প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
সম্পর্ক বিসর্জন, মুহূর্তেই উচ্ছেদ এক যুগ ধরে সম্পত্তি রক্ষা করা পরিবার
দুদিন ধরে খোলা আকাশের নিচে উচ্ছেদ হওয়া পরিবার
অর্থলোভে সম্পর্ককে বিসর্জন দিয়ে আপন ভায়রা ও তার পরিবারকে উচ্ছেদ করার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই আরেকজনের কাছে সম্পত্তি বিক্রি করেছে অপর ভায়রা--এমন অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে দীর্ঘ এক যুগ ধরে সম্পত্তি রক্ষার সাথে সাথে ওই সম্পত্তি ক্রয়ের জন্যে টাকা দিয়েও শেষ রক্ষা হলো না স্বপন রায়ের পরিবারের। নিজের ভায়রা বিজয় শীলের লোকজন কর্তৃক বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। ঘটনাটি ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা উত্তর ইউনিয়নের রূপসা বাজারের কুরি বাড়িতে ১১মার্চ সোমবার বিকেলে ঘটলেও ১২ মার্চ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উচ্ছেদের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, ১১ মার্চ সোমবার দুপুরের পর বিজয় শীলের নেতৃত্বে ২০/৩০জনের একদল লোক এসে রূপসা কুড়ি বাড়ির স্বপন রায় ও তার পরিবারের সদস্যদের টেনে হিঁচড়ে ঘর থেকে বের করে দেয়। পরে তাদের ঘরের সমস্ত মালামাল ভাংচুর করে বাইরে ফেলে দেয়। এ সময় তাদের নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার এবং বায়না চুক্তির কাগজসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লুট করে নিয়ে যায়। এ ধরনের ঘটনা এই এলাকায় ইতিপূর্বে ঘটেনি।
মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিন গেলে দেখা যায়, স্বপন রায়ের পরিবারের সকল মালামাল কুড়ি বাড়ির শীতলা মন্দিরের সামনে পড়ে রয়েছে। এর মধ্যে অনেক জিনিসপত্র ভাঙ্গা। বাড়ির লোকজন জানান, ঘটনার পর থেকে তারা খোলা আকাশের নিচেই অবস্থান করছেন।
জানা গেছে, রূপসা উত্তর ইউনিয়নের কুড়ি বাড়ির বিজয় শীল প্রবাসে থাকার কারণে তার পরিবারের সদস্যরা নোয়াখালী জেলার চৌমুহনীতে বসবাস করে। কুরি বাড়ির নিজের সম্পত্তি রক্ষায় প্রায় এক যুগ পূর্বে ফরিদগঞ্জ উপজেলার বার্লিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের শীল বাড়ির ভায়রা স্বপন রায়কে সপরিবারে তার ঘরে বসবাসের জন্যে রূপসায় তার বাড়িতে নিয়ে আসে। এক পর্যায়ে স্বপন রায়ের কাছে সম্পত্তি বিক্রি করবে বলে বায়না চুক্তি ও টাকা লেনদেন হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই সোমবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
স্বপন রায় জানান, তার ভায়রা বিজয় শীলের কথা অনুযায়ী তাদের ঘর বাড়ি রক্ষা, মামলাসহ নানা ঝামেলা মোকাবেলা এতোদিন করলেও সে আমাদের সাথে কোনোরূপ যোগাযোগ না করেই আমাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে দেয়। আমরা এখন দুদিন ধরে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছি। আমাদের সমস্ত আসবাবপত্র ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছে। আমরা পথে বসে গিয়েছি। অথচ আমার ভায়রার সাথে তার বসতবাড়ি আমার কােেছ বিক্রির বিষয়ে কথাও হয়েছে। বায়নাপত্র হয়েছে, টাকাও লেনদেন হয়েছে। সে বিদেশ থেকে আসার পর গত ক’মাস ধরে আমি তাকে রেজিস্ট্রির বিষয়ে বললেও সে কোনো কিছুই বলেনি। কিছুদিন পূর্বে জহর লালের কাছে সম্পত্তি বিক্রি করার জন্যে বায়না করেছে এমন কথা লোকমুখে শুনে তাকে জিজ্ঞাসা করলেও সে সদুত্তর দেয়নি। অর্থলোভে পড়ে সম্পর্ককে ভুলে সোমবার সে নিজে উপস্থিত থেকে আমাদের উচ্ছেদ করলো।
স্বপন রায়ের ছেলে সুশান রায় বলেন, সোমবার তার খালু, খালা ও খালাতো ভাই, জহর লালসহ ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়ে আমাদের মারধর, হামলা ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়নি। তারা অভিযোগ করার কথা বলেছেন।
উচ্ছেদ হওয়া ঘরে বসবাসকারী জহর লাল রবিদাস জানান, তিনি বিজয় শীলের কাছ থেকে তিনমাস পূর্বে বায়না করেছেন এই সম্পত্তি। শর্তমতে সোমবার ঘর খালি করার পর ১২ মার্চ মঙ্গলবার সম্পত্তি রেজিস্ট্রি শেষে ঘরের দখল নিয়েছি। উচ্ছেদের ব্যাপার বিজয় শীলের বিষয়।
স্থানীয় মন্দির কমিটির সভাপতি শান্তি শীল বলেন, এমন ঘটনা কুড়ি বাড়িতে আর ঘটেনি, এটা অমানবিক। আত্মীয় স্বজনদের এভাবে উচ্ছেদ করার পূর্বে এমনকি বাড়ির জমি বিক্রির পূর্বে বাড়ির লোকজনের সাথে যোগাযোগ করা প্রয়োজন ছিলো। বিজয় শীল আমাদের সাথে কোনো যোগাযোগই করেনি।
এ ব্যাপারে বিজয় শীলের মুঠোফোনে কল করলে তার ছেলে শিমুল শীল উচ্ছেদের কথা স্বীকার করে বলেন, বারবার তাদের ঘর ছেড়ে দেয়ার কথা বললেও তারা ঘর ছাড়েনি। তাই আমরা তাদের বের করে দিয়ে সম্পত্তি ক্রেতা জহর লালকে বুঝিয়ে দিয়েছি।
এদিকে ঘটনায় স্তব্ধ স্বপন রায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফরিদগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।