মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ যেখানে জরুরি
অনলাইন ডেস্ক

চাঁদপুর জেলা সদরের আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হচ্ছে জোড়াতালি দিয়ে গড়ে ওঠা বড় স্টেশন মোলহেড। এটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ দ্বারা তিনদিক বেষ্টিত রেলওয়ের পরিত্যক্ত বিশাল জায়গা। এখানে অবস্থান নিয়ে তিন নদীর মিলনস্থলের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। সেজন্যে এখানে নির্মল বায়ু সেবনে আগ্রহী মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় অন্তত তিন দশক ধরে। এমনটি পর্যবেক্ষণ করে এই মোলহেডে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের জন্যে কিছু করার তাগিদ অনুভব করে চাঁদপুর পৌরসভা। এই তাগিদের ক্ষেত্র তৈরি করে দেয় ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি (যেটি ওয়ান ইলেভেন নামে পরিচিত) দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আবরণে গঠিত সেনা নিয়ন্ত্রিত ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার’। এ সরকারের সময়ে বড় স্টেশন মোলহেডে গাজীর আস্তানা উচ্ছেদ করার পর সৃষ্ট উন্মুক্ত পরিবেশে চাঁদপুর পৌরসভা মেঘনা-ডাকাতিয়ার তীরে বসার বেঞ্চ এবং পরবর্তীতে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করে দেয়।

বড় স্টেশন মোলহেডটি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন বধ্যভূমি হিসেবে চিহ্নিত হবার পর এখানে ২০১১ সালে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য হিসেবে ‘রক্তধারা’ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসন। তৎকালীন জেলা প্রশাসক প্রিয়তোষ সাহার আহ্বানে ও সহযোগিতায় চাঁদপুর পৌরসভা ‘রক্তধারা’র নির্মাণ কাজ শেষ করলে এই মোলহেড পর্যটন আকর্ষণে সমৃদ্ধ হতে থাকে। এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৭ সালে চাঁদপুর জেলা দেশের প্রথম ব্র্যান্ডিং জেলা হিসেবে ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ নাম ধারণ করলে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুস সবুর মন্ডল মোলহেডে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় ইলিশ ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নেন। এছাড়া মোলহেডের সামগ্রিক সৌন্দর্য বর্ধনে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। দুটি ভাস্কর্যের পাশাপাশি কিছু অবকাঠামো নির্মাণে মোলহেডটি পর্যটন কেন্দ্র এবং সব শ্রেণীর মানুষের বিনোদন স্পটে পরিণত হয়। এমতাবস্থায় বর্তমান জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ চাঁদপুর পৌরসভার সহযোগিতায় ২০২১ সালে মোলহেডে সম্ভাব্য উন্নয়ন সাধন করে এটিকে প্রস্তাবিত ‘বঙ্গবন্ধু পর্যটন কেন্দ্র’ হিসেবে উদ্বোধনের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যান।

প্রায় দু-তিন দশকের নীরবতা ভেঙ্গে চলতি ২০২১ সালে সরব হয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। চরমভাবে বাদ সাধে ‘বঙ্গবন্ধু পর্যটন কেন্দ্রে’র কাজে। পারে না উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ‘রক্তধারা’ ও ইলিশ ভাস্কর্য সহ অন্যান্য স্থাপন ভেঙ্গে দেয়। তাদের একটাই কথা, মোলহেডের জায়গা রেলওয়ের, এই জায়গা রেল থেকে কেউ লীজ নেয়নি কিংবা লীজের জন্যে আবেদনও করেনি। এমতাবস্থায় থমকে আছে ‘বঙ্গবন্ধু পর্যটন কেন্দ্রে’র উদ্বোধন।

গতকাল বুধবার (২৭ অক্টোবর ২০২১) চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় ব্যানার হেডিংয়ে লিখা হয়েছে যে, ‘চাঁদপুর আধুনিক নৌ টার্মিনালের সংযোগ সড়ক নিয়ে বিপাকে নৌ মন্ত্রণালয় ॥ জায়গা চেয়ে দুদফা চিঠি পাঠালেও সাড়া দেয়নি রেলওয়ে’। এ সংবাদে রাসেল হাসান লিখেছেন, চাঁদপুর আধুনিক নৌ টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শুরু হবে শীঘ্রই। ইতোমধ্যে প্রারম্ভিক সকল কাজ সম্পন্ন করে নকশাও প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে। কিন্তু নৌ টার্মিনালের সংযোগ সড়কটি প্রশস্তকরণ মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ^ ব্যাংকের বরাদ্দে রাস্তা প্রশস্তকরণ ও সংস্কারের পৃথক খাত রয়েছে। কিন্তু রাস্তাটি প্রায় সম্পূর্ণই রেলওয়ের জায়গায় রয়েছে। রেলওয়ে জায়গাটি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর না করলে রাস্তা ছাড়াই নৌ টার্মিনালের কাজ শেষ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক হাসান মাহমুদ সেলিম জানান, দু দফা চিঠি দেয়ার পর রেলওয়ে প্রতিনিধি দল সড়কটির জায়গা পরিদর্শন করেছেন, টেবিলের পর টেবিল ফাইল চালাচালি হয়েছে, কিন্তু কোনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি রেল মন্ত্রণালয়। তাঁর দাবি, এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত হওয়া জরুরি। চাঁদপুর সদরের এমপি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি মহোদয়, নৌ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, চাঁদপুর-৫ আসনের এমপি মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম মহোদয় হস্তক্ষেপ করলে নৌ টার্মিনালের সংযোগ সড়কের জন্যে ভূমি হস্তান্তরের দীর্ঘদিনের সমস্যাটির সমাধান হবে বলে আমার বিশ^াস।

আমাদেরও অনুরূপ বিশ^াস। এ বিশ^াসের অনুকূলে শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের আন্তরিক ও জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি। কেননা চাঁদপুর আধুনিক নৌ টার্মিনাল তাঁর সংসদীয় এলাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এ টার্মিনালটিতে স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও নিরাপদ যাতায়াতের জন্যে সুপরিসর সংযোগ সড়কের বিকল্প নেই। এমন সড়কের প্রয়োজনে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কাক্সিক্ষত বৈঠক আয়োজন অনিবার্য। এ বৈঠক যদি হয়, তাহলে সেখানে বড় স্টেশন মোলহেডে প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু পর্যটন কেন্দ্র উদ্বোধনের জটিলতা নিরসনের বিষয়টিও শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় আলোচ্য বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করিয়ে নেবেন বলে সকলের প্রত্যাশা। আমরা মন্ত্রী মহোদয়ের কাক্সিক্ষত হস্তক্ষেপের অপেক্ষায় থাকলাম। অন্যথায় আলোকোজ্জ্বল সম্ভাবনা জাগিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু পর্যটন কেন্দ্র’ যেমন থমকে আছে, হয়তো আধুনিক নৌ টার্মিনাল নির্মাণ কাজও অনুরূপ থমকে যাবে। আমরা সেটি কল্পনাও করতে চাই না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়