রবিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

১৪টি পূজামণ্ডপ ভাংচুর, ১০ মামলায় আসামী প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ॥ আটক ২৯
কামরুজ্জামান টুটুল ॥

হাজীগঞ্জ পৌরসভার মকিমাবাদ গ্রামের বাসিন্দা ও হাজীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মহিলা কাউন্সিলর (৪, ৫, ৬) শাহিদা বেগম। আওয়ামী লীগের সমর্থনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই শাহিদা বেগমের ছেলে হৃদয় হাছান জাহিদ ঘটনার দিন বিকেলে তার ফেসবুকে আন্দোলনের ডাক দেন। সেই থেকে হাজীগঞ্জের ঘটনার সূত্রপাত বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। যে কারণে হৃদয় নিজে পলাতক আর তার বাবা ও ছোট ভাইকে গত সোমবার পুলিশ আটক করেছে।

এ ঘটনার বহু ভিডিও ফুটেজ পুলিশের হাতে। সেই ফুটেজ দেখেই পুলিশ চিহ্নিত হামলাকারীদেরকে শনাক্তের কাজ করছে। এই সকল ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা দুটি মামলাসহ মোট মামলা হয়েছে ১০টি। এতে আসামী করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার জনকে। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত এই সকল মামলায় ২৯ জনকে আটক করা হয়েছে। এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে অর্থাৎ ঘটনার প্রায় ৯ দিন পর পৌর ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে একটি প্রেস রিলিজ দেয়া হয়েছে, যাতে উল্লেখ করা হয়েছে পলাতক হৃদয় হাছান জাহিদ পৌর ছাত্রলীগের কেউ নয়।

কুমিল্লা শহরের একটি পূজাম-পে দেবীর পায়ের উপর কোরআন শরীফ উদ্ধারের দিন গত ১৩ অক্টোবর বুধবার বিকেলে হৃদয় হাছান জাহিদ (২০) নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। তাতে উল্লেখ ছিলো সন্ধ্যায় বিশ্বরোডে আন্দোলন হবে, সাড়ে ৬টায় মুসলিম ভাইদের জড়ো হওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। স্থানীয়রা জানান, পৌর ছাত্রলীগের সদস্য দাবিদার হৃদয় হাছান জাহিদ পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাছান রাব্বির অনুসারী। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পৌর ছাত্রলীগ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, হৃদয় পৌর ছাত্রলীগের এমনকি ওয়ার্ড ছাত্রলীগেরও কেউ নয়। ইতিমধ্যে পুলিশ হৃদয়ের বাবা দিলওয়ার হোসেন (৪৫) ও ভাই যুবায়ের হাছান (১৮)কে আটক করেছে।

কুমিল্লায় কোরআন শরীফ অবমাননার প্রতিবাদে মূলত ঘটনার দিন বিকেল মানে আসরের নামাজের অনেক পরে ডাকাতিয়া নদীর দক্ষিণপাড় রান্ধুনীমুড়া এলাকা থেকে কিশোর-তরুণদের অংশ গ্রহণে একটি মিছিল আসে বিশ্বরোড এলাকায়। এতে একশ’র উপরে লোক ছিলো। এই মিছিল থেকে সড়কের দুপাশের লোকদেরকে আহ্বান করা হয়েছে মিছিলে অংশ নেয়ার জন্য। মূলত হৃদয় হাছান জাহিদের স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে বেশ কিছু তরুণ জড়ো হয় সেখানে। এরপরেই মিছিলটি হাজীগঞ্জ বাজার অভ্যন্তরে এগিয়ে যায়। মিছিলটি হাজীগঞ্জ বাজারের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এরই মধ্যে বড় মসজিদে এশার নামাজ শেষ হয়। নামাজ শেষ হওয়ার পর কিছু মুসল্লি রাস্তায় এসে মিছিলে যোগ দেয়। যে যেভাবে পেরেছে মিছিলে অংশ নিয়েছে। এরপরেই মিছিলটি শ্রী শ্রী রাজা লক্ষ্মী নারায়ণ জিউর আখড়ার দিকে এগিয়ে যায়। এ সময় আখড়ার ভিতরে পূজামণ্ডপে দুর্গা পূজা চলছে। গেটের বাইরে একদল পুলিশসহ পূজায় অংশ নিতে আসা ভক্তবৃন্দ, উৎসুক জনতাসহ মন্দিরের ভিতরে নারী, পুরুষ, কিশোর কিশোরী শিশুতে ঠাসা। মিছিল থেকে হঠাৎ করে পূজার গেটের দিক লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এ সময় হঠাৎ করে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। গেটের বাইরের উৎসুক লোকজন প্রথমে ইটপাটকেল নিক্ষেপ বন্ধ করার বৃথা চেষ্টা চালায়। গেটের বাইরের লোকজন হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে সরে গেলে কার্যত হামলাকারীদের মারমুখী হয়ে এগিয়ে আসতে দেখে পুলিশ অনেকটাই নিরূপায় হয়ে পড়ে।

হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজারের একটি আবাসিক হোটেলের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নদীর দক্ষিণ পাড় থেকে আসরের নামাজের পর একটি মিছিল চৌরাস্তা বিশ্বরোড এলাকায় আসে। মিছিল দেখে আমরা দোকানে বসে থাকাতে আমাদেরকে গালমন্দ করা হয়, আমরা কেনো মিছিলে যাইনি। এই মিছিলে শতাধিক যুবক ও কিশোরকে অংশ নিতে দেখা গেছে।

হাজীগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাছান রাব্বী বৃহস্পতিবার দুপুরে চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, হৃদয় হাছান জাহিদ আমার অনুসারী বলে অনেকে বলছে, কিন্তু সে আমার পৌর ছাত্রলীগের কোনো সদস্য নয় এমনকি কোনো ওয়ার্ডের সদস্য নয় সে। এ বিষয়ে আমরা বৃহস্পতিবার প্রেস রিলিজের মাধ্যমে তা জানিয়ে দিয়েছি। আমি একটু দাপটের সঙ্গে রাজনীতি করি বিধায় একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করেছে। তবে আমি শুনেছি, আন্দোলনের ডাক দেয়া ওই ছেলে হাজীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি খোকন বলির অনুসারী।

আন্দোলনের ডাক দেয়া হৃদয় হাছান জাহিদকে চিনেন না এমন দাবি করে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবায়েদুর রহমান খোকন বলি বলেন, স্বার্থান্বেষী মহল অপবাদ রটানোর অপচেষ্টা করছে। আমি চাই অপরাধী যেই হোক, তদন্তপূর্বক তার বা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক এবং যারা গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন, তারা কার সাথে রাজনীতি করে এবং কার অনুসারী তা খুঁজে বের করার জন্য প্রশাসন, পুলিশ ও সংবাদকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

হাজীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠন করা তদন্ত কমিটির সদস্য সোহেল মাহমুদ বিবিএম বলেন, বিভিন্ন পূজাম-পে বাজারে ও বিভিন্ন ব্যক্তিগত সিসি ক্যামেরার যে পরিমাণ ফুটেজ আমাদের হাতে রয়েছে তা দেখে আমরা হামলাকারীদেরকে চিহ্নিত করছি। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে যারা হামলার উসকানি দিয়েছেন, তাদেরও আমরা চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করছি।

এদিকে থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ অক্টোবর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার হিন্দু বাড়িতে হামলা-ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এছাড়া ওইদিন রাতে ১৪টি পূজামণ্ডপে ভাংচুর করা হয়। এর মধ্যে ৮ পূজাম-প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। এ সকল ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে ২টি মামলা ও ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে মোট ৮টি মামলা করা হয়েছে। এই সকল মামলায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার জনকে আসামী করা হয়েছে। এদের মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত মোট ২৯ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃত সবাইকে আদালতে পাঠানো হলে আদালত তাদেরকে জেল হাজতে পাঠায়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়