প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২৪, ০০:০০
মতলবে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় যুবকের মাথা ফাটিয়েছে বখাটেরা
মতলব দক্ষিণ উপজেলার ঘোড়াধারী গ্রামে ভাতিজিকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় যুবক মোশাররফ হোসেন সবুজ বকাউল (৩৫)কে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়েছে স্থানীয় বখাটেরা।
আহত মোশারফ হোসেন সবুজ বকাউল জানান, বখাটে রবিউলের নেতৃত্বে এলাকার কতিপয় মাদকাসক্ত যুবক বাড়িতে গিয়ে এ হামলা চালায়। আহত মোশাররফ হোসেন সবুজ বকাউল ওই ইউনিয়নের পূর্ব ঘোড়াধারী গ্রামের বশির উল্লাহ বকাউলের ছেলে। মোশারফ ৬ মাস আগে বাহরাইন থেকে দেশে আসেন। বখাটেদের হামলায় বর্তমানে তিনি চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার মাথায় চাপাতি দিয়ে কোপানো হয়েছে।
এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে ২৭ জুন একই গ্রামের পুরান বাড়ি নামে পরিচিত আব্দুল হাইয়ের ছেলে রবিউল প্রধানকে আসামী করে মতলব দক্ষিণ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
হাসপাতাল ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, পূর্ব ঘোড়াধারী গ্রামের রবিউলসহ তার সহযোগী ১০ থেকে ১৫ জন যুবক দীর্ঘদিন যাবত এলাকায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে আসছে। বিশেষ করে এলাকার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় পড়ুয়া মেয়েদের আসা-যাওয়ার সময় উত্ত্যক্ত করতো। অসংখ্য অভিযোগের কারণে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সালিস হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
গত রমজান ঈদের আগে অত্র এলাকার ৭ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে স্কুলে যাওয়ার পথে মোবাইলে ছবি ধারণ করে ওই ছবি দিয়ে টিকটক তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দেয় রবিউলসহ তার সহযোগীরা। এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় সালিস হয়। বৈঠকে রবিউলসহ তাদের সহযোগীরা দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরকে শাস্তি দেয়া হয় এবং ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে দেয়া হয়। এরপর থেকে আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠে রবিউল।
ভাতিজিকে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় ২৩ জুন সন্ধ্যায় প্রবাসী মোশাররফ হোসেন সবুজ বকাউলকে ধাওয়া করে তার বসতঘরে ঢুকে এলোপাতাড়ি কুপিয়েছে রবিউলের বখাটে দল।
আহত মোশাররফ হোসেন সবুজ বলেন, গত ঈদুল ফিতরের কদিন আগেও তার ভাতিজিকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করে এবং মোবাইলে তার ছবি তোলে রবিউল। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের জানানো হলে ইউপি সদস্যের মাধ্যমে সালিস করায় ক্ষিপ্ত হয়ে রবিউল ও তার সহযোগী, শরীফ, নাজু, খালেক, আবুল খায়ের, হৃদয়সহ ১০/১২ জন মোশারফকে চাপাতি দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপায়। এতে তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম হয়। এসময় ঘরে থাকা তার স্ত্রী ও তার মা এগিয়ে আসলে তাদের উপরও হামলা করে। এ সময় হামলাকারীরা তার স্ত্রীর গলায় থাকা ১টি স্বর্ণের চেইন ও নগদ ৮০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তাদের আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে সবাই পালিয়ে যায়।
স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মোঃ নূরে আলম বলেন, রবিউলের নেতৃত্বে ১৫ থেকে ২০ জন বখাটে এলাকায় স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় পড়ুয়া মেয়েদের আসা-যাওয়ার সময় বিভিন্ন মোড়ে ও দোকানের নিকট বসে থেকে উত্ত্যক্ত করে। তাদের ছবি মোবাইলে ধারণ করে টিকটক তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দেয়। প্রতিবাদ করলে নানা ধরনের ভয়-ভীতি ও হুমকি ধমকি দেয়। ইজ্জত সম্মানের চিন্তা করে অনেকেই নীরবে সহ্য করে থাকে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য বিল্লাল হোসেন বলেন, রবিউলসহ অধিকাংশ যুবকের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগ। অসংখ্য সালিসেও হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তারা বেপরোয়া হওয়ায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে সাহস পায় না। ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় তারা মোশাররফ হোসেন সবুজের উপর হামলা করেছে।
রবিউলদের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল নাম্বারটিও বন্ধ পাওয়া যায়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মতলব দক্ষিণ থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) ফিরোজ আহম্মেদ মোল্লা বলেন, থানায় অভিযোগ হয়েছে। তদন্ত চলছে।