সভাপতির স্বাগত বক্তব্যের পরই সঞ্চালকের ঘোষণায় সবাই দাঁড়িয়ে গেলেন। ফাতেমা ইয়াছমিন আর ছিদ্দিকুর রহমান রণির কণ্ঠের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে সবাই গাইলেন ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’ এভাবেই শুরু হলো ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরামের রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী অনুষ্ঠান।

৩ জুন শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত চলে অনুষ্ঠান। মাঝখানে ১৫ মিনিট ছিলো নামাজের বিরতি। ‘কথা-কবিতা ও গানে রবীন্দ্র-নজরুল’ এই শিরোনামের ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠানে প্রায় অর্ধশত সাহিত্যপ্রেমী উপস্থিত ছিলেন। সংগঠনের সভাপতি কাওসার আহমেদের সভাপতিত্বে ও অমৃত ফরহাদের সঞ্চালনায় পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে ছিলো গান, আবৃত্তি, বিষয় ভিত্তিক আলোচনা ও নৃত্য এবং জনপ্রিয় মৌসুমী খাবার তালের লেপা।

নজরুল সংগীত, রবীন্দ্র সংগীত, গজল, রবীন্দ্র-নজরুলের কবিতা আবৃত্তি এবং রবীন্দ্র সংগীতের ওপর নৃত্য পরিবেশন করেন মোস্তাফিজুর রহমান মিরাজ, মেহেরাজ হাসান সৌরভ, নওসিন সাবহা, নাজমিন মারিয়া, ফাতেমা ইয়াছমিন, হোসনা ইয়াছমিন সূচনা, ছিদ্দিকুর রহমান রণি ও মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম সাইফী। ফাতেমা ইয়াছমিন ও হোসনা ইয়াছমিন সূচনার রবীন্দ্র-নজরুল সংগীত এবং ছিদ্দিকুর রহমান রনি ও জাহিদুল ইসলামের গজল সবার হৃদয়কে শীতল করে দেয়।

প্রবন্ধ ‘কাজী নজরুল ইসলাম ও তাঁর গজল’ পাঠ করেন কবি দন্তন্য ইসলাম। ‘রবীন্দ্রনাথের বিশ্বাস ও প্রেমের কবিতা’ পাঠ করেন ইয়াছিন দেওয়ান। বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কবি ইলিয়াস বকুল (নজরুলের বিজ্ঞান মনস্কতা), কবি শ্রাবণ রহমান (নজরুলের গজল), আকবর হোসেন মনির (নজরুল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) ও মোস্তফা কামাল মুকুল (বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ)।

এছাড়াও রবীন্দ্র-নজরুল নিয়ে আলোচনা করেন গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুনীর চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী, ফরিদগঞ্জ বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ বিল্লাল হোসনে সাগর, গৃদকালিন্দিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, অ্যাডঃ মাহাবুবুর রহমান, মোঃ রসু মিয়া প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলা সাহিত্যের দুই বিস্ময় পুরুষ কাজী নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাদের সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে তাঁরা বেঁচে থাকবেন শতাব্দীর পর শতাব্দী। নজরুল শুধুমাত্র লেখনীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না। তিনি ছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের আতঙ্ক। নজরুলের মতো আর কোনো কবিকে বার বার গ্রেফতার এবং জেল খাটতে হয়নি।

বক্তারা আরো বলেন, এক সময় এদেশে রবীন্দ্র সংগীত নিষিদ্ধ ছিলো। আপনারা ভালো করেই জানেন বাঙালিদের নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আগ্রহ থাকে বেশি। তারা রবীন্দ্র সংগীত থেকে বাঙালিকে দূরে রাখতে পারেনি। মোট কথা হলো, প্রতিভাকে কোনো অবস্থায়ই দমিয়ে রাখা যায় না। কেউ কেউ বলে থাকেন, রবীন্দ্র সংগীত শুনলে ঘুম আসে। আমি বলবো, যাদের জীবনবোধের গভীরতা কম তাদেরই রবীন্দ্র সংগীত শুনলে ঘুম আসবে। নজরুলকে বাংলাদেশে এনে জাতীয় কবির মর্যাদাসহ অন্যান্য মর্যাদা দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহৎ মনের পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর হৃদয়ে যে সাহিত্য খেলা করেছে এটাই তার প্রমাণ। নজরুল ছিলেন সাহিত্যের কবি আর বঙ্গবন্ধু ছিলেন রাজনৈতিক কবি।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কবি হাসানুজ্জামান, সাবেক সভাপতি কবি ফাতেমা আক্তার শিল্পী, সাংবাদিক শিমুল হাছান, গাজী মমিন, আব্দুস সালাম, আব্দুল কাদির, রুহুল আমিন স্বপন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহসিন হাসান শুভ্র, উদীয়মান গীতিকার রাসেল ইব্রাহিম, বর্তমান কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাহেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক বাঁধন শীল, অর্থ সম্পাদক মোঃ তারেক হোসেন তারু, সমাজকল্যাণ সম্পাদক তানজিল হৃদয়, শিশু ও মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফাবিয়া জাহান, ধ্রুপদীর সভাপতি রাবেয়া আক্তার প্রমুখ।

অনুষ্ঠনের শেষের দিকে সংগঠনের সর্বশেষ রস সন্ধ্যার গানের আসরের সেরা তিনজন মেহেরাজ হাসান সৌরভ, রাবেয়া আক্তার ও নাজমিন মারিয়ার হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।