মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:২৫

দিনের চোরেরা এখন তাহলে গ্রামে?

কাজী শাহাদাত
দিনের চোরেরা এখন তাহলে গ্রামে?

ফরিদগঞ্জে দিনে দুপুরে বিয়ে বাড়ি ও বিএনপি নেত্রীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরি হয়েছে। এই চুরি নিয়ে এমরান হোসেন লিটন লিখেছেন, ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৫নং গুপ্টি ইউনিয়নে দিনে দুপুরে বিয়ে বাড়িতে ও ইউনিয়ন বিএনপি নেত্রীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটেছে। এতে করে দুই পরিবারের নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও বিভিন্ন ব্যবহৃত জিনিসসহ প্রায় ১৬ থেকে ১৭ লাখ টাকার জিনিস চোরের দল নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। শুক্রবার (১০ জানুয়ারি ২০২৫) উপজেলার ৫নং গুপ্টি ইউনিয়নের ডোমরিয়া গ্রামের গাজী বাড়ি ও ভোটাল গ্রামের কামিল উদ্দিন বেপারি বাড়িতে ও পাশে রোকেয়ার বাড়িতে দিনের বেলায় এই ঘটনা ঘটে। অভিযোগের আলোকে ডোমরিয়া গ্রামের গাজী বাড়িতে গেলে অভিযোগকারী মো. নূর হোসেন গাজী বলেন, শুক্রবারে আমরা পরিবারের সবাই ছোট ভাই রিপন গাজীকে রামগঞ্জ থানায় বিবাহ করাতে যাই। সেখানে বিবাহের কাজ শেষ করে বিকেল ৪ টার দিকে বাড়িতে এসে দেখি, আমাদের পাকা বাড়ির গেইট, দরজার সমস্ত তালা ভাঙ্গা এবং ঘরের স্টিলের আলমারি, শোকেসের সব তালা ভাঙ্গা, আর ঘরের আসবাবপত্র সব এলোমেলো। চোরেরা ঘরে থাকা নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার সব নিয়ে গেছে। এ সময় রিপন গাজী বলেন, আমার বিবাহের কাজ সম্পন্ন করতে আমরা রামগঞ্জে যাই। সেখানে বিবাহের কাজ শেষ করে চারটার দিকে বাড়িতে এসে দেখি, আমাদের পাকা বাড়ির সব তালা ভাঙ্গা এবং ঘরের জিনিসপত্র সব এলোমেলো। তিনি বলেন, চোরের দল তাদের ঘরে থাকা নগদ ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা, পাঁচটি স্বর্ণের আংটি, তিন জোড়া কানের দুল, একটি স্বর্ণের চেইন এবং ঘরে থাকা বিভিন্ন মালামালসহ প্রায় ১০ লাখ টাকার জিনিস নিয়ে যায়। এ সময় আছলাম গাজী নামের একজন বলেন, এলাকায় কিছু বখাটে ছেলে আছে। যারা প্রতিনিয়ত পাশের বাগানে গাঁজা সেবন এবং বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এদেরকে আটক করে জিজ্ঞেস করলেই এই চুরির তথ্য পাওয়া যেতে পারে। অন্যদিকে নূর হোসেন গাজীর পিতা মুসলিম গাজী চুরি হয়ে যাওয়া মালামালের শোকে কাতর হয়ে বলেন, প্রশাসন চাইলে সবকিছুই পারেন। তিনি আশা করেন, ফরিদগঞ্জ থানা প্রশাসন এ বিষয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিবে। অন্যদিকে একই ইউনিয়নের ভোটাল কামিল উদ্দিন বেপারী বাড়ির পাশে ইউনিয়ন মহিলা দলের সভাপতি রোকেয়ার বাড়িতে একই দিন সকালের কোনো এক সময় বিল্ডিংয়ের তালা ভেঙ্গে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ পেয়ে রোকেয়ার বাড়িতে গেলে দেখা যায়, চুরি হয়ে যাওয়া মালামালের শোকে রোকেয়া পাগলের মত আবোলতাবোল কথা বলছেন। এ সময় রোকেয়া চিৎকার দিয়ে কেঁদে কেঁদে বলেন, তার দীর্ঘদিনের কষ্টের অর্জন চোরের দল সব নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তিনি বিল্ডিংয়ের দরজা, জানালা মেরে বাবার বাড়িতে যান। বাবার বাড়িতে তার প্রয়োজনীয় কাজ সেরে সকাল ১২ টায় নিজ বাড়িতে এসে দেখেন, তার বিল্ডিংয়ের দরজার তালা ভাঙ্গা এবং ঘরে ঢুকে দেখেন তার স্টিলের আলমারি ভেঙ্গে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, কিছু রিয়েল এবং ৭ টা কম্বল সহ বিভিন্ন জিনিস ও কাগজপত্র চোর নিয়ে গেছে। রোকেয়া বলেন, তার ঘর থেকে স্বর্ণের চেইন ২ টা, আংটি ৮ টা, নাকের ফুল ৫ টা, নদ ২ টা, নগদ এক লাখ ৬৬ হাজার সহ প্রায় ৭ লাখ টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে যায় চোর।

জিনিসপত্র চুরির শোকে বর্তমানে রোকেয়া পাগলের মত উল্টাপাল্টা কথা বলছেন। তিনি ফরিদগঞ্জ থানা প্রশাসনের মাধ্যমে চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধারের আশা করছেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান পাটোয়ারীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে আমি গিয়েছি এবং চুরির ঘটনাও সত্য। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, চুরির বিষয়গুলো নিয়ে যেহেতু থানায় অভিযোগ করা হয়েছে, তাহলে এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবো।

পুলিশ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সন্দেহভাজনদের আটকের মাধ্যমে কিংবা অন্য কৌশলে ফরিদগঞ্জের গুপ্টিতে দিনের বেলা সংঘটিত চুরি দুটির সাথে সংশ্লিষ্টদের আটক করতে সক্ষম হবে বলে আমাদের ধারণা। শহরে এমন চোরদের শনাক্ত করতে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) টিভির ফুটেজ দেখা হয়। গ্রামে সেটা নেই। সেজন্যে ফরিদগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রামে দিনে দুপুরে সংঘটিত চুরি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের অবকাশ আছে। চাঁদপুর জেলায় এই চুরি সাধারণত শহরের জনাকীর্ণ পরিবেশে এতোদিন সংঘটিত হবার বিষয়টি জানা গেছে। চোরেরা চাঁদপুর ও হাজীগঞ্জ শহরের জনাকীর্ণ এলাকাকে দিনে দুপুরের চুরির জন্যে বেছে নিয়েছিলো। জনসচেতনতা ও পুলিশের তৎপরতায় বর্তমানে সে চুরি অনেকটা রোধ হয়েছে। বোধকরি সেজন্যে এমন চোরেরা শহর থেকে গ্রামকে এখন টেস্ট কেস হিসেবে নিয়েছে। এতে তারা লাগাতার সাফল্য খুঁজবে। কিন্তু সেটা হতে দেয়া যাবে না। রাতে তো নয়ই, দিনের বেলায় নির্জন পরিবেশের ঘরবাড়ি তালা মেরে যাওয়াটা যে আগের মতো নিরাপদ নয়, সেটা মাথায় রাখতে হবে সকলকে। অগত্যা, অনিবার্য প্রয়োজনে কেউ তালা মেরে গৃহত্যাগ করলেও নিকটতম প্রতিবেশীকে সেটা অবহিত করতে হবে। তার আগে শর্ত এই যে, প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্ক থাকা ও বজায় রাখা। বাস্তবে সেই সুসম্পর্কের পরিমাণও যে অনেক হ্রাস পাচ্ছে নানা দ্বন্দ্বে, সেটাও চিন্তার বিষয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়