রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   বয়ারচর সংযোগ ব্রিজ ও বেড়িবাঁধ রক্ষায় এলাকাবাসীর মানববন্ধন
  •   জার্মানিতে কঠিন হচ্ছে রাজনৈতিক আশ্রয়
  •   ইতালির দ্বীপে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ ২১
  •   অভিভাবকহীনতায় দিশেহারা চাঁদপুরের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা
  •   আহতদের দেখতে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

আজ সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী

ইতিহাসে এরশাদের ৯ বছর

অনলাইন ডেস্ক
ইতিহাসে এরশাদের ৯ বছর

বাংলাশের সাবেক সেনাপ্রধান, জাতীয় পার্টি (জাপা)-এর প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ নয় বছর দেশ শাসন করা এরশাদ ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি। ‘আটষট্টি হাজার গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে’ বাক্যের প্রবক্তার নয় বছরের শাসনে কী কী উন্নয়ন হয়েছিলো নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে তা তুলে ধরা হলো।

এরশাদ নেই, কিন্তু এরশাদের উন্নয়নের সূচিত ধারা আজও আছে। আশা করি, নতুন প্রজন্ম এরশাদের ভালো কাজগুলোকে অনুকরণ করে দেশকে এগিয়ে নিবে সমৃদ্ধির পথে। তাঁর শাসনামলে দেশের প্রথম বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন চালু করেন। শিশুদের সাংস্কৃতিক মেধার বিকাশে পথকলি ও নতুনকুঁড়ি তাঁর অবদান। দেশে ৬৪ জেলা ও ৪৬০টি উপজেলা প্রতিষ্ঠিত হয় এরশাদের শাসনকালে। ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকায় প্রথম শেল্টার বাড়ি নির্মাণ করেন তিনি। গুচ্ছগ্রামের (বর্তমানে আশ্রয়ণ) ধারণা তিনি প্রথম প্রবর্তন করেন। পুরোনো বিমানবন্দরে প্যারেড স্কয়ার নির্মাণ হয় তাঁর সময়ে।

তিস্তা বাঁধ তৈরি করেন, ত্রিমোহনি সেতু নির্মাণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশ ঘটাতে তিনি জাতীয় স্মৃতিসৌধের নকশা অনুযায়ী নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেন। বর্তমানের পোশাকশিল্প তাঁর সময় বিকশিত হয়। ঢাকায় প্রথম বেবি হোম তাঁর অনুপ্রেরণায় তৈরি।

এরশাদের আমন্ত্রণে রাণী এলিজাবেথ ও চীনের প্রেসিডেন্ট প্রথম এ দেশে আসেন। তাঁর শাসনকালে বিশ্বের প্রভাবশালী প্রেসিডেন্টরা এ দেশে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। তিনি আমেরিকার হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করে সেখানে বাংলাদেশের পক্ষে ভাষণের সুযোগ পেয়েছিলেন। এছাড়া তিনি ভারতের মতো দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে প্রথম সেনা প্রেরণ করেন।

বাংলাদেশে প্রথম আইএসডি টেলিফোন প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। তাঁর শাসনামলে দেশে প্রথম সার্ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইটি ছাত্রাবাস নির্মাণ করেন। শিল্পকলা একাডেমির বর্তমান আধুনিক ডিজাইনের রূপকার তিনি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগর প্রভাতি সরাসরি ট্রেন সার্ভিস চালু করেন। রাজশাহী বিমানবন্দর চালু হয় তাঁর সময়ে। ওয়ারীতে সুইপারদের জন্যে বহুতল ভবন নির্মাণ করেন তিনি। তাঁর সময়ে নির্মিত হয় মতিঝিল সেনাকল্যাণ ভবন। সন্তোষে বেগম ও ভাসানীকে বাড়ি তৈরি করে দেন তিনি।

গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম তাঁর সময় বিস্তৃতি লাভ করে। সারা দেশে উপজেলা ভবন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ ও উপজেলার ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ হয় তাঁর সময়ে। প্রত্যেক উপজেলায় ১৭ জন অফিসার নিয়োগ ও ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ তিনি করেন। বারডেম হাসপাতাল তাঁর সময় প্রতিষ্ঠা পায়। রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা তাঁর হাতে নির্মিত। ফার্মগেট খামারবাড়ি নির্মিত হয় তাঁর আমলে। গাজীপুরে ধান ও চাল গবেষণা কেন্দ্র হয় তাঁর সময়ে।

সিলেটের ওসমানী মেডিকেল হাসপাতাল, ওসমানী বিমানবন্দরসহ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর হাতে তৈরি। যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বর্তমান বঙ্গবন্ধু সেতুর মাস্টারমাইন্ড তিনি। বুড়িগঙ্গা, কাঞ্চন, হালদা, মেঘনা, গোমতি, কর্ণফুলি, রূপসা, ২য় বুড়িগঙ্গা, টঙ্গি ব্রিজসহ মোট ৪৩টি বড় বড় ব্রিজ এবং উত্তরবঙ্গসহ সারা দেশে উন্নতমানের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা হয় তাঁর শাসনকালে।

মুজিবনগর স্বাধীনতা সৌধ নির্মাণ, ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বর্তমান আদলে ফিরে আসার সূচনা তাঁর সময়ে। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সংস্কারেও তাঁর অবদান রয়েছে। জাতীয় সংসদ ভবনের স্থাপত্য প্রকৌশলী লুই আই কানের নকশা অনুযায়ী সংসদ ভবনের নির্মাণকাজ সমাপ্ত করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তিন নেতার স্মৃতিসৌধ বানিয়েছেন।

আমেরিকান দূতাবাসকে জায়গা দিয়ে বিদেশি দূতাবাসগুলোকে প্লট বরাদ্দের পদ্ধতি চালু করেন এরশাদ। তিনি আহসান মঞ্জিলকে নতুন রূপে সাজিয়েছেন। ‘ডাক্কা’কে ‘ঢাকা’ নামকরণ করেছেন এরশাদ। ঢাকা বিমানবন্দরে ভিভিআইপি টার্মিনাল তাঁর হাতে তৈরি। ঢাকা শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করেন তিনি। সুপ্রিম কোর্ট মাঠে ঈদের জামাত শুরু করেন।

ওসমানী মিলনায়তন এরশাদের আমলে তৈরি। উত্তরা ও বারিধারা হাউজিংয়ের উন্নয়ন ও প্লট বরাদ্দ করেন তিনি। যাত্রাবাড়ি, গাবতলী ও তেজগাঁও বাস টার্মিনাল তৈরি করেন এরশাদ। ঢাকায় এক ডজনেরও বেশি শিশুপার্ক নির্মাণ করেন। ঢাকায় আধুনিক রোড ও ট্র্যাফিক সিগন্যাল তিনি প্রথম স্থাপন করেন। ঢাকায় গরুর গাড়ি দিয়ে ময়লা ফেলার পরিবর্তে ট্রাক প্রবর্তন করেন তিনি। বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সরবরাহের সময়োপযোগী উন্নয়ন তিনি করেছিলেন। তাঁর সময়ে মসজিদণ্ডমাদ্রাসায় বিদ্যুৎ বিল মওকুফ ছিল।

চিটাগং বন্দরে প্রথম নয় মিটার ড্রাফটের জাহাজের জন্যে জেটি ও পাঁচটি নতুন শেড বানিয়েছিলেন তিনি। বিআইডব্লিউটিএ এবং বিআইডব্লিউটিসি-এর মাধ্যমে দেশের নদীপথ ও স্টিমার সার্ভিসের আধুনিকায়ন করেছেন এরশাদ। সারা দেশের গ্রামগঞ্জে পাকা রাস্তা করার জন্যে এলজিইডি নিজে সৃষ্টি করেছেন। অফিস-আদালতসহ সকল ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা প্রচলন আইন তিনি করেছেন। শুক্রবারকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করেন তিনি। চাঁদপুরে মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার তিনিই স্থাপন করেন। তাঁর আমলেই ৬৪ জেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের জায়গা ও অফিস স্থাপন করা হয়।

বাংলাদেশের বাণিজ্য জাহাজগুলোতে দেশের পতাকা প্রথম উড়িয়েছিলেন। রাজশাহী বিমানবন্দর তাঁর হাতে পুনরায় আধুনিকায়ন হয়। সিলেট ও চিটাগং বিমানবন্দরকে বর্তমান রূপ তিনি দিয়েছেন। রেলওয়েকে দুইটি বিভাগে তিনি ভাগ করেছেন। তার সময়ে ৩০টি ইঞ্জিন, ১০৬টি যাত্রী বগি ও এক হাজার ২৫৫টি মালবগি রেলওয়েতে যোগ হয়েছিলো। সারা দেশে ২৭৭টি রেলস্টেশন আধুনিকায়ন করা হয় তাঁর আমলে। ৩য় শ্রেণি অবধি ফ্রি বই তিনি শুরু করেছিলেন। তাঁর শাসনামলের প্রথম দুই বছরে দেশে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হয়। শ্রমজীবী মানুষের জন্যে বছরের দুই ঈদে উৎসব বোনাস তিনিই চালু করেন। রেডিও, টেলিভিশনে পাঁচ ওয়াক্ত আজান প্রচারের ব্যবস্থা তিনিই চালু করেন।

এ রকম ৩৭৭টি বড় বড় কাজ তাঁর নামে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছে। এছাড়া হাজারো স্থাপনা, ব্রিজ, ছোট ছোট সেতু, কালভার্ট তৈরি হয়েছে এরশাদের নয় বছরের শাসনামলে। এত কিছুর মধ্য দিয়ে এরশাদ এই দেশে উন্নয়নের অগ্রযাত্রার সূচনা করেছিলেন। সেই পথ ধরেই একের পর এক রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এরশাদের উদ্যোগে নানা কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ভারতের কোচবিহার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। পরে তাঁর পরিবার রংপুরে চলে আসে। রংপুরেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে ১৯৭১-৭২ সালে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন।

মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ওই বছরই আগস্ট মাসে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে তাঁকে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান হিসেবে নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে এরশাদকে সেনাবাহিনী প্রধান পদে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৭৯ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

সৌজন্যে

মোঃ নান্নু ভুইয়া

সভাপতি

জাতীয় শ্রমিক পার্টি, চাঁদপুর জেলা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়