়া বাড়ির আঃ রহিমের ৬ সন্তানের মধ্যে বড়ো ছিলো বাবুল ভূঁইয়া।

২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে কেমন আছে বাবুলের পরিবার--এই খবর নিতে এই প্রতিনিধিসহ সাংবাদিকরা তাদের বাড়িতে উপস্থিত হলে দরজা খুলে দেন রোকেয়া বেগমের জা। তখন ঘরে কেউ ছিলো না। পরিচয় দেয়ার পর তিনি পাশের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। সঙ্গে ছিল ওই বাড়ির একজনের দেয়া কয়েক মুঠো চাল। পাওনাদার নয়, সাংবাদিক পরিচয় জানার পরই কেনো আসছেন, এই প্রশ্ন করে চোখের জল ছেড়ে দেন রোকেয়া বেগম। এরপর তিনি শোনান নানা দুঃখের কাহিনী।

তিনি সেই সময়ে এক করুণ কথা জানিয়ে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের বেশ কয়েক মাস পর সাবেক এমপি লায়ন হারুনের সাথে ঢাকা থেকে একদল লোক এসেছিল বাবুলসহ নিহত তিনজনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে। ঢাকার ওই লোকজন কথা বলার পর তারা একটি সাদা খাম দিয়ে যান। বাড়িতে আসার পর খাম খুলে দেখতে পান খামের ভেতরে ৫ হাজার টাকা। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দরজা খোলার পর দেখতে পান সকল পাওনাদাররা দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেদিন অনেক কষ্টে তাদের তিনি বোঝাতে সক্ষম হন ওই সাদা খামের ভেতর ৫ হাজার টাকা ছিল। পরে ওই টাকা দিয়ে ছেলের বই এবং এক পাওনাদারকে কিছু টাকা দিয়েছিলেন।

২০২৪ সালে অক্টোবর মাস আবারো ফিরে এসেছে। তিন যুবদল নেতা হত্যার এক যুগ পর সাংবাদিকরা আবারো ছুটে যান নিহত যুবদল নেতা বাবুল হোসেন ভূঁইয়ার বাড়িতে। বিধবা স্ত্রী রোকেয়া বেগম পূর্বের স্মৃতি হাতড়িয়ে বলেন, ‘স্বামীর সাথে মৃত্যুবরণ করা অন্য দুজনের স্ত্রীরা চলে গেলেও আমি স্বামীর ভিটা ছেড়ে যাই নি। গত এক যুগ ধরে আমার স্বামীর হত্যার বিচারের আশায় রয়েছি। এখনতো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় নেই, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। তাহলে কেনো আমার স্বামীকে গুলি করে যারা মেরেছে তাদের বিচার হবে না?

তিনি বলেন, স্বামী ও তিন সন্তান নিয়েতো ভালোই ছিলাম। কাঠমিস্ত্রির কাজ করে বাবুল যা রোজগার করতেন তা দিয়ে মোটামোটি সংসার চলে যেতো। তার স্বামীর আদরের ছোট ছেলে যার সকল বায়না মেটাতেন তিনি। তার মৃত্যুর পর ছেলের মুখের দিকে তাকাতে পারি নি।

বাবুলের রাজনীতির বিষয়ে তিনি জানান, দলের জন্যে অন্তঃপ্রাণ ছিলো বাবুল। জীবিত অবস্থায় দলের থেকে একটি টাকাও এনে সংসারে ব্যয় করেননি। দলের লোকজনের পেছনেই সবকিছু ব্যয় করেছেন।

বাবুল ভূঁইয়ার বাবা আব্দুর রহিম জানান, সেদিন ছেলের গুলি খাওয়ার সংবাদ শুনে হাতে থাকা ৫০ টাকা নিয়ে ছুটে গিয়েছি ফরিদগঞ্জে। পুলিশের রক্তচক্ষু ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চাপের মধ্যেই ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি। বাবুলকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে প্রথমে চাঁদপুর এবং পরবর্তীতে সেখান থেকে ঢাকা নেয়ার চেষ্টা করেছি। এর মধ্যেও কতো প্রতিবন্ধকতা যে ছিলো সেদিন, তা বলে বোঝাবার ভাষা নেই। আমাদেরকে টাকা দিয়ে কিনতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই আমরা টাকার কাছে বিক্রি হইনি। ছেলের রক্তের সাথে বেঈমানি করিনি।

তিনি আরো জানান , যেই লোক ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর আমার গুলিবিদ্ধ ছেলেকে লাথি দিয়েছে, সেই লোক ঘটনার চার দিন পর আমার ঘরে এসে আমার কাছে টাকার লোভ দেখিয়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিতে চেয়েছে। চিকিৎসার জন্যে আমার পুত্রবধূ হাসপাতালে গেলেও তৎকালীন আওয়ামী লীগের নেতাদের হুমকির মুখে চলে আসতে বাধ্য হয়েছে। হাসপাতালেও তারা স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিতে চেয়েছে।

মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, মামলা দায়েরের পর চাঁদপুরে আদালতে ও ফরিদগঞ্জে পুলিশ আমাদের যতবার থানায় ডেকেছে, ততবার থানায় গিয়েছি। আমরা তখন মনে করেছিলাম, আমাদের দেয়া মামলার তদন্তে আমাদের ডেকেছে। যদিও পরে জেনেছি আমার ছেলেসহ তিনজনের হত্যাকে ধামাচাপা দিতে পুলিশ নিজেই পাল্টা মামলা করে আমাদের মামলাটিই শেষ করে দিয়েছে। এমনকি আমাদেরসহ বিএনপির নেতা-কর্মীদেরও হয়রানি করেছে।

সে সময় আওয়ামী লীগের দাপটে কথা বলতে পারিনি। এখনতো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় নেই। তাই আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। বিচার কীভাবে হবে তা সরকারের বিষয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়