বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০

কপোট্রনিক এমজেডআই
আহসান হাবীব

সংক্ষেপে সে এমজেডআই। মানে মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আমার মেঝ ভাই। যাকে আমরা ছোট ভাইবোনেরা ‘ভাইয়া’ ডাকি। ‘বিচ্ছু’ ছদ্মনামে জাসদের গণকন্ঠ পত্রিকায় সে কার্টুন আঁকতো। সে কমিকসও আঁকতো। তার ‘মহাকাশে মহাত্রাস’ সায়েন্স ফিকশনটি কমিকস আকারেই বের হয়েছিল প্রথমে পুরোটা।

সত্যি কথা বলতে কি, তাকে দেখেই আমার কার্টুনিস্ট হয়ে ওঠা বা কমিকস আঁকার শুরু। তার প্রথম লেখা ‘কপোট্রনিক ভালোবাসা’ একটা সায়েন্স ফিকশন গল্প। এটা বের হওয়ার পর ছফা ভাই মানে কিংবদন্তী লেখক আহমদ ছফার কথাই বলছি; তখন তিনি প্রায়ই আমাদের বাসায় আসতেন থাকতেনও মাঝে মধ্যে। বড় ভাইয়ের খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। যাই হোক তিনি ঐ গল্প পড়ে ভাইয়াকে এক টাকা পুরস্কার দিলেন।

গম্ভীর হয়ে বললেন, ‘এই নাও এরকম চমৎকার একটি গল্প লেখার জন্য পুরস্কার’।

তবে বিচিত্রায় এটা প্রকাশিত হওয়ার পর এক পাঠক মন্তব্য করে, এটা কপি করা। কপি করা ছাড়াও যে এ ধরনের অসংখ্য গল্প লেখা সম্ভব সেটা প্রমাণ করতেই তার পরবর্তী গল্পগুলো লেখা। বই বের হওয়ার পর ভাইয়া সেই সন্দেহপ্রবণ পাঠকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। তার জন্যই আরও গল্প লেখা হয়েছে।

অনেক গল্প হওয়ার পর সে এক বিখ্যাত প্রকাশককে দিল, যদি তারা বইটা প্রকাশ করে, বইয়ের নাম ‘কপোট্রনিক সুখ দুঃখ’। প্রকাশনীর নাম আর এখানে বললাম না। সেই প্রকাশক ছয় মাস পা-ুলিপি ফেলে রেখে বলল, ‘না এ বই চলবে না’। তারা প্রকাশ করবে না। কী আর করা, ভাইয়া পা-ুলিপি ফেরত নিয়ে এলো।

পরে এই বই প্রকাশ করল তখনকার আরও একটি বিখ্যাত প্রকাশনী ‘মুক্তধারা’। তারপর তো ইতিহাস। এই বইয়ের নয়টা এডিশন হয়েছিল কাছাকাছি সময়ে। এরপর সে অনেক সায়েন্স ফিকশন লিখেছে, এখনো লিখছে... সেগুলো যে প্রচুর জনপ্রিয় হয়েছে সেটা বলাই বাহুল্য।

বাইরে অনুবাদও হয়েছে একাধিক সায়েন্স ফিকশন। তার একটা বই সম্প্রতি পেঙ্গুইন থেকেও বের হয়েছে। মজার পার্টটা হচ্ছে, সেই প্রকাশক যারা ‘কপোট্রনিক সুখ দুঃখ’-এর পা-ুলিপি বাতিল করেছিল, তারা বেশকিছুদিন আগে আমার কাছে এসেছিল। লজ্জিত মুখে বলল, ‘কথাটা কী করে বলি। উনার বইটা আমরা তখন ছাপিনি। এখন কোন মুখে উনার কাছে যাই। বাংলাদেশের সব বিখ্যাত লেখকের বই আমরা প্রকাশ করেছি শুধু উনারটা... ইত্যাদি ইত্যাদি’। এই ঘটনা একদিন ভাইয়াকে বললাম। ভাইয়া শুনে হেসে ফেলল। বলল, ‘আসতে বাধা কোথায়, আসতেই পারে আমার কাছে ...’ এই হচ্ছে আমাদের ভাইয়া।

অসম্ভব কর্মঠ একজন মানুষ। প্রচুর তার এনার্জি, এক সঙ্গে যে কত কাজ করতে পারে তাকে কাছ থেকে না দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না। এক সঙ্গে চার পাঁচটা মিটিং করতেও তার বাধা নেই। তাকে কখনো রাগতে বা বিরক্ত হতে দেখিনি। অসম্ভব তার ধৈর্য।

সে তার দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসর নিয়েছে। এখন সে নাকি শুধু বাচ্চাদের জন্য লিখবে আর কিছু লিখবে না। তার ভবিষ্যৎ প্ল্যান একটা বিশাল নৌকা বানাবে, সেই নৌকায় করে বাংলাদেশের সব নদীতে নদীতে ঘুরে বেড়াবে, হয়তো মাঝে মাঝে আমরা ভাইবোনেরাও থাকব তার সাথে।

এছাড়াও সে একটা জটিল ল্যাব বানিয়েছে আমাদের ভাইবোনদের যৌথ ফ্ল্যাটে, সেখানেই সে বেশিরভাগ সময় দেয় আপাতত। মাঝে মাঝে দেখি ক্যানভাসে পেইন্টিং করে (অবশ্য কার্টুন বা কমিকস আঁকে না)। তার ছবি আঁকার শিক্ষক আবার আমার কন্যা এষা আর ভাগ্নি তিথি! কারণ তারা জানে ক্যানভাসে কী কালারে আঁকতে হয়, কত নম্বর তুলি ব্যবহার করতে হয় ইত্যাদি ইত্যাদি।

২৩ ডিসেম্বর তার জন্মদিন। কততম জন্মদিন এই হিসাব করতে চাই না। সামনের প্রতিটি জন্মদিনই সে সুস্থ থাকুক, ভাল থাকুক এটাই চাই।

আমরা ছয় ভাইবোন ছিলাম। একে একে নিভিছে দেউটির মতো আমার বড় ভাই আর এক বোন চলে গেছে...। যারা আছি আরও কিছুদিন না হয় থাকি। আরও কিছু জন্মদিন পালন করে যাই। শুভ জন্মদিন ভাইয়া...।

লেখক : আহসান হাবীব, সম্পাদক, উন্মাদ।

সূত্র : ঢাকা পোস্ট।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়