প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
প্রায় ৬ বছর বন্ধ থাকার পর ফের চালু হয়েছে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অপারেশন থিয়েটার। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার একান্ত প্রচেষ্টা ও ব্যক্তিগত আর্থিক সহযোগিতায় এই অসাধ্য সাধন হতে চলছে। ২০১৫ সাল থেকে উক্ত হাসপাতালের সকল ধরণের অপারেশন বন্ধ ছিলো। গত বৃহস্পতিবার রাখি সাহা নামের এক নারীর সিজারের মাধ্যমে অপারেশন থিয়েটার চালু করা হয়েছে। একইদিন অপর এক নারীর সিজার ও আরেক জনের হার্নিয়ার অপারেশন করা হয় এ দিন। ওটি চালু হওয়ার কারণে উপজেলার প্রায় ৪লাখ মানুষ সরকারি চিকিৎসাসেবা নিতে পারবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উক্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটারটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রাখা হয়। এতে করে অ্যানেসথেসিয়া যন্ত্র, ডায়াথার্মি মেশিন, সাকার মেশিন, হাইড্রোলিক ওটি টেবিল, অটোকেভ যন্ত্র, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি), স্ট্যান্ডবাই ওটি ও সিলিং লাইট, স্ট্যাবিলাইজারসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ, বৈদ্যুতিক লাইন অকেজো ও অপরাশেনের বিভিন্ন সরঞ্জাম বহুলাংশে নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে উপজেলার বৃহৎ জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ওটির চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিল। যার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় গরিব ও অসহায় রোগীদেরকে। তারা উপজেলা সদরে গড়ে ওঠা বেশ কয়েকটি ক্লিনিকে সকল অপারেশন করতে গিয়ে গলাকাটা বিলের মুখোমুখি হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসাবে ডাঃ মোঃ গোলাম মাওলা যোগদানের পর ওটির বিষয়টি নজরে আনেন। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকায় যন্ত্রাংশসহ অপারেশন থিয়েটারের সবকিছুই প্রায় অকেজো হয়ে পড়ে। তার পরেই ডা. মোঃ গোলাম মাওলা তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে শুরু করলেন অপারেশন থিয়েটার কক্ষের সংস্কার কাজ। ওটি রুমে স্যানেটারি ও বিদ্যুৎ লাইনের সংস্কার, ওটির যন্ত্রাংশ সংগ্রহ, ডায়াথার্মি মেশিন, সাকার মেশিন, হাইড্রোলিক ওটি টেবিল, অটোকেভ যন্ত্র, স্ট্যান্ডবাই ওটি ও সিলিং লাইট, স্ট্যাবিলাইজারসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশের কিছু মেরামত ও কিছু নতুন করে কিনতে হয়েছে। এক পর্যায়ে টাকার অভাবে অ্যানেসথেসিয়া মেশিন ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের (এসি) অভাবে চালু করা যাচ্ছিলনা অপারেশন থিয়েটার। অবশেষে এই কর্মকর্তার নিজস্ব অর্থায়নে এসব যন্ত্রাংশ ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় দেড় লাখ টাকা ব্যয়ে অ্যানেসথেসিয়া মেশিন ও শীতাতপ যন্ত্র (এসি)সহ আনুষঙ্গিক প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয় করে, তা অপারেশন থিয়েটার কক্ষকে নতুন করে চালু করেন।
হাসপাতালের প্রথম সিজারিয়ান মা রাখি সাহা ও তার স্বামী সুজন সাহা জানান, বেসরকারি হাসপাতালে যেখানে সিজার করতে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। সেখানে হাসপাতালে (উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স) বিনামূল্যে সিজার হয়েছে, তা ভাবতেই অবাক লাগে। এ সময় রাখি সাহা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তারা চিকিৎসক ও নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান।
এ বিষয়ে আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন, স্যারের (উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা) এই মহতী উদ্যোগের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। আশা করছি, স্যারের নেতৃত্বে সহকর্মী ও উপজেলাবাসীর আন্তরিক সহযোগিতায়, আমরা সেবা গ্রহীতাদের আরো ভালোভাবে সেবা দিতে পারবো।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ গোলাম মাওলা চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সরকার বদ্ধপরিকর। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাস্থ্যখাতে সরকার নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। সরকারের এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমরা তৃণমূল পর্যায়ে নিরলসভাবে কাজ করার চেষ্টা করছি। এ সময় তিনি আরো বলেন, সহকর্মীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অপারেশন থিয়েটারটি চালু করে ইতিমধ্যে তিনটি অপারেশন করা হয়েছে। আরো দুটি অপেক্ষমান রয়েছে। এর মধ্যে একটি হার্নিয়া ও অপরটি গলব্লাডারের অপারেশন। অপর এক প্রশ্ন তিনি জানান, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসসহ অসংক্রামক রোগীদের জন্য নন কমিউনিকেবল ডিজিজ (এনসিডি) কর্নার স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। এটি চালু হলে রোগীরা নিয়মিত ফলোআপসহ বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা আর এক মাসের ওষুধ পাবেন (বরাদ্দ সাপেক্ষে)। এ ছাড়াও এনসিডি কর্নার চালু হলে আলাদাভাবে মাসে তিন হাজার রোগীকে সেবা দেয়া যাবে।