প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে যারা মনোনয়ন পেয়েছেন বা সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি হিসেবে গত ৩ বছর ধরে কাজ করছেন এমন প্রার্থীরাই ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। আবার মনোনয়ন পাননি, তাদের অনেকেই আবার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। এছাড়া বিএনপি নির্বাচন না করলেও দলীয় পদ-পদবিধারী বর্তমান ও সাবেক নেতাদের অনেকেই নির্বাচন করছেন। ফলে সকলের কাছেই ভোটাররা উন্নয়নসহ নানা বিষয়ে তাদের চাহিদার কথা জানান দিচ্ছেন। আর প্রার্থীরাও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে প্রযুক্তিগত ও আধুনিক সেবা প্রদানের অঙ্গীকার করছেন। এছাড়া নির্বাচনী এলাকায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গ্রামের সড়কগুলো বিভিন্ন প্রার্থীর প্রচারে মুখরিত প্রান্তর। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ের দোকানগুলোতে চলছে নির্বাচনী আড্ডা। প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায় চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ও সাধারণ ওয়ার্ডের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে কী কী প্রতিশ্রুতি প্রদান করছেন সেই সব বিষয় নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ। সেসব বিচার-বিশ্লেষণকে সামনে রেখে কী ভাবছেন প্রার্থীরা সেসব নিয়ে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের আশা, প্রত্যাশা ও ভাবনা নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজকের পর্ব।
গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়ন : ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়ন গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়ন। এখানে চেয়ারম্যান প্রার্থী মোট ৫ জন। মূল আলোচনা রয়েছেন ৩ জন প্রার্থী। এরা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান সোহেল চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ শাহ আলম ও এমরান হোসেন মিলন ভূঁইয়া।
সোহেল চৌধুরী : পিতা হিরু চৌধুরীর ঐতিহ্য ধরে রেখে গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল চৌধুরী এলাকায় সুন্দর আলী নামে পরিচিত। ‘এবার নির্বাচন কেনো করছেন’ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত ৫ বছরে এলাকার বেশ কিছু উন্নয়ন করেছি। কিছু কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। সেগুলো সমাপ্ত করার সাথে সাথে ইউনিয়নবাসীকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা প্রদানে কাজ করার লক্ষ্যে নির্বাচনী মাঠে নেমেছি। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে পারলে ইউনিয়নের ৩টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করবো। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সম্পর্কে শুধু এটাই বলবো, শুধু শুধু বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে ভোটের মাঠে এসে ভোটপ্রার্থনা করুন। জনগণই প্রকৃত রায় দিবে।
শেখ মোঃ শাহ আলম : শেখ মোঃ শাহ আলমের পিতা ডাঃ ইসকান্দার দীর্ঘদিন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পিতার ঐতিহ্য ধরে রেখে দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু মনোনয়ন না পেয়ে এলাকাবাসীর চাপে বাধ্য হয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, এলাকার মানুষ সুষম উন্নয়ন চায়। ভোটের মাধ্যমেই জবাব দিবে। নির্বাচিত হলে প্রযুক্তিগত সেবাকে আরো এগিয়ে নিবে যাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়ন : উপজেলার পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ জনপদ গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়ন। নির্বাচনে মোট সাইমুন (পাতপাখা), সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান পাটওয়ারী (চশমা), মোঃ কবির আহাম্মেদ (মোটরসাইকেল), মোঃ আবদুল মান্নান (আনারস), মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান (ঘোড়া), বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল গণি পাটওয়ারী (নৌকা), মোঃ মহিউদ্দিন (টেবিল ফ্যান), মোঃ সিরাজুল ইসলাম (টেলিফোন)। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে দ্বিমুখী।
শাহজাহান পাটওয়ারী : শাহজাহান পাটওয়ারী বিগত ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন। নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করতে গিয়ে যেসব কাজ অসমাপ্ত রয়েছে তা সমাপ্ত করতেই আবারো মাঠে নেমেছেন। এছাড়া সর্বশেষ নির্বাচনে তিনি জনগণের ভোট পেলেও কিন্তু তাকে নির্বাচিত হতে দেয়া হয়নি। আশা করছি, এ বছর জনগণ ভোট দিয়ে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে। তিনি বলেন, আমি আমার ইউনিয়নের প্রতিটি ঘরে গিয়েছি। তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা জেনেছি। তাই নির্বাচিত হলে সেভাবেই কাজ করবো।
সুবিদপুর পশ্চিম ইউনিয়ন : পূর্বাঞ্চলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়ন এটি। এবার এখানে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান মহসীন হোসেন (আনারস), সিদ্দিক মিজি (গোলাপ ফুল), শফিক বেপারী (হাতপাখা), এসএম জসিম উদ্দিন আনসারী (চশমা) ও পারভেজ হোসাইন (নৌকা)। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ত্রিমুুখী।
পারভেজ হোসাইন : উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন পারভেজ হোসাইন। সুবিদপুর পশ্চিম ইউনিয়নে স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। নির্বাচন কারণ বলতে গিয়ে বলেন, আমার পিতাও এই ইউনিয়নবাসীর সেবা করেছেন। তার উত্তরসূরি ও এমপি মহোদয়ের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতে গিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি। নির্বাচিত হলে প্রকৃত সেবা দেয়ার চেষ্টা করবো।
চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়ন : উপজেলার দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ইউনিয়ন চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়ন। এই এলাকার লোকজন ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরের চেয়ে নিকটবর্তী হাইমচর উপজেলায় বিভিন্ন কাজে যাতায়ত করতে হয়। এই অঞ্চলে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কোনো কলেজ না থাকায় অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এ ইউনিয়নে মোট প্রার্থী ৫ জন। এরা হলেন মোঃ শাহজাহান (আনারস), মিজানুর রহমান ভূঁইয়া (মোটরসাইকেল), বর্তমান চেয়ারম্যান হাসান আব্দুল হাই (চশমা), মোরশেদ আলম মুরাদ (নৌকা) ও হাবিবুর রহমান (হাতপাখা)। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে প্রথম ৪ জনের মধ্যে।
মোরশেদ আলম মুরাদ : আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পূর্বে মোরশেদ আলম মুরাদ সংসদ সদস্যের স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। নির্বাচনে দাঁড়ানোর কারণ ব্যাখা করতে গিয়ে তিনি বলেন, মানুষের জন্যে কাজ করতে হলে জনপ্রতিনিধি হওয়ার বিকল্প নেই। বিশেষ করে সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হলে জনপ্রতিনিধি হওয়ার প্রয়োজন। আমি গত ৩ বছরে এমপির পক্ষে মাঠে কাজ করতে গিয়ে তা উপলদ্ধি করেছি। মানুষ সেবা চায়, তবে তা অর্থের বিনিময়ে নয়। এতোদিন মানুষকে ৪০ ভাগ সেবা দিতে পেরেছি। আশা করছি, জনগণ তাদের সেবার পরিধি শতভাগ নিতে চাইলে আমাকে তথা নৌকার বিজয় নিশ্চিত করবে। নির্বাচিত হলে জন্মনিবন্ধনসহ সকল সেবা বিনামূল্যে দেয়া শুরু করবো। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা যেহেতু ভোটের মাঠে রয়েছেন, নিশ্চয়ই যোগ্য। কোনো হিংসা, হানাহানি নয়, ভোটের লড়াইয়ে যোগ্যতার বিচার হবে।
হাসান আব্দুল হাই : বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত হাসান আব্দুল হাই। তিনি ইতিপূর্বে আরো একবার নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচন করার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, এ ইউনিয়নের জনগণকে কার হাতে তুলে দিয়ে যাবো। এই ভাবনা নিয়ে আবারো মাঠে নেমেছি। কারণ এই মানুষ আমার সময়ে যেই শান্তিতে ছিলো, তা অন্য সময়গুলোর সাথে তুলনা করলেই বুঝতে পারবেন। আমার কাছে আমার জনগণই আসল। এবার নির্বাচিত হলে সুনির্দিষ্ট কোনো কাজ নয়, ধারাবাহিকতা বজায় রাখাই প্রধান কাজ। ভোটই প্রতিদ্বন্দ্বী বিষয়ে জানান দেবে।
মিজানুর রহমান স্বপন ভূঁইয়া : উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হিসেবে তিনি একদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। নির্বাচনে দাঁড়ানোর কারণ জানতে চাইলে বলেন, আমার দাদা, আমার পিতা রাজনীতি করেই সারাজীবন কাটিয়েছেন। তারা জনপ্রতিনিধি হয়ে এ এলাকার মানুষের জন্যে কাজ করেছেন, আমি ছোটবেলা থেকেই তাদের দেখেছি। সেই পরিবারের সন্তান হিসেবে আমি ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি ইউনিয়ন থেকে উপজেলা পর্যায়ে। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেছি। আমি একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই, যেখানে মানুষ তার মতামত প্রদান করতে পারবে। আশা করছি, এ বছর মানুষ তা সক্ষম হবে। পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে আমি নির্বাচিত হলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের সমস্যাগুলো তুলে এনে সমাধানের কাজ করবো। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সম্পর্কে আমার কোনো মন্তব্য নেই।
মোহাম্মদ শাহজাহান : ফিরোজপুর জনকল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ শাহাজাহান এবার নিয়ে দ্বিতীয়বার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। নির্বাচন করার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এই মানুষের সমস্যা অনেক। আমি শিক্ষক হিসেবে তাদের অনেক কিছুই জানি। নির্বাচিত হলে প্রথমেই কলেজ স্থাপনের কাজে হাত দিবো। আশা করছি, ভোটাররা আমাকে সেই সুযোগ প্রদান করবেন। প্রতিদ্বন্দ্বী সকলেই যোগ্য তবে, ভোটের মাঠেই যোগ্যতা নিরূপণ হবে।