প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
কোনো রকম সহিংসতা ছাড়াই এবার চাঁদপুর সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শেষ হয়েছে। এবারের চাঁদপুর সদর উপজেলার ইউপি নির্বাচনের একটি বহুমাত্রিকতা রয়েছে বলে আমার পর্যবেক্ষণে মনে হয়। স্থানীয় অনেক নির্বাচনই আমি দেখেছি। কিন্তু এবারের নির্বাচনটিতে নানা কারণে ভিন্নতা ছিলো।
শুরুতে আসি প্রার্থী নির্বাচন। এবার কেন্দ্র থেকে এককভাবে প্রার্থী নির্বাচন করে নৌকা প্রতীক দেয়া হয়েছে। প্রার্থী নির্বাচনে কেন্দ্র এবার দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। যাদেরকে প্রার্থী করা হয়েছে তাদের প্রায় সকলেই রাজনৈতিকভাবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। দুজন ছাড়া বাকি সবাই পুরানো প্রার্থী। যার জন্যে প্রার্থীরা ছিলো সুপরিচিত। দক্ষতার সাথে প্রার্থী নির্বাচন করার কারণে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা ছিলো তুলনামূলকভাবে কম।
এবারের নির্বাচনে যে জিনিসটি সবার দৃষ্টিতে এসেছে সেটা হলো অতীতের মতো এবারও প্রার্থীদের জন্যে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জনাব জেআর ওয়াদুদ টিপু। নমিনেশন প্রাপ্তির প্রথম দিন থেকেই চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জেআর ওয়াদুদ টিপু অত্যন্ত কৌশলী হয়ে বিচক্ষণতার সাথে টোটাল নির্বাচনটি পরিচালনা করে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগকে একত্রিত করে যেভাবে নির্বাচন পরিচালনা করেছেন, এক কথায় সেটা অসাধারণ।
প্রথমত, তিনি যে কাজটি করেছেন সেটা হলো দলীয় সকল প্রার্থীকে নিয়ে বসে নির্বাচনের কৌশল নির্ধারণ করেছেন। দলের যারা বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলো তাদেরকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, আওয়ামী লীগ করতে হলে দলের বিপরীতে যাওয়া যাবে না। দল এবং বঙ্গবন্ধুকন্যার প্রতি আস্থা রেখে সকলে মিলে নৌকাকে বিজয়ী করতে কাজ করতে হবে। তিনি যেখানে নমনীয় হওয়া প্রয়োজন সেখানে নমনীয় হয়েছেন, যেখানে কঠোর হওয়া প্রয়োজন সেখানে কঠোরতা দেখিয়েছেন। এতে ফলও পেয়েছেন। যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নিজেদের ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বঙ্গবন্ধুকন্যা যাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করেছেন। আর যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নমিনেশনপত্র জমা দিয়েছেন তারা জেআর ওয়াদুদের ব্যক্তিত্বের কাছে হার মেনে নমিনেশনপত্র প্রত্যাহার করেছেন। শুধু তাই নয়, বিদ্রোহী প্রার্থীরা জনাব জেআর ওয়াদুদকে কথা দিয়েছেন, তারা দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে জয় ছিনিয়ে আনবেন এবং করেছেনও তা-ই। যার ফলস্বরূপ দুটি ইউনিয়নে (তরপুরচমডী এবং রামপুর) নৌকার বিপরীতে কোনো প্রার্থী ছিলো না। তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। তারা ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয় চেয়ারম্যান।
দ্বিতীয়ত, জনাব জেআর ওয়াদুদ টিপু সকল সংগঠনকে এক জায়গায় আনতে সক্ষম হয়েছেন। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগকে সংগঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রতিটি ইউনিয়নে প্রচার-প্রচারণায় সকলকে একত্রে দেখা গেছে। প্রতিটি ইউনিয়নে তিনি সভা-সমাবেশ করে বুঝিয়ে দিয়েছেন নৌকার প্রশ্নে সবাই এক এবং অভিন্ন।
তৃতীয়ত, মেম্বারদের ক্ষেত্রে কিছুটা বিদ্রোহ ছিলো। কিন্তু নেতৃত্ব যে মেসেজটি তাদেরকে দিয়েছে সেটা হলো কোনো সহিংসতা করা যাবে না। যার ফলে মেম্বারদের মধ্যেও তেমন বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলো না। অতীতে আমরা দেখেছি, সাধারণত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে মেম্বারদের মধ্যে সহিংসতা বেশি হয়। কিন্তু এবার জনাব জেআর ওয়াদুদের ক্যারিশমাটিক গুণে সেটা হয়নি বললেই চলে।
চতুর্থত, নির্বাচনের দিন যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রে উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। ছিলো সক্রিয়। ভোটারদের নিয়ে আসার ক্ষেত্রে তারা ভূমিকা রেখেছে। শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে তারা ছিলো অগ্রগণ্য। জনাব জেআর ওয়াদুদ টিপুর নির্দেশে তারা প্রশাসনকে সর্বোতভাবে সহযোগিতা করেছে।
যার ফলে চাঁদপুর সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে এবার অত্যন্ত সুষ্ঠু এবং সুশৃঙ্খল নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। কোনো রকম সহিংসতা হয়নি বললেই চলে। যোগ্য ব্যক্তিরাই এবার নির্বাচিত হয়েছেন। আমি অতীতেও বলেছি, ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে কেউ হারাতে পারবে না। আর সেই ঐক্যটি করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জনাব জেআর ওয়াদুদ টিপু। জেআর ওয়াদুদকে অভিবাদন। জনাব জেআর ওয়াদুদ একজন নির্বাচনবোদ্ধা। আগামী দিনগুলোতেও আমরা এমন নির্বাচন চাই।
-রতন কুমার মজুমদার
অধ্যক্ষ, পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজ।