প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
হাজীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ বলাখাল, বিশেষ করে সদর ইউনিয়নের অলিপুর গ্রামের খোদ্দের গাঙ এলাকা এবং সংলগ্ন কিছু গ্রামে বর্ষাকালে কচুরিপানাসহ অন্যান্য জলজ আগাছার স্তূপ দিয়ে ভাসমান বেড তৈরি করে তাতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করার ক্ষেত্রে কৃষকদের প্রয়াস প্রায় অর্ধ শতাব্দী কিংবা কমণ্ডবেশি সময় ধরে চলছে। এটা সরকারের কৃষি বিভাগ কৃষকদের শিখিয়ে দিয়েছে কিংবা তাগিদ দিয়ে করিয়েছে এমনটি কিন্তু নয়। কৃষকরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রাসায়নিক সারের ব্যবহার ব্যতীত জৈব সারে কীভাবে আগাম ও অধিক সবজি উৎপাদন করতে পারেন, বস্তুত সে চিন্তা থেকেই উদ্ভাবনী প্রক্রিয়া হিসেবে জলজ আগাছাসহ কচুরিপানা স্তূপ করে ভাসমান বেড তৈরির কাজটি করছেন।
গতকাল দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি পাপ্পু মাহমুদ ভাসমান বেডে সবজি চাষের বিষয়ে সরেজমিন প্রতিবেদন পরিবেশন করেছেন। এ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রতি বছর ভাদ্র মাসে কচুরিপানা স্তূপ করে ভাসমান বেড বানানো হয়। সে বেডে ২০/২৫ দিন পর সবজির বীজ বপন করা হয়। আশি^ন মাসের শেষের দিকে সবজির ফলন আসতে থাকে। শীতের আগাম এ সবজির ব্যাপক চাহিদা থাকে। তাই দামও ভালো পান কৃষকরা। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে এ সবজি দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর হাজীগঞ্জ উপজেলায় ১৫০ হেক্টর জমিতে ভাসমান বেডে লাউ, মিষ্টি কুমড়া ও শসা চাষ করা হয়েছে। ৫০০ থেকে ৫৭০ জন কৃষক এ চাষাবাদে সম্পৃক্ত। কচুরিপানা দিয়ে ভাসমান বেড বানিয়ে সবজি চাষে পতিত জমির ও সময়ের উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত হয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম জানান, ভাসমান বেডে সবজি চাষ করা কৃষকদের সব সময় আমরা সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। কচুরিপানা দিয়ে ভাসমান বেড বানিয়ে সবজি চাষে জমির উর্বরতা বাড়ে। জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয় না। এ পদ্ধতিতে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করা হয়।
ডাকাতিয়া নদীর অববাহিকায় হাজীগঞ্জের তিনটি গ্রামে শুরু হওয়া ভাসমান বেডে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের প্রক্রিয়া এ নদীর অববাহিকায় অবস্থিত অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। তবে ব্যাপকভাবে নয়। এ ব্যাপারে সরকারের কৃষি বিভাগকে পর্যাপ্ত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এর ফলে ডাকাতিয়ায় মাছের চেয়ে কচুরিপানার যে উৎপাদন, সেটার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হবে। সর্বোপরি সরকারের কোনো ব্যয় ছাড়াই ভাসমান বেড তৈরির প্রয়োজনে ডাকাতিয়া নদী হয়ে যাবে কচুরিপানামুক্ত। এতে নৌ চলাচল যেমন সহজতর হবে, মাছের উৎপাদনও বাড়বে।