প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শিক্ষার্থীদের নিজেদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসনে প্রধান শিক্ষকের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা এবং উল্টো শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনার ব্যাপারে এক অভিভাবকের দায়ের করা অভিযোগের বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত হয়েছে। ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরের মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা স্কাউটস্ কমিশনার হাছিনা আক্তার ডলির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ দায়ের করেন ওই বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীর অভিভাবক সুমন শীল। অভিযোগের আলোকে চাঁদপুর জেলা শিক্ষা অফিসের এডিপিইও মোঃ রবিউল আলমের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ২৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার বিভাগীয় তদন্ত করেন।
জানা গেছে, অভিযোগকারী ফরিদগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী সুমন শীল নিজের দুই সন্তানের পড়ালেখার জন্যে গ্রাম থেকে উপজেলা সদরের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করান। কিন্তু গত ২৩ জুলাই প্রথম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছোট ছেলে ঋজু-এর স্কুল ব্যাগ ডাস্টবিনে ফেলে দেয় একই ক্লাসের সিয়াম। ঘটনা জেনে ঋজুর ভাই একই স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ঋক ব্যাগ উঠিয়ে নিয়ে আসে এবং সিয়ামকে চড় মেরে শাসন করে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের উপস্থিতিতে সিয়ামের নানী ঋককে সিয়ামের কাছে ক্ষমা চাওয়ায় এবং পরবর্তীতে সিয়ামের বাবা রুবেল শিক্ষকদের সামনেই পুনরায় ঋককে মারধর করে এবং ধাক্কা দিয়ে দেয়ালে ফেললে সে আহত হয়। আবার এই ঘটনা যাতে ঋজু-ঋকের বাবা-মাকে না জানানো হয় সেজন্যে প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকরা তাদের দুই ভাইকে শাসিয়ে দেয়। বিষয়টি জেনে ঋক ও ঋজুর বাবা সুমন শীল পরবর্তীতে বিদ্যালয়েরর প্রধান শিক্ষকের কাছে গিয়ে প্রতিকার চাইলে তিনি রূঢ় আচরণ করেন। এমনকি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে গিয়েও কোনো ফল পাননি। ফলে বাধ্য হয়ে গত ২ আগস্ট প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন।
এ ব্যাপারে সুমন শীল জানান, সিয়ামের অভিভাবক রুবেলসহ অন্যরা ওই দিনের ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে। কিন্তু সহকারী শিক্ষকদের বিশেষ করে প্রধান শিক্ষকের অশিক্ষক সুলভ আচরণ তাকে ব্যথিত করেছে। শিশুরা অনেক কিছুই না বুঝে করে ফেলে। স্কুলে থাকাকালীন শিক্ষকদের দায়িত্ব বাবা-মায়ের আদর দিয়ে তাদের শাসন ও বোঝানো। কিন্তু তারা উল্টো আচরণ করেছেন। তাই বাধ্য হয়ে লিখিত অভিযোগ করেছি। আর যেন কোনো শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক এমন ঘটনার শিকার নয় হয় সেই কারণে আমি সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি কামনা করছি।
এদিকে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ওই স্কুলের আশে-পাশের অনেক অভিভাবক ও স্থানীয়রা জানান, মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ১৭-১৮ বছর হাছিনা আক্তার ডলি প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকুরির সুবাদে তার স্বেচ্ছাচারিতা ও অভিভাকদের সাথে অশোভনীয় আচরণের কথা এখন সবাই অবগত। কিন্তু এরপরও অদৃশ্য ক্ষমতার কারণে কেউ মুখ খুলতে রাজি নয়। সুমন শীলের অভিযোগের বিষয়টি নিষ্ঠার সাথে তদন্ত করলে প্রধান শিক্ষকের মুখোশ খুলে যাবে।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ জহিরুল ইসলাম ৩ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের জানান, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তদন্ত করছে। আমি শুধু তদন্ত কর্মকর্তাদের সহায়তা করেছি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা শিক্ষা অফিসের এডিপিইও মোঃ রবিউল আলম ৩ সেপ্টেম্বর রোববার সাংবাদিকদের জানান, অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঘটনা সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলেছি। তদন্ত প্রতিবেদনের রিপোর্ট প্রক্রিয়াধীন আছে। বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।