রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

ফরিদগঞ্জে আদালতের নিষেধাজ্ঞাকৃত সম্পত্তি বিক্রি করলেন বাদী নিজেই

ফরিদগঞ্জ ব্যুরো ॥
ফরিদগঞ্জে আদালতের নিষেধাজ্ঞাকৃত সম্পত্তি বিক্রি করলেন বাদী নিজেই

নিজের দায়ের করা মামলায় আদালত ১৪৫ ধারায় স্থিতাবস্থা জারি করেছে। আদালতের সেই নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করেছেন মামলার বাদী নিজেই। বিবাদীকে আদালতে ব্যস্ত রেখে বাদী নিজেই নিষেধাজ্ঞাকৃত জমির একটি অংশ বিক্রি করে ফেলেছেন। এমন অভিযোগ তুলেছেন মামলার বিবাদী মিজানুর রহমান মামলাটির বাদী শাহাবুদ্দিন বেপারী (সাবু মিয়া/ছফি উল্লা)’র বিরুদ্ধে। ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের লড়াইরচর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের লড়াইরচর গ্রামে মৃত আনা মেয়ার বড় ছেলে লেদু মিয়ার কাছ থেকে ৩০ শতক সম্পত্তি ক্রয় করেন প্রতিবেশী মিজানুর রহমান। কিন্তু সম্প্রতি তার ক্রয়কৃত সম্পত্তি নিজের দাবি করেন লেদু মিয়ার ছোট ভাই সাবু মিয়া। শুরু হয় জমি সংক্রান্ত বিরোধ। বিষয়টি নিয়ে সমাধানের লক্ষ্যে স্থানীয় ভূমি অফিস, থানা ও পঞ্চায়েতের একাধিক বৈঠকে কাগজপত্রের সঠিকতা যাচাই-বাছাই শেষে ওই সম্পত্তি ক্রেতা মিজানুর রহমানের বলে সাব্যস্ত হয়।

কিন্তু স্থানীয় সিদ্ধান্ত মনঃপুত না হওয়ায় সাবু মিয়া চাঁদপুরের আমলী আদালতে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা (১৪১৩/২০২৩) দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ওই সম্পত্তির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু আদালতে চলমান নিষেধাজ্ঞা থাকাবস্থায় মামলার বাদী সাবু মিয়া গত ৫ মার্চ নিজেই নালিশী সম্পত্তি বিক্রি করে দেন অন্যজনের কাছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সাবু মিয়ার বড় ভাই লেদু মিয়া বাড়িতে থাকেন না। বাড়িতে তার পৈত্রিক ও ক্রয়কৃত ৪৭ শতক সম্পত্তি রয়েছে। লেদু মিয়ার টাকার প্রয়োজনে বাড়িতে সম্পত্তি বিক্রি করতে আসলে তার ছোট ভাই সাবু মিয়া ও একটি চক্র সম্পত্তি ক্রয় করবে বলে টালবাহানা করতে থাকে। এক পর্যায়ে বড় ভাই লেদু মিয়াকে মারধর করে ছোট ভাই সাবু মিয়ার পরিবার জোরপূর্বক বেআইনিভাবে সম্পত্তি আত্মসাৎ করার পাঁয়তারা করে। পরবর্তীতে লেদু মিয়ার মালিকানাধীন ৪৭ শতাংশ সম্পত্তি থেকে ৩০ শতাংশ সম্পত্তি মিজানুর রহমানের কাছে বিক্রি করে রেজিস্ট্রি, কাগজপত্র ও দখল বুঝিয়ে দেয়। ক্রয়কৃত সম্পত্তি মিজানুর রহমান খাজনা, খারিজ করে ভোগদখল করে আসছেন। সাবু মিয়ার ভাই লেদু মিয়া বাড়ি থেকে চলে গেলেই উক্ত সম্পত্তি পূর্বের ন্যায় আত্মসাতের পাঁয়তারায় মেতে উঠে সাবু মিয়ার পরিবার।

সাবু মিয়া কর্তৃক হয়রানির শিকার মিজানুর রহমান জানান, আমার প্রতিপক্ষ সাবু মিয়া ব্যক্তি একজন হলেও তিনি বিভিন্ন স্থানে বহু নাম ব্যবহার করেছেন। এমন কি জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। সাবু মিয়ার ভাই লেদু মিয়ার কাছ থেকে আমি সম্পত্তি ক্রয় করেছি। কিন্তু হঠাৎ আমার ক্রয়কৃত সম্পত্তি থেকে সাবু মিয়া সুপারি গাছ কাটা শুরু করে। পরে আমি স্থানীয় পঞ্চায়েত ও থানা পুলিশকে জানালে সকলেই উভয়পক্ষের কাগজপত্র দেখে আমার পক্ষে রায় প্রদান করে। সাবু মিয়া বিষয়টি না মেনে আদালতে মামলা দায়ের করে উক্ত সম্পত্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করায়। কিন্তু সে আমাকে আদালতে ব্যস্ত রেখে নিজেই আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নালিশি সম্পত্তি বিক্রি করেন। এখন চেষ্টা করছেন জোরপূর্বক তা দখলে নেয়ার। বিষয়টি জেনে আমি নিরূপায় হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি। আদালতের নির্দেশ অমান্যের বিষয়ে আদালতকেও অবহিত করবো। তিনি জানান, সাবু মিয়া শুধু একাধিক নামই নয়, একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সাবু মিয়ার মুঠোফোনে বারংবার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সাবু মিয়ার মেয়ে সাথী বেগম জমি বিক্রি ও তার বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রে বিতর্কের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমাদের টাকার প্রয়োজন হয়েছে, তাই সম্পত্তি বিক্রি করেছি। জাতীয় পরিচয়পত্রের বিষয়ে বলেন, আগে তার বাবা অন্য জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করতেন। বর্তমানে আরেকটি ব্যবহার করছেন।

সাবু মিয়ার বড় ভাই লেদু মিয়া মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি ছোট বেলা থেকেই ভাইদের আদর স্নেহ করে আসছিলাম। কিন্তু আমার সেই ভাই আমার বিপদে আমার পাশে থাকবে দূরের কথা, উল্টো তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটি চক্র তৈরি করে আমাকে মেরে ফেলার জন্যে চেষ্টা করছে। তারা আমার সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে এমন ঘৃণ্য কাজ করবে তা কখনোই ভাবতে পারিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, আমার ৪৭ শতাংশ সম্পত্তির মধ্যে মিজানুর রহমানের কাছে ৩০ শতাংশ বিক্রয় করেছি। বাকি সম্পত্তি রয়েছে বাড়িতে। কিন্তু আসতে পারি না আমার ভাই সাবু মিয়ার পরিবারের ভয়ে, তারা আমাকে মেরে ফেলতে পারে।

সাবু মিয়ার পক্ষের সালিস মুরাদ পাটওয়ারী বলেন, সাবু মিয়ার জমি বিরোধের বিষয়ে আমাকে সালিস মেনেছেন। আমরা সকলে মিলে বসে কাগজপত্র পর্যালোচনা করেছি, সাবু মিয়ার ভাই লেদু মিয়ার থেকে মিজানুর রহমান যে ৩০ শতাংশ সম্পত্তি ক্রয় করেছেন তা সম্পূর্ণ বৈধ। লেদু মিয়ার আরো সম্পত্তি আছে। একই কথা জানিয়েছেন স্থানীয় সার্ভেয়ার মুজাম্মেল হোসেন সুমন, গ্রাম্য সালিস, শাহআলম পাটওয়ারী, নাছির উদ্দিন সুমনসহ স্থানীয় বাসিন্দারা।

এদিকে আদালতে চলমান নিষেধাজ্ঞাবস্থায় মামলাটির বাদী সাবু মিয়া সম্পত্তি অন্যজনের কাছে বিক্রির পর ক্রেতাকে ওই সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে গেলে বিষয়টি টের পেয়ে মিজানুর রহমান নালিশি সম্পত্তি রক্ষার্থে থানা পুলিশের আশ্রয় নেয়। লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ।

ফরিদগঞ্জ থানার সহকারী উপ-পুলিশ পরিদর্শক সাদ্দাম হোসেন বলেন, মিজানুর রহমানের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে বলি এবং উভয়পক্ষের কাগজপত্র নিয়ে থানায় আসতে বলে দিয়েছি। মিজানুর রহমান তার মালিকানাধীন সম্পত্তির কাগজপত্র নিয়ে থানায় আসলেও সাবু মিয়া তা কর্ণপাত করেন নি।

এদিকে ফরিদগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) প্রদীপ মণ্ডল জানান, ইতিপূর্বে ওই সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে থানায় মীমাংসার চেষ্টা করেছি আমরা। কিন্তু সাবু মিয়ার অনাগ্রহে তা হয়নি। সর্বশেষ মিজানুর রহমানের অভিযোগটির তদন্ত চলছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়