প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মুহম্মদ শফিকুর রহমান বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্যে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছিলেন। ১৯৭১ সালে আমরা যুদ্ধের মাধ্যমে সেই অসাম্প্রদায়িক দেশ বাংলাদেশ পেয়েছি। তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে যখন দেশকে উন্নয়নের পথে ধাবিত করছেন, ঠিক তখনই একটি গোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। পূজার সময় একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সুকৌশলে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা করেছে, হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়েছে। আমার নির্বাচনী এলাকা ফরিদগঞ্জ উপজেলায় পূজার সময় আমার নেতা-কর্মীরা টানা ৭২ ঘণ্টা রাত-দিন সজাগ থেকে পাহারা দিয়েছে। যাতে কোনো অপশক্তি আমাদের সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে। কিন্তু দুর্গাপূজার পর গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের কর্মকার বাড়ির এ ঘর আগুনে পুড়িয়ে দেয়া বা পুড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে সাদা পাঞ্জাবীতে কালো দাগ লাগানোর অপচেষ্টা করেছে বলে আমার ধারণা। আমি ঘটনার সময় ফোনে আগুনের সংবাদ পেয়েছি। আমি আগুনের বর্ণনা যা শুনলাম তাতে এইটুকু বলা যায়, এটি কোনো শটসার্কিট থেকে আগুন নয়, পরিকল্পিতভাবে পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে এ আগুন দেয়া হয়। আমরা জানি, একটি চক্র ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে ব্যস্ত। ফরিদগঞ্জ উপজেলা সকল সম্প্রদায়ের লোকজনের জন্যে একটি আদর্শবান এলাকা। আমি কখনোই এর ব্যত্যয় হতে দিবো না।
তিনি উপস্থিত হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনকে আরো সাহসী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা সাহস হারাবেন না, আপনাদের পাশে আমি এবং আমাদের দলের লোকজন রয়েছে। এর সাথে সাথে প্রশাসন ও পুলিশ তো রয়েছেই। আমি ধন্যবাদ জানাই চাঁদপুর জেলা প্রশাসন, জেলা আওয়ামী লীগ, জেলা পুলিশ এবং ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশকে, তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে সবকিছু দেখে গেছেন। আশা করছি, তদন্ত কমিটি নিরপেক্ষ রিপোর্ট প্রদানের মাধ্যমে ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করবেন।
বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) সকালে ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের কর্মকার বাড়ির হিন্দু সম্প্রদায়ের পুড়ে যাওয়া বসতঘর পরিদর্শনে এসে উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশ্যে উপরোক্ত কথা বলেন মুহম্মদ শফিকুর রহমান এমপি।
তিনি বলেন, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়ি নতুন করে নির্মাণের জন্যে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় আমি ইতিমধ্যেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলেছি বীরেশ^রের ঘরটি নতুন করে নির্মাণ করে দেয়ার জন্যে।
এ সময় তাঁর সাথে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহিদ হোসেন, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গণি বাবুল পাটওয়ারী, আওয়ামী লীগ নেতা খাজে আহাম্মদ মজুমদার, উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ডাঃ পরেশ চন্দ্র পাল, পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি হিতেশ শর্মা, সাধারণ সম্পাদক লিটন কুমার দাস, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান শাহীন, যুগ্ম আহ্বায়ক হেলাল উদ্দিন আহমেদ এবং গল্লাক আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ হরিপদ দাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ১৯ অক্টোবর মঙ্গলবার দিবাগত রাতে উপজেলার গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের কর্মকার বাড়ির বীরেশ^র কর্মকারের ঘরটি আগুনে পুড়ে যায়। এতে প্রায় ২ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে যায়। সংবাদ পেয়ে পরদিন বুধবার (২০ অক্টোবর) চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ, পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ, বিপিএম (বার), জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম দুলাল পাটওয়ারী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র আবুল খায়ের পাটওয়ারী, সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকার, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমানসহ জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও পূজা পরিষদ এবং হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে জেলা প্রশাসক অগ্নিকা-ের কারণ অনুসন্ধানে ইউএনওকে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন।