শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

ধর্মীয় বিভেদ তৈরি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা যাবে না
কামরুজ্জামান টুটুল ॥

ধর্মীয় বিভেদ তৈরি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা যাবে না। এটি একটি অপশক্তির কাজ এবং পরিকল্পিত ঘটনা। এটা শুধুমাত্র ধর্মীয় সম্প্রীতি ধ্বংস করা নয়, নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা মাত্র। ’৭১-এর পরাজিত অপশক্তি এবং ’৭৫-এর ঘাতক তারাই কিন্তু কোনো না কোনো চেহারায় আমাদের এ ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উৎসবে হামলার মধ্য দিয়ে তারা দেশের স্থিতিশীলতা এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়। মঙ্গলবার হাজীগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত দুটি পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি।

গত বুধবার হাজীগঞ্জে পূজাম-পে হামলা ও পুলিশ-জনতা সংঘর্ষের ঘটনায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আশ্বস্ত করে মন্ত্রী বলেন, দেশের যেসব স্থানে এসব ঘটনা ঘটেছে এবং এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত আছে, সরকার অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার আপনাদের পাশে আছে। আমরাও আছি। আমাদের স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও আপনারা (গণমাধ্যম) সহ আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীরা আপনাদের পাশে আছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্প্রীতি সমাবেশের ডাক দিয়েছেন। আওয়ামী লীগও সম্প্রীতি সমাবেশের ডাক দিয়েছে এবং আজকে চাঁদপুরসহ সারাদেশে শান্তি শোভাযাত্রা হয়েছে। সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমি চাঁদপুর ও আজকে এখানে (হাজীগঞ্জ) এসেছি।

হাজীগঞ্জের শ্রীশ্রী রাজা লক্ষ্মীনারায়ণ জিউড় আখড়ায় মন্ত্রী বলেন, তারা (অপশক্তি) ধর্মের ওপর আঘাত হেনে এবং ধর্মীয় বিভেদ তৈরি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে সকল ধর্মের এবং শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে একযোগে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমি মনে করি, প্রতিটি এলাকায় প্রত্যেক প্রতিবেশী তার প্রতিবেশীকে রক্ষা করার জন্যে সজাগ, সতর্ক ও সচেষ্ট এবং সক্রিয় থাকতে হবে। সেখানে গণমাধ্যমেরও একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। আমাদের সমাজে অন্তর্নিহিত অনেক শক্তি আছে। সেই শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। সরকার, প্রশাসন, পুলিশ সবাই যেমন মাঠে আছে, তেমনই আমাদের জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সমাজকর্মী, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, সংবাদকর্মী, পেশাজীবীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণকে মিলে প্রতিরোধ গড়ে তোলতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, অপশক্তি যে কোনো জায়গায় এবং যে কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়ে আঘাত হানতে পারে। ভুলে গেলে হবে না, এই উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি রামুতে, আমাদের বায়তুল মোকাররম মসজিদেও আঘাত হেনেছিলো এবং কুরআন মাজিদ পুড়িয়েছিলো। কাজেই এ অপশক্তি কোনো ধর্মের মানুষকেই রেহাই দেয়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার করছে। সেটি যেনো তারা করতে না পারে এজন্যে আমাদের অনেক বেশি সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। দেখা গেছে, অনেকে না বুঝেও পোস্ট করছেন। এতে করে অস্থিতিশীল পরিবেশ ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।

এই ধরনের ঘটনার আর যেনো পুনরাবৃত্তি না হয় সেটি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, পুলিশ এককভাবে সারাদেশের সবাইকে নিরাপত্তা দিতে পারবে না। নিজের এবং প্রতিবেশীর ঘর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দেয়ার জন্যে আমাদের সবাইকে অনেক বেশি সজাগ এবং সক্রিয় হতে হবে। বিদেশে বসে যে কোনো অপশক্তি এবং অপশক্তির ধারক-বাহক ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে এটি তো স্পষ্ট। তাদের বিভিন্ন কথা-বার্তা নানা জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে। কাজেই কারা এ অপশক্তি, কারা ২০১৩, ২০১৪ সালে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, কারা আজকেও অস্থিতিশীল একটা পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়, সেটি মানুষ জানে, যারা রাজনীতির নামে অপরাজনীতি করে এবং এটিই তাদের কাজ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ, পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ, বিপিএম (বার), চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডাঃ জেআর ওয়াদুদ টিপু, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল, হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী মাইনুদ্দিন, ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমান, হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার, জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ রোটাঃ আহসান হাবিব অরুণ, হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন মিয়াজীসহ উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ।

উল্লেখ্য, কুমিল্লায় কোরআন অবমাননার বিষয়কে কেন্দ্র করে গত বুধবার রাতে হাজীগঞ্জ শহরের প্রধান সড়কে স্থানীয় কিছু তরুণ, কিছু যুব সমাজ ও কিছু মুসল্লি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের শ্রীশ্রী রাজা লক্ষ্মীনারায়ণ জিউড় আখড়া পূজাম-প অতিক্রমকালে মিছিল থেকে কে বা কারা ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় পুলিশ প্রতিরোধের চেষ্টা করে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায় এবং পূজাম-পের গেট ভাংচুরের চেষ্টা করায় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে। এতে করে কিশোরসহ ৪ জন ঘটনার দিন ও মঙ্গলবার ১ জন মিলিয়ে ৫ জন মারা যায়। একই ঘটনায় পুলিশের ১৭ জন সদস্য আহত হয়। নিহতরা হলেন : হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ১১নং ওয়ার্ড রান্ধুনীমূড়া গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে হৃদয় হোসেন (১৪), একই গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে আল-আমিন (১৮) ও আব্বাস উদ্দিনের ছেলে শামিম হোসেন (১৭) এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামের শামছুল হকের ছেলে মোঃ বাবলু (৩৫) ও হাজীগঞ্জে বসবাসকারী ট্রাক চালক ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার সাগর হোসেন (৩২)।

এ ঘটনায় পুলিশ ৪টি মামলা দায়ের করেছে। সকল মামলায় ইতিমধ্যে ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে। হাজীগঞ্জের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়