প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২১:৪৪
হাজীগঞ্জে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীর আত্মহত্যা
শারীরিক অসুস্থতার কারণে একই ক্লাসে থাকার পরামর্শ ছিলো বাবার। সে জন্যে বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না। এই মনোকষ্টে জান্নাতুল ফেরদৌস (১৪) নামে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। তবে কেউ কেউ বলেছেন, বিদ্যালয়ের বকেয়া পরিশোধ করতে না পারায় বার্ষিক পরীক্ষা দিতে পারবে না বলে জান্নাতুল ফেরদৌস আত্মহত্যা করেছে। সে স্থানীয় বেলচোঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। ঘটনাটি ঘটে বুধবার (২৭ নভেম্বর ২০২৪) সকালে হাজীগঞ্জের বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের কোন্দ্রা গ্রামে। সে এই গ্রামের মনির হোসেনের মেয়ে। মনির হোসেন দাবি করেছেন তার মেয়ে অসুস্থ। যে কারণে তাকে এবার অষ্টম শ্রেণিতে থেকে যেতে বলা হয়েছিলো। তাতেই সে এ কাজ করে বসে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এদিন সকালে জান্নাতুল ফেরদৌস নিজ বাড়িতে কীটনাশক পান করে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার পরিবার বিষয়টি বুঝতে পেরে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে ওয়াশের (পেট পরিষ্কার) পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন কর্মরত চিকিৎসক। তখন পরিবারের লোকজন তাকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে সে মারা যায়।
এদিকে ওই ছাত্রীকে হাসপাতাল আনার পরে বিভিন্নজন বলেছেন বার্ষিক পরীক্ষার ফি দিতে না পেরে জান্নাত কীটনাশক পান করে। তবে পরিবারের লোকজন গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর ) থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে। নিহতের বাবা মনির হোসেন জানান, আমার মেয়ে শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং পড়াশোনায় দুর্বল। তাই তাকে বলেছি আরো এক বছর এই (অষ্টম) ক্লাসে থাকতে। যে কারণে পরীক্ষার ফি জমা দেয়া হয়নি। তাই বৃহস্পতিবার তার পরীক্ষা অনিশ্চিত ছিল। কিন্তু সে পরীক্ষা দিবেই এমন বায়না ধরায় বুধবার সকালে টাকা নিয়ে তাকে দেয়ার আগেই সে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এএইচএম খোরশেদ আলম ফোন রিসিভ না করায় যোগাযোগ করা হয় বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেন পাটওয়ারীর সাথে। তিনি বলেন, এমনটি হওয়ার কথা নয়। কোনো শিক্ষার্থী বকেয়া টাকা না দিলেও আমরা পরীক্ষা নিয়ে থাকি। তিনি আরো বলেন, বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী কাম হিসাবরক্ষক মো. জসিম উদ্দিন ওই এলাকার। তার সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি জানান, গত কিছু দিন ধরে মেয়েটি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, ঘটনাস্থলে আমাদের তদন্ত কর্মকর্তা রয়েছেন। পরবর্তীতে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস শীল বলেন, আত্মহননের বিষয়টি জানতে পেরেছি। তবে আপনার (সংবাদকর্মী) মাধ্যমে স্কুলের বকেয়া বেতনের বিষয়ে জানলাম। বিষয়টি আমি দেখছি। তিনি আরো জানান, সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, টাকার কারণে যেনো কোনো শিক্ষার্থীর পরীক্ষা বন্ধ না থাকে। বিষয়টি স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান দেখবে, প্রয়োজনে অভিভাবকদের আমার কাছে পাঠানোর কথা বলে দিয়েছি।