প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা প্রতিরোধী টিকা নিতে আসা মানুষদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এতে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েও টিকা না পাওয়ায় হাসপাতালের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন টিকা নিতে আসা ব্যক্তিগণ।
টিকা নিতে আসা সাধারণ মানুষের তুলনায় টিকা প্রদানের বুথ কম থাকায় বেগ পেতে হয়েছে সাধারণ মানুষদের। মাত্র ৩টি বুথে টিকা প্রদান করায় উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। এতে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে জনসমাগমের মধ্যেই টিকা নিতে হচ্ছে।
২৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিচতলায় উপচেপড়া ভিড়। হাসপাতালের তিন কর্মকর্তা মোবাইলে ম্যাসেজ প্রাপ্ত ব্যক্তিদের টিকার কার্ড সুরক্ষা অ্যাপে যাচাই করে টিকা গ্রহণের জন্য চূড়ান্ত অনুমতি দিচ্ছেন, যা চলছে একেবারে কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে। এমন ভিড়ের মধ্যে কিছুক্ষণ পর পর টিকা গ্রহীতাদের সাথে ওই কর্মকর্তাদের বাক-বিত-ায় জড়াতেও দেখা গেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গণটিকা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। সকাল ৮টা থেকে টিকা নিতে আসা মানুষের ভিড় ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। সকাল ১০টা থেকে টিকা কার্যক্রম শুরু করার কথা থাকলেও চাপ সামলাতে প্রতিদিন সাড়ে ৯টা থেকেই ৩টি বুথে প্রতিদিন গড়ে ৬৯৫ জনকে টিকা দেয়া হচ্ছে।
টিকা গ্রহীতাদের দাবি, সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। টিকে নিতে আসা আমেনা বেগম নামের এক নারী চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, ছোট পোলাপাইন বাড়িত থুইয়া হেই সকাল ৯টার দিগে আইছি, দুই ঘণ্টার উপরে খাড়াই থাকি এখন মাত্র টিকা দিতাম হাইচ্ছি।
ইকবাল মৃধা নামক আরেক টিকা গ্রহীতা চাঁদপুর কণ্ঠকে বলেন, প্রথম ডোজ দিতে আসার সময় এত সমস্যায় পড়তে হয়নি, কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ দিতে এসে এখানে অনেক ভিড় দেখছি। টিকা নিতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ধাক্কাধাক্কি করে টিকা নিতে হচ্ছে। ব্যবস্থাপনার অভাব বোধ করছি অনেকটা। এখানে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো প্রবণতা নেই।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আশরাফ আহম্মেদ চৌধুরী চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, মানুষকে বারবার বলার পরও তারা কথা মানছেন না। টিকা গ্রহীতাদের ভিড় সামলাতে আমরা থানা পুলিশের সাথে কথা বলেছি পুলিশ বাহিনীর কজন সদস্যকে এখানে দেয়ার জন্য। কিন্তু ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের সদস্য সংখ্যা কম থাকার কারণে তারা তা দিতে পারেনি। ৩টি বুথে টিকা দেয়া হলেও লাগামহীন ভিড় হলে টিকা প্রদানের জন্য রিজার্ভ আরো একটি বুথ রেখেছি। নির্দিষ্ট সময়ের ৩০ মিনিট আগে থেকে টিকা প্রদান শুরু করে আমাদের অফিস টাইম শেষ হলেও আমরা প্রতিদিনই ম্যাসেজ পাওয়া ব্যক্তিদের টিকা প্রধান করা শেষ করি। টিকা গ্রহীতারা নিয়ম মেনে ধৈর্য ধরে লাইনে দাঁড়ালে স্বাথ্যবিধি মেনেই আমরা সবাইকে টিকা দিতে পারবো।
আবেদন করার পর দীর্ঘ সময় পার হওয়ার পরও ভ্যাক্সিনের জন্য অনেকের ম্যাসেজ না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও বয়স্কদের অগ্রাধিকার থাকায় আমরা তাদেরকে আগে ম্যাসেজ পাঠাতে হচ্ছে, তবে যারাই অনলাইনে আবেদন করেছে, আমরা ধারাবাহিকভাবে ম্যাসেজ প্রেরণ করবো।
উল্লেখ্য, ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলতি মাসের ২০, ২১ ও ২২ তারিখে যথাক্রমে ৭৬০, ৬৯০, ৬৩৬ জনকে টিকা প্রদান করা হয়েছে। এই টিকা প্রদান ধারাবাহিকভাবে চলমান রয়েছে। এ পর্যন্ত ১ লক্ষাধিক টিকার রেজিস্ট্রেশন হলেও তার বিপরীতে ২৬ হাজার ৪শ’ ৬১ জন পুরুষ ও ২০ হাজার ৫শ, ৮ জন নারীকে করোনার টিকা প্রদান করা হয়েছে।