রবিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

বাঁচার আকুতি করেও ছেলের হাত থেকে রক্ষা পেলো না মা মনোয়ারা
প্রবীর চক্রবর্তী ॥

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৮ বছর পূর্বে বাড়ির সম্পর্কে চাচাতো বোন রূপবানুকে ঘরের সামনে কুপিয়ে হত্যা করে মমিন দেওয়ান। সেই মামলায় দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর জামিনে বের করে আনতে যিনি কষ্ট করেছেন, সেই জন্মদাত্রী মাকে ১৮ বছর পর একই কায়দায় গতকাল ২৭ অক্টোবর বুধবার ভোরে কুপিয়ে হত্যা করলো ঘাতক ছেলে। তবে ঘাতক মমিন দেওয়ান মনোয়ারা বেগমকে নিজের মা বলে স্বীকার করে না। তার মতে তার মা আরো আগেই মারা গেছেন। এই মহিলা তার মায়ের রূপ ধরে তার সাথে ছলনা করছে। যদিও স্থানীয় লোকজন নিশ্চিত করেছেন কিছুটা মানসিক বিকারগ্রস্ত বা উগ্র স্বভাবের কারণে সে তার মায়ের সম্পর্কে এ ধরনের কথা বলেছে। তা না হলে সে খুন করে খুনে ব্যবহৃত দা ধুয়ে এবং জামা-কাপড় পাল্টিয়ে নির্বিঘেœ পালিয়ে যায় কীভাবে। ঘাতক মমিন দেওয়ান ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার পশ্চিম বড়ালি গ্রামের মরহুম আব্দুল হাশেম দেওয়ানের ছেলে।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্র জানায়, মমিন দেওয়ান তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২০০৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি একই বাড়ির রূপবানু বেগম নামে বাড়ির সম্পর্কের চাচাতো বোনকে কুপিয়ে হত্যা করে। এরপর সে গোপনে পালিয়ে সৌদি আরবে চলে যায়। পরে ২০১১ সালে সে দেশে ফিরে আসলে পুলিশ তাকে আটক করে।

জেলে থাকা অবস্থায়ই রূপবানু হত্যা মামলার বাদী রূপবানুর বোন সুফিয়া বেগমের সাথে মমিন দেওয়ানের মা মনোয়ারা বেগমসহ অন্যরা যোগাযোগ করে মামলাটিকে আপোষযোগ্য করতে চেষ্টা করেন। এরই এক পর্যায়ে বাদীর আপত্তি না থাকায় তিন বছর জেল খাটার পর মা মনোয়ারা বেগমের প্রচেষ্টায় জামিনে বেরিয়ে আসে মমিন। এরপর ২০১৪ সালে পৌর এলাকার চরকুমিরা গ্রামে রাবেয়া বেগমকে বিয়ে করে সে। তাদের ঘরে আছিয়া আক্তার নামে বর্তমানে ৬ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। কিন্তু স্বামীর উগ্র স্বভাব ও মারমুখি আচরণের কারণে স্ত্রী রাবেয়া বেগমও স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়িতে চলে যায়।

এরপর হত্যা মামলা চলাকালে আদালতে নিয়মিত হাজিরা না দেয়ায় তার বিরুদ্ধে আবারো ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়। ফলে ২০১৭ সালে সে আবারো জেল হাজতে যায়। এছাড়া ইতিপূর্বে জামিনে এসে সে এলাকার বিভিন্ন মানুষকে হত্যার হুমকি দিতো। ফলে বাধ্য হয়ে এলাকাবাসীও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ করে। চলতি বছরের জুন মাসে মমিন সর্বশেষ জামিনে বেরিয়ে আসে। জামিনে আসার পর থেকে মমিন তার মা মনোয়ারা বেগমকে ও তার এক ভাগ্নিকে হত্যার হুমকি দিতো। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মমিনের ভাগ্নে আশিক।

২৭ অক্টোবর বুধবার দুপুরে হত্যাকা-ের ঘটনা নিয়ে প্রেস ব্রিফিংকালে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শহিদ হোসেন জানান, আজকাল মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে নানা বিতর্কিত কাজে ব্যবহার করে। কিন্তু মাকে হত্যাকারী ছেলে মমিন দেওয়ানকে ধরতে পুলিশী অভিযানের সাথে সাথে মানুষের সহযোগিতা নিতে ফেসবুক ব্যবহার করি। ফলে ঘটনা ঘটার মাত্র তিনঘন্টার মধ্যেই আসামীকে আটক করতে সক্ষম হই। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে জানান, মমিন তার মা সম্পর্কে অসংলগ্ন কথা বলেছে। তবে সে হত্যার কথা স্বীকার করে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা বর্ণনা দেয়। এতে বোঝা যায় সে পুরোপুরি মানসিক রোগী নয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ জানায়, ঘটনার সময় পাশের ঘরে মমিন দেওয়ানের ভাবী পান্না বেগম ছিলেন। তিনি তার শাশুড়ি মনোয়ারা বেগমকে ছেলে মমিন দেওয়ানের কাছে তাকে না মারার জন্য আকুতি করতে শুনেছেন। একই সাথে মায়ের আত্মচিৎকার শুনলেও মমিন দেওয়ান মেরে ফেলার ভয় দেখানোয় তিনি সাহস করে আর বেরুতে পারেন নি।

উল্লেখ্য, ফরিদগঞ্জে জন্মদাত্রী মা মনোয়ারা বেগম (৬৫)কে কুপিয়ে হত্যা করেছে ছেলে মমিন দেওয়ান (৪২)। ঘটনার পরপরই সে পালিয়ে গেলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হত্যাকারীর ছবি দেখে লোকজনের সহযোগিতায় ঘাতককে আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ। ঘটনাটি পৌর এলাকার পশ্চিম বড়ালি গ্রামে ২৭ অক্টোবর বুধবার ভোরে ঘটে। পুলিশ নিহত মনোয়ারা বেগমের (৬৫) লাশ উদ্ধার করে পোস্টমর্টেমের জন্য চাঁদপুর পাঠিয়েছে। এ ব্যাপারে নিহত মনোয়ারা বেগমের বড় ভাই রুহুল আমিন বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়