প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে মোঃ কামাল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। কামাল উদ্দিন কচুয়া উপজেলার মাছিমপুর গ্রামের আলী মিয়ার ছেলে। ভুক্তভোগী বিবাদী মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর এলাকার ডাঃ ওমর ফারুক শাহীন। এদিকে এ মামলার সাক্ষীরা জানেন না দায়েরকৃত মামলার খবর। কচুয়া থানার জিডি ও মামলার সূত্র ধরে সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে এমন চাঞ্চল্যকর মামলার তথ্য উঠে আসে।
জিডি ও মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের মৃত আলী আশর্^াদ শেখের ছেলে ডাঃ ওমর ফারুক শাহীনের বিরুদ্ধে কচুয়া থানায় চলতি বছরের ১৮ মার্চ মোঃ কামাল উদ্দিন নামে ওই ব্যক্তি হত্যার হুমকির অভিযোগ এনে একটি জিডি করেন। যার নং ৯৫৪। পরবর্তীতে উক্ত জিডিটি নন-এফআইআর নং ৯৪/২৩ মামলা হিসেবে দণ্ডবিধি আইনের ৫০৬ (২) ধারায় বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেন। উক্ত মামলায় ১নং সাক্ষী করা হয় কচুয়া উপজেলার বক্সগঞ্জ গ্রামের মৃত ইয়াছিনের ছেলে মোঃ গোলামুর রহমানকে এবং ২নং সাক্ষী করা হয় একই উপজেলার পালাখাল গ্রামের আব্দুল মুনাফ মোল্লার ছেলে মোঃ জাকির হোসেনকে। অপর সাক্ষী দেয়া হয় তার আপন শ্বশুর মোঃ আলমগীর হোসেনকে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কচুয়া থানার এএসআই রমজান আলী মামলায় উল্লেখিত সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ করে মামলাটি আদালতে পাঠিয়েছেন মর্মে মামলার নথিপত্রে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু এই মামলার সূত্র ধরে সংবাদ সংগ্রহে গেলে জানা যায়, ২নং সাক্ষী নিজেই জানেন না এই মামলার খবর এবং কেউ তার কাছ থেকে কোনো তথ্য সংগ্রহ করেননি বলেও জানান।
সরেজমিনে গিয়ে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার ১নং সাক্ষী মোঃ গোলামুর রহমান মামলার তারিখ ও বাদীকে হত্যার হুমকি সংক্রান্ত সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
এদিকে মামলার ২নং সাক্ষী মোঃ জাকির হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, মামলার বাদী মোঃ কামাল উদ্দিনের পূর্বে দায়ের করা ৪৭৮/২০২২ নং মামলা তুলে নেয়া বা তাকে হত্যার হুমকি দেয়া সংক্রান্ত কোনো তথ্য আমার জানা নেই। মামলায় উল্লেখিত তারিখ ও সময়ে আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না। কেউ আমার কাছ থেকে কোনো সাক্ষ্যও নেয়নি। এমনকি আমি এ মামলার বিবাদী মতলব দক্ষিণ উপজেলার ডাঃ ওমর ফারুক শাহীনকে কখনো দেখিনি এবং তাকে আমি চিনিও না। জাকির হোসেনের এসব বক্তব্যের একটি ভিডিও ফুটেজ রয়েছে এই প্রতিবেদকদের কাছে।
মামলার বিবাদী ডাঃ ওমর ফারুক শাহীন অভিযোগ করে বলেন, যেখানে মামলার সাক্ষী আমাকে চেনেন না, মামলা সম্পর্কে জানেন না, তাহলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ রমজান আলী কীভাবে সাক্ষীদের সাথে কথা না বলে অনৈতিকভাবে মোঃ কামাল উদ্দিনের পক্ষে একতরফা প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছেন?
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে ডাঃ ওমর ফারুক শাহীন আরও জানান, জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা কচুয়া থানার এএসআই মোঃ রমজান আলী আমাকে ডাকলে আমি কচুয়া থানায় সশরীরে উপস্থিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে আনীত মিথ্যা অভিযোগ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করি এবং জিডিতে উল্লেখিত তারিখে আমি ঢাকার সেগুন বাগিচায় কোয়ালিটি ফার্মাসিউটিক্যালের হেড অফিসে ব্যবসা সংক্রান্ত মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলাম বলে জানাই। সেখানে যাওয়া-আসার বাস টিকেট এবং মিটিংয়ে উপস্থিতি বিষয়ে কোয়ালিটি ফার্মাসিউটিক্যালের প্রত্যয়নপত্রও আমার কাছে রয়েছে। তিনি আরও জানান, আমার বাড়ি থেকে মামলার বাদীর ব্যবসাস্থল কচুয়া উপজেলা প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই বিশাল দূরত্বে আমি একা কিভাবে তিনজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে বাদীকে হত্যার হুমকি দিয়ে নিরাপদে মতলবে ফিরে আসতে পারি? তিনি বলেন, বিষয়টি যে সাজানো তা এ থেকেই অনুমান করা যায়। ইতিপূর্বেও মোঃ কামাল উদ্দিন আমার বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে চেক ডিজঅনারের একটি মামলা করেছেন। মামলা নং ৪৭৮/২০২২ খ্রিঃ। উক্ত মামলায় মোঃ কামাল উদ্দিন হেরে যাওয়ার উপক্রম হলে নতুন করে আবার হত্যার হুমকির মতো একটি মিথ্যা জিডি করেন। এটা আমার সামাজিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপপ্রয়াস মাত্র।
মামলা সম্পর্কে তথ্য জানতে মামলার বাদী মোঃ কামাল উদ্দিনের সাথে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে (০১৯৭৬১৬৭৮৩৭) যোগাযোগ করলে তিনি মামলার সকল তথ্য সঠিক বলে জানান। সাক্ষীরা বিবাদীকে চিনেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই চিনেন এবং মামলা সম্পর্কে অবগত আছেন। আর বিষয়টি আদালতে প্রমাণ হবে।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ রমজান আলী বলেন, বাদী মোঃ কামাল উদ্দিন জিডি করার সময় আমাকে সাক্ষীদের নাম সরবরাহ করেন। আমি তাদের সাথে কথা বলে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্যের সঠিকতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত নেবে।