প্রকাশ : ২০ মে ২০২৩, ০০:০০
চাঁদপুর জেলা সদরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রায় ৩২১টি পরিবারের বসবাস। এক সময় এসব পরিবারের লোকজন অবহেলিত থাকলেও বর্তমান সরকারের নানা সহযোগিতার কারণে তাদের জীবনমান পরিবর্তন হয়েছে। শিক্ষিতের হার বেড়েছে এবং অনেকেরই কর্মসংস্থান হয়েছে। নদী ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো পর্যায়ক্রমে পাচ্ছে মাথা গোঁজার ঠাঁই। সমাজের মূলধারার জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করছেন তারা।
চাঁদপুর সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের বসবাস। এখানে তারা একটি কমিউনিটি গড়ে তুলেছে। ‘ত্রিপুরা জাতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে উপজেলার অধিকাংশ পরিবার সরকারি বিভিন্ন সহায়তা নিচ্ছে।
বর্তমানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ছেলেমেয়েরা সরকারি সহায়তায় বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি, মৎস্য পালন প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ২০ পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে এই আদিবাসীদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষা উপকরণ, উপ-বৃত্তি ও পরিবহন হিসেবে অর্ধশতাধিক বাইসাইকেল দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিন সদরের বালিয়া ইউনিয়নের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি পরিবারের সদস্যরা ক্ষুদ্র ব্যবসা কিংবা কৃষি কাজ করছেন। তাদের বসতঘরগুলোও খুবই সুন্দর। অনেকেই পশু পালন করেন। সরকারিভাবেও দেয়া হয়েছে গবাদি পশু। প্রত্যেকের সন্তান বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। কেউ স্কুলে, কেউ কারিগরি আবার কেউ কলেজে পড়ছেন। বাড়িতে বিদ্যুৎ আছে এবং বিশুদ্ধ পানির জন্য গভীর নলকূপ দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা নেন স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে। তারা স্থানীয় মুসলিম পরিবারগুলোর সঙ্গে মিলেমিশেই বসবাস করেন।
বালিয়া গ্রামে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর খোকন ত্রিপুরা বলেন, তাদের বাড়ি ছিল সদরের ১২নং চান্দ্রা ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামে। মেঘনার ভাঙনের শিকার হয়ে তারা বেশ কয়েকটি পরিবার চলে আসেন বালিয়া গ্রামে। ১৯৯১ সাল থেকে তারা একটি কমিউনিটির মাধ্যমে আছেন। যার কারণে তারা এখন সরকারি সকল সহযোগিতা পান। তার ৪ ছেলে ১ মেয়ে। সবাই স্কুল ও কলেজে অধ্যয়নরত। মেয়ে উজ্জ্বল রাণী উচ্চ মাধ্যমিকে পড়েন। তাদের প্রত্যেক পরিবারের সন্তানরাই এখন শিক্ষার আওতায়।
ওই গ্রামের দুই শিক্ষার্থী ঋদিতা ৭ম শ্রেণিতে ও নির্ঝর দেবী স্নেহা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে পার্শ্ববর্তী বালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। এক সময় তারা কয়েক মাইল হেঁটে বিদ্যালয়ে যেত। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে বাইসাইকেল দেয়ার পর এ কষ্ট হচ্ছে না। গত দুই বছর সাইকেল চালিয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে তারা। তারা খুবই আনন্দিত।
একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়ে মিথিলা ত্রিপুরা। মিথিলা জানায়, পড়ালেখার পাশাপাশি কম্পিউটার শেখার ব্যবস্থা আছে বিন্যামূল্যে। ত্রিপুরা জাতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার কার্যালয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কম্পিউটারের প্রশিক্ষণ নেয়ার ব্যবস্থা থাকায় অনেক শিক্ষার্থীর কম্পিউটার শেখার সুযোগ হয়েছে।
চাঁদপুর সদর ত্রিপুরা জাতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কর্ণরাজ ত্রিপুরা বলেন, সরকারি সহযোগিতার কারণে তাদের অনেকের মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। আবার অনেক পরিবারকে নতুন করে ঘর দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। তাদের সন্তানরা শিক্ষিত হচ্ছে। এখন তাদের সরকারি চাকরির বিষয়ে সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজ বলেন, এক সময় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিবারগুলো অবহেলিত ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বর্তমান সরকার বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করায় তাদের জীবনমান অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তাদের বাসস্থান করে দেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। তাদের সন্তানদের উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে। শিক্ষা ও খেলাধুলা সামগ্রী দেয়া হচ্ছে। নাগরিক হিসেবে তাদের মৌলিক চাহিদার ঘাটতি থাকছে না। তাদেরকে সমাজের মূল স্রোতধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
প্রতিবেদক : মুহাম্মদ মাসুদ আলম। স্বত্ব : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম।