মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ১৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   প্রাইভেটকারের ধাক্কায় বুয়েট শিক্ষার্থী নিহত: ডোপ টেস্টে ধরা পড়ল মাদকাসক্তি
  •   সাতক্ষীরায় ব্যবসায়ীর ২৩ লাখ টাকা ছিনতাই: স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ
  •   চাকা পাংচার হওয়ায় এনজিও কর্মকর্তার মৃত্যু
  •   বরগুনায় টিকটক নিয়ে পারিবারিক কলহ: স্ত্রীকে হত্যা, স্বামী আত্মহত্যার চেষ্টা
  •   মানব পাচারের চক্রের বিরুদ্ধে বিজিবির সফল অভিযান: কিশোরী উদ্ধার, তিন আটক

প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২১, ০০:০০

পুরাণবাজারে ধরা খেয়েও বেঁচে গেল ভুয়া পুলিশ কর্মকর্তা
স্টাফ রিপোর্টার ॥

চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার বাণিজ্যিক এলাকায় প্রতারণা করতে এসে ধরা খেয়েও অল্পের জন্যে পালিয়ে বাঁচলেন এক ভুয়া ডিবি পুলিশ কর্মকর্তা। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল ৬ জুলাই মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টার সময় পুরাণবাজার বাতাসাপট্টিতে।

ঘটনার আগের দিন গত ৫ জুলাই সোমবার রাত প্রায় ৮টায় পুরাণবাজারের জনতা সল্ট ও জনতা ফুড প্রোডাক্টসের স্বত্বাধিকারী মোঃ আবুল কালাম আজাদের মোবাইল নম্বরে ০১৭২১৬৪০২১৬ নম্বর থেকে কল করে তাকে জানায়, আমি ডিবি পুলিশ চাঁদপুরে আছি। পুলিশ সুপার মহোদয় ঈদুল আজহা উপলক্ষে অসহায় মানুষের মাঝে কিছু ত্রাণ সামগ্রীসহ মসলা বিতরণ করবেন। তাই সেগুলো আপনার কাছ থেকে নেয়ার জন্যে বলা হয়েছে। সঠিক দাম রাখবেন।

এ কথার উত্তরে ব্যবসায়ী আবুল কালাম তাকে বলেন, লকডাউনে বাজার আইন রক্ষা করে আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে হয়। আপনি আগামীকাল ১১ণ্ড১২টার দিকে আসেন। দাম নিয়ে সমস্যা হবে না। সেই কথা অনুযায়ী গতকাল পৌনে ১২টার সময় প্রতারক ভুয়া ডিবি পুলিশের সদস্য মাহবুব মালামাল নেয়ার জন্য দোকানে আসেন। মালামালের দাম জানার পর এলাচি ৪০ কেজি, জিরা ১৫০ কেজি, লং ২০ কেজি, মসুরির ডাল ১০০ বস্তা (২৫ কেজির বস্তা), মুগ ডাল ৫০ বস্তা (২৫ কেজির বস্তা) কেনেন। সেই অনুযায়ী মালের দাম হিসেব করার পর ঘটে যায় অভাবনীয় ঘটনা। টাকা দিবে দিবে অবস্থায় ২ জন অপরিচিত লোক দোকানে ঢুকে পড়েন। দোকানে থাকা কেউ কিছু বুঝে উঠার আগ মুহূর্তেই আগত ২ জন মাল কিনতে আসা লোকটির উপর মারমুখী অবস্থান নেন। তাদের হঠাৎ এমন আচরণে উপস্থিত সকলেই হতচকিত হয়ে পড়েন। দোকান মালিক তার কাস্টমারের উপর এমন ধরনের অযাচিত ঘটনায় মারমুখী অপরিচিত দুই ব্যক্তির উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

তখন দোকানে থাকা কর্মচারী, লেবারগণ আগত ২ ব্যক্তির উপর চড়াও হওয়ার এক পর্যায়ে ভুয়া ডিবি পুলিশ সদস্য সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল (ঢাকা মেট্রোণ্ডল ২৩ণ্ড৪২৮২) ফেলে রেখে চম্পট দেন।

পরিস্থিতির এক পর্যায়ে হামলাকারী চাঁদপুর ডানো গুঁড়া দুধ ও সেভেন আপের ডিলার মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, গত ২৫ জুন ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে মোঃ মেহেদী হাসান নামে এক ব্যক্তি তার কাছে এসে জানান, মানুষকে দেয়ার জন্যে পুলিশ সুপার মহোদয়ের কিছু প্যাকেটজাত গুঁড়া দুধ লাগবে। আপনি মালামালগুলো কালকে সন্ধ্যার পর দিবেন। আপনাকে টাকা দিয়ে দিবো। একথা বলে সে গুঁড়ো দুধের স্যাম্পল নিয়ে যায়। পরদিন সকালে এসে জানান, আপনি মালামালগুলো দেন আপনাকে সন্ধ্যায় টাকা দিয়ে দিবো। সরল বিশ্বাসে ডানোর ডিলার পরদিন তাকে ডানো পুষ্টি ৫০০ গ্রামের ২৭০ প্যাকেট ও পুলিশ সুপার মহোদয়ের জন্য আড়াই কেজি ওজনের ১ কোটা ফুল ক্রিমযুক্ত ডানো দিলে সে ব্যাটারীচালিত অটোরিক্সা যোগে তা নিয়ে যায়। কিন্তু সন্ধ্যায় টাকার জন্যে ফোন দিলে তাকে আর পাওয়া যায়নি, এমনকি তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়ায় তিনি ছুটে যান এসপি অফিস ও পুলিশ লাইনে। বিষয়টি তিনি পুলিশের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে তার নিকটজনদের জানান। কিন্তু কেউ তার কোনো সন্ধান দিতে না পারায় তিনি বুঝতে পারেন প্রতারণার শিকার হয়েছেন। গতকাল সকালে অনুমানভিত্তিক খবর পেয়ে তিনি ছুটে আসেন পুরাণবাজারে। এসেই দেখতে পান জনতা ফুড প্রোডাক্টসে বসা তার কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া দুধের কাস্টমার। এমনি পরিস্থিতিতে তিনি নিজেকে সামলে রাখতে না পেরে প্রতারকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। বলতে চেষ্টা করেন লোকটি প্রতারক, সে কোনো পুলিশের লোক নয়। কিন্তু তার কথাটি সে মুহূর্তে কেউ তেমনভাবে শুনতে না পারায় জনতা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অবস্থানরত কাস্টমারসহ দোকানের স্টাফরা ঘাবড়ে যান।

দোকানের মালিক সাথে সাথেই পুলিশকে জানালে পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন ও ডিবি পুলিশের এসআই মোতাহের হোসেন সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তারা প্রতারকের ফেলে যাওয়া মোটরসাইকেলসহ ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন জব্দ করেন। তারা ভিডিও ফুটেজে ধারণকৃত ছবিগুলো দেখেন। কিন্তু ভিডিও ফুটেজে ধারণকৃত ছবিতে প্রতারকের ছবি অস্পষ্ট থাকায় তার চেহারা সম্পর্কে তেমন ধারণা পাওয়া না গেলেও উচ্চতা ও চুলের কাটিং দেখে তাকে পুলিশ সদস্য ভেবে অনেকেই ভুল করতে পারেন।

এ ঘটনা সম্পর্কে জনতা ফুড প্রোডাক্টসের মালিক মোঃ আবুল কালাম আজাদ জানান, ঘটনাটা এমন সময়ে ঘটেছে যখন ব্যাংকে টাকা দেয়ার জন্যে আমার স্টাফ প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। হঠাৎ করে ঘটনানাটি ঘটে যাওয়ায় আমি ভেবেছিলাম কোনো ছিনতাইয়ের ঘটনা হয়তো ঘটতে যাচ্ছে। তাই আমার স্টাফরা আত্মরক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চেষ্টা করেন। যিনি টাকা পাবেন তিনি যদি হঠাৎ মারমুখী না হয়ে ঘটনাটি সম্পর্কে আমাকে সতর্ক করে দিতেন তাহলে এই প্রতারক কিছুতেই পালাতে পারতো না।

এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের সতর্কতার সাথে ব্যবসা করার পরামর্শ দিয়ে চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের সহণ্ডসভাপতি তমাল কুমার ঘোষ জানান, বাজারে পুলিশের পরিচয় দিয়ে কোনো প্রতারক চক্র এ যাবৎকালে কোনো ঘটনা ঘটাতে সাহস করেনি। কিন্তু আজ সেই ঘটনাই ঘটতে যাচ্ছিল। তাই সকল ব্যবসায়ীর প্রতি অনুরোধ থাকবে আপনার ব্যবসা করাকালীন সময় সতর্কতা অবলম্বন করবেন। কোনো কিছুতে সন্দেহ দেখা দিলে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করবেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়