প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২০:৪৭
চিরনিদ্রায় শায়িত চাঁদপুরের প্রবীণ সাংবাদিক অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেন খান
প্রেসক্লাবে তাৎক্ষণিক শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া মোনাজাত
সর্বজনের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর সাবেক চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি ও চাঁদপুর সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেন খান (৭৮)। বুধবার (২৭ নভেম্বর ২০২৪) বাদ জোহর চাঁদপুর সরকারি কলেজ মাঠে জানাজা শেষে চাঁদপুর শহরের পুরাণ বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন পৌর কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
|আরো খবর
এর আগে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। প্রবীণ এই সাংবাদিক এবং শিক্ষাবিদের মৃত্যুর খবর সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে তাঁর অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী এবং সাংবাদিকসহ চাঁদপুরের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।
বুধবার দুপুর ১২টার দিকে চাঁদপুর প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে মরহুমের মরদেহ আনা হলে প্রেসক্লাবের সভাপতিসহ নেতৃবৃন্দ তাঁকে শেষবারের মতো দেখার জন্যে ছুটে আসেন। এ সময় ক্লাবের আয়োজনে তাৎক্ষণিক শোকসভা, শ্রদ্ধা নিবেদন, স্মরণসভা, দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। এখানে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্ত, সাবেক সভাপতি শহীদ পাটোয়ারী, শরীফ চৌধুরী, ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, গিয়াসউদ্দিন মিলন, এএইচএম আহসান উল্লাহ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা, সোহেল রুশদী, রিয়াদ ফেরদৌস, আল-ইমরান শোভন প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক কাদের পলাশ। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ। এখানে মরহুমের কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ।
বাদ জোহর চাঁদপুর সরকারি কলেজ মাঠে জানাজা শেষে তাঁর মরদেহ পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেন খানকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে সাংবাদিক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা কলেজ মাঠে চলে আসেন।জানাজায় কয়েক শতাধিক মুসল্লি অংশ নেন। জানাজা শেষে পর্যায়ক্রমে চাঁদপুর প্রেসক্লাব, চাঁদপুর সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেন খানের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেন খানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ ও পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন চাঁদপুর প্রেসক্লাব, চাঁদপুর টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরাম, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন চাঁদপুর জেলা, চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ, কলেজ শিক্ষক পরিষদ, চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতি, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট চাঁদপুর জেলাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
কলেজ মাঠে জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেন খানের ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক ফেরদৌস খান শাওন বলেন, আমার বাবা শিক্ষকতা ও সাংবাদিকতা করেছেন। কর্মজীবনে তিনি কোনো কারণে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় কারো বিরাগভাজন হয়তো হয়েছেন, মনে কষ্ট দিয়েছেন। সেসব ভুলে যাবেন এবং বাবা যদি কোনো ভুল করে থাকেন তাঁকে ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ তাঁকে যেনো জান্নাতবাসী করেন-- সকলে এই দোয়াই করবেন।
চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্ত বলেন, অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেন খান স্যার অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সকল দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা আশা করতে পারি, আল্লাহ পাক তাঁকে বেহেশত নসিব করবেন। আমি চাঁদপুর প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানাই। জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত আরো বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর একেএম আবদুল মান্নান, সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মাসুদুর রহমান ও চাঁদপুর কলেজ কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি আক্তার হোসেন মাঝি। আলোচনা পর্ব সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি আলম পলাশ।
মোহাম্মদ হোসেন খান ফদিরগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের সেকদি গ্রামের খান বাড়ির ইউসুফ খানের ছেলে। ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর স্ত্রী ও দুই ছেলে আছে। তিনি দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, স্বাধীনতা পুরস্কার ও একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী হাশেম খানের ছোট ভাই। কর্মজীবনে তিনি চাঁদপুর শহরের ব্যাংক কলোনীর নিজ বাড়িতে থাকতেন। বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি চাঁদপুরের বাসা ছেড়ে ঢাকায় চলে যান এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেন ও চিকিৎসাধীন ছিলেন। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘ বছর দায়িত্ব পালন করেন ।
অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেন খান টিআইবি'র সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), প্রবীণ হিতৈষী সংঘ, জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতি (নাটাব), চাঁদপুর ডায়াবেটিক সমিতি, অংকুর কচি-কাঁচার মেলা, উদয়ন শিশু বিদ্যালয়, রেড ক্রিসেন্ট সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত থেকে সেবামূলক কাজ করেছেন। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন, তবে কক্ষণো রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না।