প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
নিয়মিত পত্রিকা বিক্রি করাটা রুটিনে পরিণত হয়েছে মোঃ আঃ বারেক হাওলাদারের। ভোরের আলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দিন শুরু হয় তার। কাকডাকা ভোর থেকে পত্রিকা নিয়ে তাকে ছুটতে হয় গ্রাহকের দুয়ারে। ঝড়-বৃষ্টি, গরম কিংবা শীত এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে না।
চাঁদপুরের বেশ ক’জন পত্রিকার হকারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাদের দুঃখণ্ডদুর্দশার কথা। মোঃ আঃ বারেক হাওলাদারসহ অন্য বিলিকারকদের কথা প্রায় একই। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী প্রতিদিন পাত্রিকা বিক্রি করে ৩০০-৩৫০ টাকা আয় হয়। এই টাকা দিয়ে চাঁদপুর শহরে একজন মানুষের চলা মুশকিল, পরিবার থাকলে কঠিন বিপদ। অসুস্থ হলে দেখার কেউ নেই। তাছাড়া আজকাল কেউ কারো খবর রাখে না। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত।
২০ বছরের বেশি সময় ধরে পত্রিকা বিক্রি করছেন আঃ বারেক হাওলাদার। সকালে বাড়ি বাড়ি পত্রিকা বিলি করেন। বাকি সময় অন্য কাজ করে যে টাকা পান তা দিয়ে সংসার চলে না বলে জানান তিনি। ‘ছোট বেলা থেকেই পরিশ্রম করছি, এখন আগের মতো পরিশ্রম করতে পারি না’ জানিয়ে তিনি বলেন, সব জিনিসের দাম বাড়ে কিন্তু আমাদের কমিশন বাড়ে না। ২টাকা থেকে পত্রিকা ১২ টাকা হয়েছে, সবার লাভ বেড়েছে। কিন্তু হকারদের আয় বাড়েনি। আর গ্রাহকও আগের মতো পত্রিকা পড়ে না। কেন পড়ে না জানতে চাইলে তিনি জানান, পাঠকরা বলে, পত্রিকা একমুখী হয়ে গেছে। সবসময় সরকার দলীয় কথাই ছাপানো হয়। অন্য দলের খবর দেখা যায় না। তৃণমূল মানুষের সুখণ্ডদুঃখের কথা নাই। যে হারে দ্রব্যমূল্য বেড়ে চলেছে তার কোনো খবর, ফলোআপ নাই। তোগো সম্পাদকেরা আর কত সরকারের তেল মারবো! যে যেমনে পারছে দুর্নীতি লুটপাট করে খাচ্ছে-পত্রিকায় এ সবের কোনো খবর নাই। এভাবে গ্রাহকদের কথা শুনি। তারপরও পত্রিকা গ্রাহকের দুয়ারে নিয়মিত দিয়ে আসি।
আঃ বারেক বলেন, এজন্যে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। আমরা আগে তিন ভাই এ কাজে যুক্ত থাকলেও এখন আমরা দুভাই আছি। বাকি দুজনের একজন চাকরি করেন। আমরা পত্রিকা বিলি করি বিধায় অনেক গ্রাহক ভালো আচরণ করেন না। আর পত্রিকার মালিকেরা এখন পত্রিকা প্রিন্ট করেই খালাস, পাঠক বৃদ্ধি করার উদ্যোগ তারা নেন না। যে কারণে বিক্রির পরিমাণও দিনে দিনে কমছে।
১৯৯০ সালে আঃ বারেক হাওলাদারের বাবা ইন্তেকাল করেন। বাবার মৃত্যুর পর মায়ের আঁচলেই তারা ৯ ভাই-বোন বড় হন। তিনি বলেন, আমি পড়ালেখা বেশি করতে পারি নি। বড় ভাইয়ের সাথে ১৯৯৮ সাল থেকে পত্রিকা বিলির কাজে লেগে আছি আজও। এ পেশায় এসে ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। দিন দিন পত্রিকার কদর কমছে। মানুষজন এখন অনলাইনের খবরে ঝুঁকছে। দু সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। বড় ছেলে মোঃ ওমর ফারুক মাদ্রাসায় ৫ম শ্রেণিতে পড়ে। আর ছোট ছেলে মোরছালিন ২ বছর বয়সী। বর্তমানে আমার বয়স ৩৮। কোন্দিন আবার কর্ম থেমে যায়। আমাদের অবস্থা কাউকে বুঝাতে পারবো না। এখনই পত্রিকার মালিক ও গ্রাহকরা আমাদের খবর নেন না। যখন অক্ষম হয়ে যাবো তখন কে আর খবর রাখবো।
মোঃ আঃ বারেক হাওলাদার চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের বাগাদী গ্রামের মৃত আঃ মান্নান হাওলাদার ও নূর জাহান বেগমের পুত্র।