সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

 ‘মানুষেকে অতি সহজে আপন করার মতো সম্মোহনী শক্তির অধিকারী ছিলেন সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারী’
স্টাফ রিপোর্টার ॥

বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার অভিব্যক্তি প্রকাশের মধ্য দিয়ে গতকাল ২৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার পালিত হয়েছে চাঁদপুর অযাচক আশ্রমের প্রয়াত অধ্যক্ষ সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারীর তৃতীয় মহাপ্রয়াণ দিবস। এদিন সকালে অখণ্ড মণ্ডলেশ্বর শ্রীশ্রীমৎ স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের আশ্রিত গুরু ভ্রাতা, গুরু ভগ্নি, সুধীজন ও প্রয়াত সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারীর শুভানুধ্যায়ীদের ব্যাপক উপস্থিতিতে প্রয়াতের আত্মার শান্তি কামনায় অযাচক আশ্রম চাঁদপুরে অনুষ্ঠিত হয় সমবেত প্রার্থনা, নীরব নামযজ্ঞ, হরিওঁ কীর্ত্তন, অখণ্ড সংহিতা পাঠ, প্রয়াতের স্মরণে স্মৃতিচারণ ও প্রসাদ বিতরণ।

স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর চরিত্রগঠন আন্দোলন পরিষদের উপদেষ্টা দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক রোটারিয়ান কাজী শাহাদাত। তিনি প্রয়াত সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তিনি ছিলেন একজন মানবদরদী শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি এবং সম্মোহনী শক্তির অধিকারী। তিনি অতি সহজেই যেকোন মানুষকে আপন করে নিতে পারতেন তাঁর কর্মদক্ষতা সম্পন্ন ও সুন্দর আচরণ দিয়ে--সেই ব্যক্তি হিন্দু বা মুসলিম যেকোন ধর্মের লোকই হোক না কেন। তিনি মানুষকে ভীষণভাবে ভালোবাসতেন, আর মানুষও তাকে ভীষণভাবে ভালোবাসতো। এ প্রসঙ্গে তিনি একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, একদিন এক লোক আমার কাছে এসে সালাম জানিয়ে বললেন, আমি আপনার পত্রিকায় একটি লেখা প্রকাশ করতে চাই। আমি বললাম, কী বিষয়ে ? তিনি বললেন, চাঁদপুর অযাচক আশ্রম ও অধ্যক্ষ সুখরঞ্জনকে নিয়ে। আমি তার কথা শুনে রীতিমত অবাক হয়ে গেলাম। বললাম, তিনি হিন্দু আর আপনি মুসলিম, তাকে নিয়ে কী এমন বিষয় থাকতে পারে যে পত্রিকায় লিখতে হবে। তিনি বললেন, আশ্রমের অধ্যক্ষ একজন মানবদরদী লোক। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্যেই পত্রিকায় তার বিষয়ে লেখা ছাপাতে চাই। তিনি নির্দ্বিধায় বলতে থাকলেন, আমি যখন চাঁদপুর শহরে পড়তে আসি, তখন আমি খ্বুই অসহায় অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলাম, কেউ আমার পাশে এসে দাঁড়ায়নি। অথচ তিনি আমার সমস্যার কথা শুনে আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং সম্ভাব্য সকল প্রকার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, আমি আপনাকে আশ্রমে স্থান দিতে পারবো না। তবে সাধ্যমত সবরকম সহযোগিতা করতে চেষ্টা করবো। তিনি তাঁর কথা রেখেছেন। তাঁর সহযোগিতায় আমি আজ সফলতা পেয়েছি, তাই তাঁর প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই। তাঁর কথা শুনেই আমি প্রথমবারের মত জানতে পারি একজন সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারী সম্পর্কে। লেখা প্রকাশ হওয়ার পর সুখরঞ্জন বাবু আসেন আমার সাথে দেখা করার জন্যে, প্রথমবারের মত পরিচয় হই তার সাথে। বুঝতে পারলাম তিনি বহুগুণে গুণান্বিত একজন মানুষ। প্রথম পরিচয় থেকে মৃত্যুর শেষ পর্যন্ত এই মানুষটি তাঁর ভালোবাসা দিয়ে আপন করে নিয়েছিলেন আমাকে। সেই পরিচয় আর তাঁর ভালোবাসা আজো মনে করিয়ে দেয় তাঁর আপনত্বের কথা। আজো ভুলতে পারিনি এই সদা হাস্যোজ্জ্বল মানুষটিকে। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের প্রিয় জন্মস্থানকে নিয়ে, যেখানে গড়ে উঠবে বিশ্বনন্দিত একটি নান্দনিক মন্দির, যেখানে দেশ-বিদেশের ভক্তগণ আসবেন, দেখবেন, আর তৃপ্তি নিয়ে বাড়ি ফিরবেন। আজ তার গুরু ভ্রাতা, ভগ্নিগণ তা নির্মাণে এগিয়ে যাচ্ছেন, অথচ আজ সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারী নেই। তিনি ঘুমিয়ে আছেন তারই আরাধ্য প্রাণপ্রিয় অখণ্ড মণ্ডলেশ্বর শ্রীশ্রীমৎ স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের প্রিয় জন্মস্থানে। কী অদ্ভুত বাস্তবতা! জন্ম নিলেন বরিশালের পিরোজপুরে আর চির নিদ্রায় শায়িত হলেন স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের জন্মধন্য চাঁদপুরে। তিনি বলেন, সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারী সত্যিই একজন ভাগ্যবান মানুষ ছিলেন, যাদেরকে তিনি জীবনভর ভালোবেসেছেন, শেষ সময়ে তারাই তাঁকে নিজেদের মনের মত করে স্বরূপানন্দের জন্মস্থানে থাকার জায়গা করে দিয়েছেন। কাজী শাহাদাত প্রয়াত সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারীর ইচ্ছেগুলো পূরণে সচেষ্ট হওয়ার জন্যে তাঁর গুরুভ্রাতাদের প্রতি অনুরোধ জানান এবং অযাচক আশ্রমের ইতিহাস সংরক্ষণে অজয় কুমার ভৌমিক, সুভাষ চন্দ্র রায়, অ্যাডঃ বিনয় ভূষণ মজুমদারসহ যারা যারা অযাচক আশ্রম সম্পর্কে অবহিত রয়েছেন, তাদের কাছ থেকে অডিও/ভিডিও রেকর্ড কিংবা লেখা সংগ্রহের জন্যে আশ্রম কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান।

অযাচক আশ্রম পরিচালনা পর্ষদের সহ-সভাপতি দুলাল চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে ও অযাচক আশ্রম বোর্ড অব ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক চাঁদপুর ল্যাব্রটারী স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মৃনাল কান্তি দাসের সঞ্চালনায় অতিথিদের মাঝে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর হরিবোলা সমিতির সভাপতি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অজয় কুমার ভৌমিক, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি জীবনদীপের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডঃ বিনয় ভূষণষ মজুমদার, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রনজিত রায় চৌধুরী (পিপি), সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের চাঁদপুর শাখা সভাপতি তপন সরকার, চাঁদপুর কণ্ঠের চীফ রিপোর্টার বিমল চৌধুরী, অযাচক আশ্রমের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডঃ পলাশ কুমার মজুমদার, জেলা সম্মিলিত অখণ্ড সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রোটাঃ গৌতম কুমার সাহা, সদস্য অঞ্জন কুমার দাস, গৌতম কুমার ঘোষ প্রমুখ।

এ সময় অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডঃ নূরুল আমিন দেওয়ান, অযাচক আশ্রম পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার দাস, সদস্য অরুন কুমার ঘোষ (হরিওঁ), মৃদুল কুমার দাস, প্রণব সাহা, সঞ্জয় সাহা, মনতোষ সাহা, সঞ্জয় দাস, প্রিয় রঞ্জন ত্রিপুরাসহ আশ্রম পরিচালনা পর্ষদের নেতৃবৃন্দ। স্মৃতিচারণের পূর্বে অযাচক আশ্রমে সমাহিত প্রয়াত সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারীর সমাধিস্থলে নেতৃবৃন্দ ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদানের মধ্য দিয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়