প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক সমন্বয় আন্দোলন (বিএমটিসিএম) চাঁদপুর জেলা শাখার আয়োজনে ‘আলিয়া মাদ্রাসার স্বতন্ত্র-স্বকীয়তা ও শিক্ষকদের পেশাগত মানোন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী চাঁদপুর প্রেসক্লাব ভবনের এলিট চাইনিজ রেস্টুরেন্টে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুল কাদির। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা জাতির জন্য মাইলফলক। এ সকল মাদ্রাসার সাথে হাজারো আউলিয়া কেরামের চোখের পানি রয়েছে। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এই মাদ্রাসাগুলো আজ দৃশ্যমান হয়েছে। সে সকল প্রতিষ্ঠানের আরবি প্রভাষকগণ মাদ্রাসার প্রাণ। আরবি প্রভাষকগণ যদি যথাযথ মূল্যায়ন না পায়, তাহলে মাদ্রাসা শিক্ষা হুমকির সম্মুখীন হবে। সেই মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী ধরে রাখতে আরবি প্রভাষকগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। তাদের অধিকার আদায়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক সমন্বয় আন্দোলন। আমি তাদের এ সংগঠন এবং ১১ দফা আন্দোলনকে যৌক্তিক মনে করেছি। কেননা কারো না কারো নেতৃত্বে আমাদের অধিকার আদায়ের কথা সরকারকে জানাতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আজ স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার মধ্যে বৈষম্য রয়েছে। অথচ দাখিলের সাথে এসএসসির মান দেয়া হয়েছে। কিন্তু এবতেদায়ীতে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা কোনো উপবৃত্তির টাকা পায় না। কিন্তু একটি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তির টাকা পায়। এখানে বৈষম্যটা ফুটে উঠেছে। তিনি বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষক সমন্বয় আন্দোলন যেহেতু চাঁদপুর থেকে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, কাজেই নেতৃবৃন্দ আরবি প্রভাষকগণের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে দাবি উপস্থাপন করুন। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থায় আন্তরিক। যেহেতু তিনি চাঁদপুরের, দাবি তুলে ধরার সময় এখনই।
সংগঠনের চেয়ারম্যান আল্লামা মাহফুজ উল্যাহ খান ইউসুফীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ সাইফুল ইসলাম সোহেল ও চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ আইয়ুব আলী বেপারী। আরো বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল মাওঃ সালাহউদ্দিন চাঁদপুরী, ঢাকা বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়ক মাওঃ নূর মোহাম্মদ জুনায়েদ ও সদস্য সচিব মাওঃ ফাহিমুর রহমান। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা সভাপতি মাওঃ মোঃ মোশাররফ হোসাইন। অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আনম ফখরুল ইসলাম মাসুম, ফরিদগঞ্জ মানুরী ফাযিল মাদ্রাসার প্রভাষক মাওঃ মোঃ সফিকুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে সংগঠনের জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওঃ জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন মাওঃ মোহাম্মদ আলী। সংগঠনের জেলা সভাপতি মাওঃ মোঃ মোশাররফ হোসাইন এমফিল ডিগ্রি অর্জন করায় বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক সমন্বয় আন্দোলন চাঁদপুর জেলা কমিটির পক্ষ থেকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক সমন্বয় আন্দোলন আত্মপ্রকাশ করেছে ২০১৭ সালে। তাদের ১১ দফা দাবি নিম্নে তুলে ধরা হলো : ১. জনবল কাঠামো ২০১৮ (মাদ্রাসা) সৃষ্ট পদ সমূহে নিয়োগের লক্ষ্যে স্কুল ও কলেজের ন্যায় প্রজ্ঞাপন জারি করা; ২. প্রভাষকদের চাকুরির মেয়াদ ১০ বছর পূর্তিতে বেতন কোড-৭-এ টাইমস্কেল প্রদান করা; ৩. প্রভাষকদের চাকুরির মেয়াদ ১৬ বছর পূর্তিতে বেতন কোড-৬-এ দ্বিতীয় টাইমস্কেল প্রদান করা; ৪. সহকারী অধ্যাপকের ক্ষেত্রে ৫:২ সমীকরণ বাতিল করা ; ৫. সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ৫:২ চালু করা; ৬. আলিম মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগে সুপার ও সহ-সুপারদের অভিজ্ঞতা বাতিল করা; ৭. জনবল কাঠামো-২০১৮ (মাদ্রাসা) বর্ণিত সকল সুবিধা চালু করা; ৮. বেসরকারি শিক্ষক ট্রান্সফার পদ্ধতি চালু করা; ৯. মাদ্রাসার আরবি বিষয়ের শিক্ষকদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা ; ১০. বিএমটিটিআই-এর আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা; ১১. সরকারি কলেজ প্রভাষকদের ন্যায় মাদ্রাসা প্রভাষকদের উচ্চতর ডিগ্রির যথাযথ মূল্যায়ন করা।