মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   প্রাইভেটকারের ধাক্কায় বুয়েট শিক্ষার্থী নিহত: ডোপ টেস্টে ধরা পড়ল মাদকাসক্তি
  •   সাতক্ষীরায় ব্যবসায়ীর ২৩ লাখ টাকা ছিনতাই: স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ
  •   চাকা পাংচার হওয়ায় এনজিও কর্মকর্তার মৃত্যু
  •   বরগুনায় টিকটক নিয়ে পারিবারিক কলহ: স্ত্রীকে হত্যা, স্বামী আত্মহত্যার চেষ্টা
  •   মানব পাচারের চক্রের বিরুদ্ধে বিজিবির সফল অভিযান: কিশোরী উদ্ধার, তিন আটক

প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২১, ০০:০০

পাকিস্তানিদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল সেদিন রহিমানগরের সর্বস্তরের মানুষ
অনলাইন ডেস্ক

গত বুধবার ছিল চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার অন্যতম প্রসিদ্ধ বাজার ‘রহিমানগর গণহত্যা দিবস’। উপজেলার ব্যবসায়ী এবং ক্রেতা-বিক্রেতার মিলনমেলার জন্যে যোগাযোগের অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হচ্ছে রহিমানগর। প্রাচীনকাল থেকে রহিমানাগর কচুয়ার রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট। ঘটনাবহুল রহিমানাগর প্রতিরোধের দুর্গ হিসেবে খ্যাত। করোনার কারণে দিবসটি পালনে কোনো প্রকার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি কারোর পক্ষ থেকেই। তবে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের কচুয়া ব্যুরো ইনচার্জ মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের সাথে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন সিকদার। বলেছেন স্মৃতি বিজড়িত নানান কথা।

তিনি জানান, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ৬ দফা আন্দোলন, ১১ দফা ভিত্তিক আইয়ুব বিরোধী গণঅভ্যুত্থান, বঙ্গবন্ধুর মুক্তি আন্দোলন, ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনসহ সকল আন্দোলন ও নির্বাচনে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে রহিমানগরের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের অগ্রণী ভূমিকা প্রশংসনীয়। খেলাধুলাসহ বিভিন্ন চিত্ত বিনোদনে ও সংস্কৃতি অঙ্গনে রয়েছে রহিমানগরের সুখ্যাতি। হিন্দু-মুসলিম ও নবীন-প্রবীণদের মধ্যে রহিমানাগর অঞ্চলে ছিল সুষ্ঠু যোগাযোগ এবং সমন্বয়। যার কারণে পাকিস্তান আমলে ১৯৬৬ সালে পাকিস্তানি পুলিশের দ্বারা হিন্দু সম্প্রদায় ও বাস্তুহারাদের উপর চরম নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল রহিমানগরের সর্বস্তরের মানুষ। প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করায় পুলিশ হাই স্কুলের ভেতর থেকে গুলি চালিয়ে ৬ জন লোককে হত্যা করে এবং বহুলোককে আহত করে।

আনোয়ার হোসেন সিকদার জানান, ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানি শাসকদের চরম অত্যাচারের সময় সাহসী বৃত্তে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের সৈনিকদের অন্যতম বীর সেনানী, কচুয়ার মাননীয় এমপি মরহুম আলহাজ্ব সেকান্দার আলী এবং স্থানীয় বঙ্গবন্ধুর অনুসারী ও শিক্ষানুরাগীদের সহযোগিতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রদীপ্ত সূর্য শেখ মুজিবুর রহমানের নামানুসারে রহিমানাগর শেখ মুজিবুর রহমান ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। শিক্ষার আলো জ্বালাতে এই কলেজটি কচুয়া উপজেলার সর্বপ্রথম কলেজ। ২৭ মার্চ ১৯৭১, কচুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সংগ্রাম কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ রশিদ প্রধান এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক চেয়ারম্যান জহিরুল হকের ব্যবস্থাপনায় রহিমানাগর বেগম আয়েশা বৌভানী হাই স্কুল মাঠে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছিল। ছাত্র-যুবকদের মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেছিলেন দক্ষ প্রশিক্ষক মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত কচুয়ার গর্ব মোঃ সিরাজুল মাওলা এবি এবং বিমান বাহিনীর দক্ষ সৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব আলীসহ আরো অনেক প্রশিক্ষক। কচুয়া থানা থেকে রাইফেল এনেও এখানে প্রশিক্ষণ পরিচালনা করা হয় ।

আনোয়ার সিকদার বলেন, ৪ জুলাই ১৯৭১, বৃহস্পতিবার ছিলো রহিমানাগর বাজার দিন। চারদিকে যখন মানুষ পাক-বাহিনীর অত্যাচার, হত্যা, ল্ণ্ঠুন এবং জ্বালাও-পোড়াও আতঙ্কে দিশেহারা, এমনি ভীতিকর মুহূর্তে রহিমানগর বাজারে পাক সেনা ও তাদের দোসর রাজাকার বাহিনী চারদিক থেকে আক্রমণ চালায়। তাদের সম্মিলিত আক্রমণে গণহত্যা সংঘটিত হয়। উল্লিখিত গণহত্যায় যারা অকাতরে প্রাণ দিয়ে শহীদ হয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন খাজুরিয়া গ্রামের জুনাব আলী, পাড়াগাঁও গ্রামের আঃ ছামাদ ও আব্দুল মজিদ, চাপাতলী গ্রামের কাশিম আলী মাল এবং কোহলথুড়ী গ্রামের মাহেন্দ্র চন্দ্র ধূপি। এছাড়া লুন্তি নোয়াগাঁও গ্রামের অনুকূল চন্দ্র দাস আহত হয়ে পরে মৃত্যুবরণ করেন। তাদের ছাড়াও নাম না জানা আরো অনেকে আহত হয়েছিলেন। উল্লেখিত লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড দেখে মানুষজন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফেলে রেখে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান।

তিনি জানান, রহিমানগর গোহট ভূঁইয়া বাড়িতে রাজাকার কমান্ডার আঃ খালেকের ভাই আরইক্কা হত্যাকে কেন্দ্র করে শাহারপাড়, গোহট, নাওপুরাসহ গ্রামকে গ্রাম জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে লুটপাট করে পাকিস্তানি বাহিনী। আতঙ্কে-ভয়ে নারী-পুরুষ শিশু ও অবলা নারী বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ দূরত্বে চলে যায়। রহিমানাগরে কচুয়া থানার দারোগা লাল খান মার্ডার হওয়া এবং বিভিন্ন সময়ে পুলিশ এসল্ট হওয়াসহ বহু ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ লেখা একটু সময়ের ব্যাপার।

আজকের এই দিনে তিনি যাঁদের রক্তে মুক্ত স্বদেশ তাঁদেরকে স্মরণীয় করার মাধ্যম নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে উদ্যোগ নিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট নিবেদন জানান।

মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আনোয়ার হোসেন সিকদার বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কচুয়া উপজেলা শাখার প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তীতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি চাঁদপুর জেলা ছাত্রলীগ শাখার সহ-সভাপতি ও স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সদস্য ছিলেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কচুয়া উপজেলা শাখার উপদেষ্টাম-লীর অন্যতম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়