প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
ফরিদগঞ্জে মাকে কুপিয়ে হত্যা করলো পাষণ্ড- ছেলে
যেই মা নয় মাস গর্ভধারণ করে, অসহ্য প্রসব যন্ত্রণা সহ্য করে সন্তান জন্ম দিলো, সেই মাকে কুপিয়ে হত্যা করলো কুলাঙ্গার ছেলে। ছেলের পাপকর্ম মুক্ত করে তাকে ভালো পথে ফিরিয়ে নিয়ে আসার প্রাণান্তকর চেষ্টা করলো যেই মা, সেই গর্ভধারিণী মা মনোয়ারা বেগম (৬৫)কে কুপিয়ে হত্যা করেছে ছেলে মমিন দেওয়ান (৪২)। ঘটনার পরপরই সে পালিয়ে গেলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হত্যাকারীর ছবি দেখে লোকজনের সহযোগিতায় ঘাতককে আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ। ঘটনাটি ঘটে ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার পশ্চিম বড়ালি গ্রামে ২৭ অক্টোবর বুধবার ভোরে। পুলিশ নিহত মনোয়ারা বেগমের লাশ উদ্ধার করে পোস্টমর্টেমের জন্য চাঁদপুর পাঠিয়েছে। এ ব্যাপারে নিহত মনোয়ারা বেগমের বড় ভাই রুহুল আমিন বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছে। ঘাতক মমিন ২০০৩ সালে রূপবানু নামে তার এক চাচাতো বোনকেও একইভাবে কুপিয়ে হত্যা করে।
জানা গেছে, ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার পশ্চিম বড়ালি গ্রামের মরহুম আব্দুল হাশেম দেওয়ানের ছেলে মমিন দেওয়ান ২৭ অক্টোবর বুধবার ভোরে তার মা মনোয়ারা বেগমের ঘরে ঢুকে তাকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। সংবাদ পেয়ে থানা পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে। তাৎক্ষণিক ঘাতক মমিনকে ধরতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ছবি পোস্ট করেন থানার অফিসার ইনচার্জ। ফলে সকাল ৭টায় পৌর এলাকার পূর্ব মিরপুর গ্রামে তাকে হাঁটতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে সংবাদ দেয়। তাৎক্ষণিক তাকে পুলিশ আটক করতে সমর্থ্য হয়। ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শহিদ হোসেন বুধবার দুপুরে হত্যার বিষয়ে প্রেসব্রিফিং করেন।
স্থানীয়রা জানায়, এক সন্তানের জনক মমিন ইতিপূর্বে ২০০৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি একই বাড়ির রূপবানু নামে চাচাতো বোন সম্পর্কের এক নারীকে কুপিয়ে হত্যা করে। এরপর সে পালিয়ে সৌদি আরবে চলে যায়। পরে ২০১১ সালে সে দেশে ফিরে আসলে পুলিশ তাকে আটক করে। ৩ বছর জেল খাটার পর মা মনোয়ারা বেগমের প্রচেষ্টায় জামিনে বেরিয়ে আসে মমিন। এরপর ২০১৪ সালে পৌর এলাকার চরকুমিরা গ্রামে রাবেয়া বেগমকে বিয়ে করে মমিন দেওয়ান। তাদের ঘরে আছিয়া আক্তার নামে ৬ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
এদিকে হত্যা মামলায় জামিনে বেরিয়ে আসলেও মমিন নিয়মিত হাজিরা না দেয়ার কারণে ২০১৭ সালে আবারো সে জেল হাজতে যায়। এবারো সে তিন বছরের উপরে জেল খেটে চলতি বছরের জুন মাসে জামিনে বেরিয়ে আসে।
স্থানীয়রা আরো জানায়, মমিন মানসিকভাবে কিছুটা বিকারগ্রস্ত। প্রায়ই সে লোকজনকে হত্যা করার হুমকি দিতো।
ঘাতক মমিনের ভাগিনা আশিক জানায়, তার নানী মনোয়ারা বেগম ও তার বোনকে মামা মমিন প্রায়ই মেরে ফেলার হুমকি দিতো।
বুধবার দুপুরে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শহীদ হোসেন এ হত্যকা-ের ব্যাপারে প্রেসব্রিফিং করেন। প্রেসব্রিফিংয়ে তিনি জানান, হত্যাকা-ের সংবাদ পেয়ে তিনি তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধারের পাশাপাশি পুলিশের বিভিন্ন টিম চাঁদপুর লঞ্চঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। কিন্তু ঘাতক মুঠোফোন ব্যবহার না করায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ছবি পোস্ট করে তাকে ধরতে সহায়তা চাই। পরে সকাল ৭টার দিকে পূর্ব মিরপুর এলাকা থেকে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় তাকে আটক করতে সক্ষম হই।
তিনি জানান, ঘাতক মমিন ইতিপূর্বে একটি হত্যা মামলার আসামী। তিন মাস পূর্বে সে জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে আসে। সেই থেকে সে তার মা ও ভাগ্নিকে হত্যার হুমকি দিতো। হত্যাকা-ে ব্যবহৃত দা উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত মনোয়ারা বেগমের বড় ভাই রুহুল আমিন বাদী হয়ে ফরিদগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মমিন মাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে।