বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ৩১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস-২০২৪

‘নতুন বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনার রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ অপরিহার্য

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ॥
 ‘নতুন বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনার রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ অপরিহার্য

জনপ্রত্যাশার ‘নতুন বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনায় উদ্ভাসিত রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ অপরিহার্য। নির্বাচনব্যবস্থা, প্রশাসন কাঠামো ও বিচার ব্যবস্থার আমূল সংস্কার, গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতসহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে পারলেই ‘রাষ্ট্রসংস্কার’ সম্ভব হবে। আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস-২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত ‘নতুন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন : তরুণদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেছেন বক্তারা। একই সঙ্গে বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামোর আমূল পরিবর্তনের স্বার্থে একটি নতুন রাজনৈতিক-কাঠামো প্রয়োজন কি-না সে ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত আসতে হবে এদেশের আপামর জনসাধারণের মধ্য থেকে। এমন মন্তব্য করেছেন আলোচকবৃন্দ।

টিআইবির ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে রোববার অনুষ্ঠিত সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সঞ্চালনায় মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাসনাত আবদুল্লাহ ও আরিফ সোহেল, সমন্বয়ক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন; সামান্তা শারমিন, মুখপাত্র, আরিফুল ইসলাম আদীব, সদস্য, জাতীয় নাগরিক কমিটি। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফারাবি হাফিজ, উপস্থাপক ও গণমাধ্যমকর্মী; সাদাত হোসাইন, তরুণ কথাসাহিত্যিক; শিমু নাসের, গণমাধ্যমকর্মী ও রম্যলেখক। এ ছাড়া ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিআইবির অনুপ্রেরণায় গঠিত ইয়ুথ এনগেইজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস) গ্রুপের সদস্য, গণমাধ্যমকর্মী ও বিভিন্ন মাধ্যমে কর্মরত তরুণ পেশাজীবীরা মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

স্বৈরতন্ত্রের পতনের পর থেকে চলমান দলবাজি, চাঁদাবাজি ও দখলবাজিসহ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূল শিক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক সাম্প্রদায়িক, অসহিষ্ণু ও বহুত্ব পরিপন্থি অগণতান্ত্রিক শক্তির উদ্বেগজনক তৎপরতার উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশের অভীষ্ট অর্জন করতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনার রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ অপরিহার্য। আন্দোলনের মূলধারা থেকে এর নেতৃত্ব বিকশিত হবে, যার প্রতি আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী এ দেশের সকল ছাত্র জনতার সক্রিয় ও স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন থাকবে বলে মনে করি।’

হাসনাত আবদুল্লাহ, সমন্বয়ক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলেন, ‘যারা ক্ষমতায় যান তাদের জনগণ বি শ্বাস করতে চান না, কারণ অতীতের অভিজ্ঞতা তাদের ভালো নয়। আমাদেরকেও তারা সন্দেহের চোখে দেখছেন। এক্ষেত্রে জনগণের দোষ নেই। আন্দোলনের মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারাও এমনটি করবে কি-না সেটিকেও অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্ন করা হচ্ছে। বিগত সরকারের আমলে প্রশ্ন করার এক ধরনের বিনিময় মূল্য ছিলো। কিন্তু আমাদেরকে প্রশ্ন করায় কোনো বিনিময় মূল্য নেই। আমাদের পক্ষের প্রশ্নের জন্যে কেউ প্লট, ফ্ল্যাট বা বিশেষ কোনো সুবিধা পাবেন না। আমাদেরকে প্রশ্ন করবেন, এর মধ্য দিয়ে সংশোধন হবো, সংস্কার ত্বরান্বিত হবে। আমাদের পক্ষের মতামতের তুলনায় যারা আমাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছে, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দ্বিগুণ জরুরি। আমাদের প্রতি আস্থা রাখুন।’

আরিফ সোহেল, সমন্বয়ক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলেন, সাম্য, মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এই আন্দোলন। ১৯৪৭ বা ১৯৭১-এ আমাদের পতাকা পরিবর্তিত হয়েছে, স্বাধীনতা অর্জিত হয়নি। কারণ এর পরবর্তী সকল শাসকের মধ্যেই স্বৈরশাসনের উপাদান ছিলো। এ দেশের জনগণ যারা সবসময় শাসকদের মিথ্যা ভাষ্যের বিপক্ষে লড়াই করেছে, তাদের ভাষাকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি। আমরা মনে করি, ২০২৪-এর আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিবাদের ভাষা তৈরি হয়েছে, যা ২০১৮ তে সম্ভব হয়নি। জনগণের ভাষায় আমরা কথা বলতে পেরেছি বলেই স্বৈরাচারকে সরিয়ে দিতে পেরেছি।’

সামান্তা শারমিন, মুখপাত্র, জাতীয় নাগরিক কমিটি বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ তরুণদের মধ্যে অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষার জন্ম দিয়েছে। এই নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে গণ-আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সবসময় বলা হয়েছে জনগণ ক্ষমতার উৎস, কিন্তু বাস্তবে সেটির প্রতিফলন ঘটেনি। রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারে বাংলাদেশের সকল জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে প্রয়োজনে গ্রামীণ পর্যায়ে, গ্রামীণ আবহে ও অঞ্চলে আলোচনার ব্যবস্থা করতে হবে।’

আরিফুল ইসলাম আদীব, সদস্য, জাতীয় নাগরিক কমিটি বলেন, রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো প্রতিটি নাগরিকের মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করা। সকলে যেন যথাযথভাবে বেঁচে থাকার অধিকার পায়, সামাজিক ন্যায় বিচার পায়। রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহের কাজ হলো জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়া। কিন্তু অতীতে রাষ্ট্রযন্ত্র নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।’

তরুণ কথাসাহিত্যিক সাদাত হোসাইন বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে টেকসই গণতন্ত্র প্রয়োজন। শুধুমাত্র নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র নিশ্চিত হয় না। স্বৈরাচার সরকার দুটি বিষয়ে গুরুত্ব দেয়, এক. অবকাঠামোগত উন্নয়ন দুই. শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের মাধ্যমে বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতিকে অবহেলা করা। শিক্ষাখাতকে এমনভাবে সাজানো হয়, যাতে সাধারণ জনগণ রাষ্ট্রের পলিসি নিয়ে প্রশ্ন করার যোগ্যতা হারায়। তাই বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা ও শুভবোধকে সংহত করা ব্যতিরেকে গণতন্ত্র সংহত করা সম্ভব নয়।’

গণমাধ্যমকর্মী ও রম্য লেখক শিমু নাসের বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে কারও কাজের সমালোচনার জন্য কাউকে যেন সরকারি বাহিনীর নিপীড়নের ভয় পেতে না হয়। গত ১০-১৫ বছরে রাজনৈতিক কার্টুন বিলুপ্ত করে শিল্পীদের বাকস্বাধীনতা খর্ব করেছে। আমরা যেন নির্ভয়ে সমালোচনা করতে পারি। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীরা এই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন, তারা কেমন বাংলাদেশ চান তা আমরা শুনছি না। আমি মনে করি নতুন বাংলাদেশের আইন ও শাসনকাঠামো সকলের কথা ভেবেই প্রণীত বা সংশোধিত হওয়া উচিত।’

উপস্থাপক ও গণমাধ্যমকর্মী ফারাবি হাফিজ বলেন, ‘মানুষের মধ্যে হতাশা দেখতে পাচ্ছি।অথচ রক্তের দাগ শুকায় নি। তাই বলে আমরা রাজশাহীর ঘটনাও মেনে নিতে পারি না। ‘নতুন বাংলাদেশে’ এ জাতীয় প্রতিহিংসামূলক কর্মকাণ্ডের কোনো সুযোগ নেই।’

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়